https://bangladeshpress.com.bd/home/details/7726.html

প্লিজ মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা নিরুপন করার জন্য কমিটির সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুন। কালকিনি বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে বহু আসল মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় নেই।

e74dd2ed57878fcbe045367f9d8f432a.png

নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের প্রতি মুক্তিযোদ্ধা মুক্তির খোলা চিঠি

মো: মাহমুদ হাসান ঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তি ১৭ই মে ২০১৭ বিকাল ৩.৪৫ এ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এবং “কালকিনি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি” বরাবরে আবেদন করে যে ফেসবুক স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন, তা হুবহু নিচে উল্লেখ করা হলো:

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তির ফেসবুক স্ট্যাটাস:

মাননীয় নৌ পরিবহন মন্ত্রী মহোদয়,

আপনি মাদারীপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্বে এবং কালকিনি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি। আপনার নিজের অবস্থান, আপনার মান-সন্মান, মর্যাদা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আপনার অবদান থেকে আমরা শিখেছি। ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের অগ্রভাগে আপনাদের শিখানো শ্লোগানে মূখরিত করেছি আমরা।

আপনাদের প্রেরণা ও উৎসাহে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি আমরা। কেউ আপনার আত্মীয় নয়; কেউ আপনার পর নয়; সবাই আপনার নিকট সমান। আপনি আমাদের নেতা। আপনাকে আমরা মাদারীপুরবাসী আমাদের যোগ্য প্রতিনিধি, যোগ্য নেতা বলে শ্রদ্ধা করি, সন্মান করি; মিছিল করি, উল্লাস করি; আপনার আগমনে কালকিনি তে নব জোয়ার এসেছে।

প্লিজ, ভারতে প্রশিক্ষণ দেয়া অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় নেই এবং এ মহান দায়িত্ব আপনার উপর। আপনি অন্যায় অবিচার করলে আমরা আর কার নিকট যাবো? সবাইতো আর নেত্রীর সাথে দেখা করতে পারেন না। আজ যারা কালকিনিতে কমান্ডার বলে খ্যাত, এদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা নয়; এমন কি আমার ইউনিয়ন বাঁশগাড়ীর সকল মুক্তিযোদ্ধাদের আমার চেয়ে তো অন্য কেউ বেশী চিনে না, জানে না; এখানে আসল মুক্তিযোদ্ধারা এমন কি ব্যারাকপুর মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ কালীন কমান্ডার হানিফ মাহমুদ (নিউজিল্যান্ড প্রবাসী) এর নামও তালিকায় নেই, যিনি চাঁদপাড়া রিসিপশন ক্যাম্পের সহকারী ইন-চার্জ ছিলেন। হায়দার বেপারী, যিনি স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং ৭১ সালে চাঁদপাড়া ক্যাম্পের ইন-চার্জ মাদারীপুর-কালকিনি-৩ আসনের প্রথম এম পি (এম সি এ) বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এডঃ মতিউর রহমান (মতিভাই)র সাথে তাঁর বাসায় থাকতেন এবং ক্যাম্প অফিসের কাজ করতেন। তার দরখাস্তও আপনি গ্রহণ করেননি; বড় কষ্ট পেয়েছি; যারা মুক্তিযোদ্ধা নয়; তাদের সাথে আপনি হেসে কথা বললেন-গল্প করলেন, তাদের কাগজপত্র স্বাক্ষর করলেন আর যে আসল মুক্তিযোদ্ধা তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন; সে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেল; এ দুঃখজনক ঘটনা আপনার দ্বারা সংঘটিত হওয়ায় অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলাম এবং লাল বইতে আমার নাম না থাকা সত্বেও আমি কথা বলেছিলাম। ওদের সমর্থন করেছিলাম, আপনার মনে আছে হয়তো।

মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিশেষ করে যারা বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করেছে এবং এখনো করছে, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সকল সুযোগ সুবিধা পাবে, তাও আবার আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাকালীন এবং আপনার মত মাদারীপুর কাঁপানো আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর সামান্য ভুলের কারনে? এটা ঠিক কিনা? আপনি নিজেই অনুধাবন করুন। আমরা আপনার সুবিবেচনা ও সুবিচারের প্রত্যাশায় অধীর আগ্রহে বসে থাকলাম।

তাছাড়া আঞ্চলিক সমস্যাগুলো নেত্রী সরাসরি না জেনে কিভাবে সমাধান করবেন? এ মহৎ কাজটি আপনাকেই করতে হবে। ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়া আমার সহযোদ্ধা অনেকেই আর বেঁচে নেই; তাদের পরিবার বঞ্চিত হল মহান স্বাধীনতার ফসল থেকে। এ কাজ যারা করেছে, তারা তাদের ইচ্ছে মত অর্থ নিয়ে ৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় লিখে দিয়েছে। যে সমস্যা মাদারীপুরের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কলুষিত করছে, সে সমস্যা কেন্দ্রীয়ভাবে সমাধান হবার নয়; যার যার জেলা উপজেলায়ই সমাধানযোগ্য।

আমার মুক্তিযোদ্ধা হবার সখ মিটে গেছে, কিন্তু ঐ হতভাগাদের কি হবে? যারা ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের নাম মূখে আনেনি, তারা ভাতা পাচ্ছে, তাদের সংসার ভালো চলছে, আর যারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে গেল, যুদ্ধ করলো তাদের নাম নেই; এ কলঙ্ক এ ব্যর্থতা যে কোনভাবেই হোক আওয়ামী লীগ সরকারের এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার উপরই বর্তায়। কারন, আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করেছিল।

আপনি আমাদের শেষ ভরসা-আপনার রিপোর্ট অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা হবে। মহান আল্লাহ্‌ যেনো আপনার দ্বারা কোন ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের কলঙ্ক দিয়ে আপনার বাবা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন সহযোগি, আওয়ামী লীগের সংগঠক ও দুর্দিনের কান্ডারী মরহুম এডঃ আচমত আলী খানের সারা জীবনের কষ্ট, সাধনা, সাফল্য কলঙ্কিত না করে সে দোয়া করি; আপনি আরো উপরে যান; আল্লাহ্‌ আপনাকে সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিতকরনে সহযোগিতা করুক।

আমিন ! ]

আমার নিজস্ব অভিমত: একটা জাতি কতটুকু দুর্ভাগা হলে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সকল আবেদন, নিবেদন ব্যর্থ হওয়ার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি বরাবরে আবেদন করতে হয়, এটা ভাবতে গেলে গা শিউরে ওঠে। ইচ্ছে হয়, রাষ্ট্রের কর্ণধারদের টুঁটি চেপে ধরে রাস্তায় টেনে এনে মিশিয়ে দেই ধুলোর সাথে; কিন্তু, বাস্তবে তা সম্ভব নয়। নষ্ট পূঁজিবাদী একটি রাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললে এখন টিটকারি, লাঞ্চনা-গঞ্জনা সইতে হয়, যদিও শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, কিছু রায়ও হয়েছে, কিছু রায় কার্যকরও হয়েছে। কিন্তু, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আদৌ কোথাও সন্মানিত হচ্ছে কি, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় একটি মরণোত্তর রাষ্ট্রিয় গার্ড অব অনার পাওয়া ছাড়া, আমার জানা নেই। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নয়, অথবা কোন আমলা নয় এমন সাধারন মুক্তিযোদ্ধাকে দিয়ে আজ পর্যন্ত্য রাষ্ট্রের কোন একটি স্থাপনার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন বা উদ্বোধন করানোর মাধ্যমে সন্মান জানানো হয়েছে কি? ব্যক্তি বা সমাজের কিছু লোকের উদ্যোগে কোন মুক্তিযোদ্ধার নামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কোন লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হলে সেই প্রতিষ্ঠানটিকে আলাদাভাবে একটু বেশি সুবিধা দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সন্মানিত করার কোন অনুরোধ কোন মহল থেকে করা হলেও মি. বিধি-বিধানের অদৃশ্য সূতোর টানে প্রতিষ্ঠানটিই অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে এ নজির বহু আছে, ফরিদপুর অঞ্চলে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কথা এ মূহুর্তে মনে পড়ছে, “মৃগী শহীদ দিয়ানত কলেজ”; যেটির অস্তিত্ব সঙ্কটকালে সে সময়কার কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতা হিসেবে কিছুটা সহায়তা করেছিলাম, ছাত্র জীবনের বন্ধু তৎকালীন কলেজ অধ্যক্ষের কাছে সব জেনে।

মাদারীপুর জেলার (সাবেক ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার) কালকিনি উপজেলার (সাবেক কালকিনি থানার) বীর মুক্তিযোদ্ধা মালদ্বীপ প্রবাসী “মোক্তেল হোসেন মুক্তি”র গত কয়েকদিনের কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাস ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাষ্ট্র কত হীনভাবে অপমান করছে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ওনার কিছু স্ট্যাটাস এতোই হৃদয়বিদারক যে, তা জনসমক্ষে প্রকাশযোগ্য নয়, তরুণরা ক্ষিপ্ত হয়ে এসবের কুশীলব নষ্টদের মান-সন্মানে আঘাত করে বসতে পারে। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের কর্ণধারদের আগে অনেক কিছুই জনাতাম; অধিকাংশই সমাধান না হলেও, কিছু হতো। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, ততই হতাশ হয়ে পড়ছি। এক কুখ্যাত রাজাকার পুত্রের অনুরোধে আমার খুব কাছে থেকে দেখা এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ না দিতে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র উন্মুখ হয়ে লড়েছে, দেখেছি চোখে ঠুলি পরে।

যদিও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যারা এ পর্যন্ত্য দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা সকলেই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলেই ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু, এসব মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আমলেই অনেক কুখ্যাত রাজাকার ও রাজাকার পুত্ররা “মুক্তিযোদ্ধা সনদ” পেয়ে গেছেন অনেক চুপিসারে বিদ্যুৎ গতিতে, রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্ণধারেরা নিজেরাই এদের ফাইল বগলদাবা করে নিয়ে ছুটেছেন এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে, এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে। কিন্তু, “মুক্তিযোদ্ধা সনদ” পেতে বয়োবৃদ্ধ, রোগে শোকে কাতর, অনাহারে-অর্ধাহারে জর্জরিত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে তার সনদ পেতে ঘুরতে ঘুরতে স্যান্ডেলের তলা ক্ষয় হয়েছে, ঘাটে ঘাটে (দপ্তরে, দপ্তরে, টেবিলে টেবিলে) তাকে ষ্টেটম্যান্ট দিতে হয়েছে যেমনটি দিতে হয় একজন দাগী আসামীর “জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল” এর সন্মূখীন হয়ে অপরাধ স্বীকার না করার চেষ্টাকালে। আর এসব মুক্তিযোদ্ধাকে এসব দপ্তরে কখনো সন্মানের সাথে একটু বসতে বলা হয়েছে, এমন কখনো শুনিনি। গত কয়েক মাস যাবৎ শুরু হয়েছে আরেক তেলেসমাতি কান্ড-কারখানা “মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি”র সন্মূখে আবেদনটি পৌছাতে নাকি টাকা দিতে হয়, হরহামেশাই এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলিতে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে তথ্যটি আসছে পত্রিকায় কিছু উপজেলায় নাকি “মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি”তে অর্ন্তভূক্ত হয়ে আছেন কুখ্যাত রাজাকারও।

উল্লেখিত ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তির আরো কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাসে কিছু হৃদয় বিদারক হাহাকার ও ক্ষোভ ঝরে পড়েছে, যেগুলির সারমর্ম হলো, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্রের সাথে ন্যাক্কারজনকভাবে জড়িত পবিত্র সংসদ ভবনে চিৎকার করে খুনী কনফেডারেশন জিয়াকে “বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক” দাবী করা সুবিদ আলী ভূইয়ার ইন্ধনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে মন্ত্রীর কক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব লাঞ্চিত করেছেন। এটা জাতির জন্য উদ্বেগজনক, খোন্দকার মোশতাকের উকিল জামাই সুবিদ আলী যখন গোটা জাতির ধিক্কার ও ঘৃণায় লুকিয়ে থাকে, তখন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর কক্ষে সে ঢোকে কি করে? নাকি মাননীয় মন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের কথা শোনেননি? তিনি কি শোনেননি জঙ্গিদের মদদদাতাদের কথা যারা আজ বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ধ্বংস করে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে? মাননীয় মন্ত্রী কি শোনেননি কে, এম ওবায়দুর রহমান, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেমদের নাম, বা জানেন না এদের পূর্ব পরিচয়? তিনি তো দুধের শিশু নন। মাননীয় মন্ত্রী নিজে শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা শুধু নন, তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রকাশ্য ও গোপন প্রস্তুতির সংগঠকও। পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে গোটা জাতি যুদ্ধ শুরু করার বেশ আগেই যে তিনি একটি অতি সাহসী বীরত্বসূচক কাজ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে তিনি কি সেটা ভূলে গেছেন?

মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাোম্মেল হক এর দৈনিক ভোরের কাগজ ১৯ মার্চ, ২০১৬ তে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ ১৯শে মার্চ ১৯৭১” শিরোনামের একটা লেখায় উল্লেখ রয়েছে, ৭ মার্চে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সম্ভবত ১১ মার্চ গাজীপুর সমরাস্ত্র কারখানা (অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি) আক্রমণ করি। গেটে বাধা দিলে আমি হাজার হাজার মানুষের সামনে টেবিলে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছি মাইকে। পাকিস্তানিদের বুঝতে পারার জন্য ইংরেজিতে বলি ‘I do hereby dismiss Brigadier Karimullah from the directorship of Pakistan Ordnance Factory and do hereby appoint Administrative officer Mr Abudul Qader (বাঙ্গালী) as the director of the ordnance Factory’ এ গর্জনে সত্যি কাজ হয়েছিল। পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার বক্তৃতা চলার সময়ই পেছনের গেইট দিয়ে সালনা হয়ে পালিয়ে ঢাকা চলে আসেন। পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার আর পরবর্তী সময় ১৫ এপ্রিলের আগে গাজীপুরে যায়নি। পাকিস্তান সমরাস্ত্র কারখানা ২৭ মার্চ পর্যন্ত আমাদের দখলেই ছিল।

মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে বিনীতভাবে জিগ্যেস করতে চাই, এমন সাহসী ভূমিকা কি ১১ই মার্চ ১৯৭১ এ কি আপনার একাই ছিলো, নাকি মোক্তেল হোসেন মুক্তিদের মতো সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরই ছিলো? কিভাবে ২০১৬ সালে পাকিস্তানের এজেন্ট খুনী জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবীকারি সুবিদ আলী আপনার উপস্থিতিতে আপনার কক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তিকে অপমান করার ঔদ্ধত্য দেখায়? আর সচিব কি প্রজাতন্ত্রের মালিক না কর্মচারি না সেবক? আপনি সচিবের অধীন, নাকি সচিব আপনার অধীন? এসব প্রশ্নগুলি নিজের বিবেককে করুন মাননীয় মন্ত্রী।

দেশবাসীর বিবেক জাগ্রত হোক: আমি দেশবাসী, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণদের বিবেকের উদ্দেশ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তির দুটি ফেসবুক স্ট্যাটাস উল্লেখ করতে চাই। সাথে এও বলতে চাই, যদি উনি মুক্তিযোদ্ধা নাই হবেন, তবে প্রকাশ্যে জনসমক্ষে এ দাবীটি তুলতে পারতেন না। যারা ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা তারা এ সনদ পায় গোপনে টাকার থলি দিয়ে কিনে আর এ সনদ ব্যবহার করে টাকার বস্তা কামায়। তাই, আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য যে, উনি আসলেই একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার হাহাকার আমার কাছে আজ পঙ্গু হয়ে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর পৌরসভায় ভাড়া বাসায় যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা ১৯৭২ সালে সনদ পেয়েও ১৯৭৪ সালে ছিড়ে ফেলার পর বারবার চেষ্টা করেও নতুন সনদ না পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম এর হাহাকারের মতোই মনে হয়েছে।    

মোক্তেল হোসেন মুক্তির ১৭.৫.২০১৭ তারিখ বিকাল ২.৩৮ এর ফেসবুক স্ট্যাটাস: “আমাকে আমার মাওলা ছাড়া আর আমার মা বাবা ছাড়া কেউ বোঝেনি, কেউ না। আমার চেয়ে দলকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযুদ্ধ কে কারা কিভাবে বেশী ভালোবাসতে পারে আমার জানা নেই। আমার অস্তিত্ব না থাকলে আমি কারো অস্তিত্ব নিয়ে ভাববো কেন? এখানে ক্ষমার প্রশ্ন নয়; এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার প্রশ্ন। যে মেজর সুবিদ আলী ভুঁইয়া বলতে পারে যে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক সে সুবিদ আলীর কথায় মন্ত্রী আমাকে অপমান করতে পারে না। আমার গান হাতে থাকলে ঐ খানেই কিসসা খতম করে দিতাম সুবিদ আলীর। আমি আর মুক্তিযোদ্ধা হতে চাই না। এবার হবো সন্ত্রাসী। মরার আগে যে ক’দিন বাচি, আওয়ামী লীগের সবাই যেনো আমাকে জুতা মারে, থু থু নিক্ষেপ করে এবং শেষ শব্দটি উচ্চারন যে "Moktel Hossain Mukthi was a great rajakar in 1971.”

মোক্তেল হোসেন মুক্তির ১৭.৫.২০১৭ তারিখ বিকাল ২.০৫ এর ফেসবুক স্ট্যাটাস: সবাই মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে গবেষনা করে। কেউ কেউ নাম ভাঙ্গিয়ে খায়, ব্যবসা করে; বড় বড় লম্বা বক্তৃতায় মাইক ফাটিয়ে দেয়; অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সারা দেশে অবৈধ ব্যবসা চলছে; মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব মারধর করছে, মন্ত্রী অপমান করছে, তার কোন প্রতিবাদ হয় না; কার চরিত্র ভালো? ফেসবুকের চরিত্র আরও জঘন্য;
আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগি অনলাইনের সে সোনার ছেলেরা কোথায়? আজ গা' জ্বলে না? আপনার বাবা যদি মুক্তিযোদ্ধা হত, আর মন্ত্রী অপমান করতো আপনি কি করতেন? আমার কোন ছেলে নেই, তাই কেউ আমার পাশে এসে দাড়ালেন না? ভালো থাকুন সবাই।

সংগ্রহ ও সঙ্কলনে: মো: মাহমুদ হাসান (ভূতপূর্ব কলেজ অধ্যক্ষ ও সমাজ গবেষক), ঢাকা, তারিখ: ১৭.০৫.২০১৭ সময়: রাত ০৯.৩০।

 

কোন ইউনুসের চক্রান্তই জাতিকে বিভক্ত করতে পারবে না। কোন ইউনুসের হীন কূটকৌশলই বাংলার মানুষের এতোটুকুন ক্ষতি করতে পারবে না। তা'সে যতো বড় কালো হাতই হোক। আওয়ামী লীগকে হেয়প্রতিপন্ন করার ক্ষমতা কোন সুদখোড় ঘুষখোর দইওয়ালার নেই । 

যতোদিন বাংলার মাটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সর্বশেষ একজন আদর্শ সৈনিকও বেঁচে থাকবে, যতোদিন নৌকার একটি ভোটারো বাংলার কোন একটি নিভৃত পল্লীতে জয় বাংলার আদর্শ নিয়ে জীবিত থাকবে, ততোদিন বাংলাদেশ থাকবে। থাকবে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা ও সন্মান। দুনিয়ার কোন হায়েনা পেশী শক্তি এই পবিত্র মাটির একটি কনাও ছুতে পারবে না। যেমন পারেনি ৭১এর ঘনকাল মুমুরষ দিনগুলিতেও। বাংলাদেশ ছিলো, আছে এবং থাকবে যতোদিন না বিধাতার হুকুমে মহা প্রলয় না ঘটবে। আজ যারা ভারতের দালাল বলে আওয়ামী লীগকে ধিক্কার দেয়, ধর্মের নামে জাতিতে জাতিতে ভেদাভেদ, মানুষে মানুষে হিংসা বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামার দিকে দেশকে ঢেলে দিতে চাইছে, ভাইয়ে ভাইয়ে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টানের লেবাস পড়িয়ে বাঙ্গালী জাতির আজীবনের ঐক্যবন্ধনে বিভাজনের বিষ বৃক্ষ রোপণের পায়তারা করছে। ওরাই আসলে দেশদ্রোহী পশ্চিমা প্রভূদের পা’চাটা কুকুরের দল। যেয়ে দেখুন,ওদের ঘরে ২৪ ঘন্টা হিন্দি সিরিয়াল চলে, হিন্দি সিনেমা না দেখলে ওদের ঘুম হয়না। ওদের বউ ঝি'রাই ভারতের থ্রি পীচ আর শাড়ী না পড়লে কোন অনুষ্ঠানে যেতে পারে না। অন্যদিকে ওরাই আবার গোপনে ভারতের কাছে বিশেষ চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব দিয়ে আগামী নির্বাচনে সমর্থন আদায়ের জন্য তেল মালিশ করে। বুঝে দেখুন, বুকে হাত দিয়ে বলুন,
পাকিস্তানের হায়েনা পশুর দল ৭১ এ ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যা এবং ২ লক্ষ ৪০ হাজার মা বোনের ইজ্জত লুন্ঠনকারী কিভাবে আমাদের বন্ধু হয়? ভারতের সাথে আমাদের পারস্পরিক শিল্প বানিজ্য ও ভউগলিক দেনা পাওনা/ দ্বন্দ বিভেদ থাকতেই পারে। ভাইয়ে ভাইয়ে যদি সম্পদ বন্টন সংক্রান্ত বিভেদ থাকতে পারে, তাহলে ভারতের সাথেও থাকাটা অতি সাভাবিক। উভয় দেশের সার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনার সরকার একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে যার আশু বাস্তবায়ন ও অতি শীঘ্রই সম্পন্ন করা হবে। শেখ হাসিনা বরাবরই বলে থাকেন যে আমাদের কোন প্রভূ নেই, রয়েছে বন্ধু এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। যার প্রমান তিস্তা নদীর পানির হিস্যার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ঠিক জাতির জনকের মতোই কঠোর ভাষায় আজকের ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি তখনকার হোম মিনিষ্টার শ্রী প্রণব মূখারজীকে ষ্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছিলেন” নো তিস্তা, নো ট্রানজিট”। সর্বোপরি, কোন তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই জননেত্রী শেখ হাসিনা তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদন করেছেন। কই? বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা বিবিও তো দুই দুই বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন? তিনি কেনো তিস্তার পানি বন্টনের বিষয়টির সমাধান করলেন না? মাঝে মাঝে খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনলে হাসি পায় আবার দুঃখও লাগে। তিনি কখনোই বাংলাদেশের সমূদ্র সীমানা নিয়ে মাথা ঘামাননি এবং মায়ানমারের কাছে বাংলাদেশের ন্যায্য হিসসার দাবী তোলেন নি। তিনি মূখ খুললেন যখন জননেত্রী শেখ হাসিনা মায়ানমারের নিকট থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য হিসসা বুঝে নিলেন। বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া সমুদ্র ভুখন্ড যেদিন দেশরত্ন শেখ হাসিনা উদ্ধার করে বিশ্বের কাছে, জাতি সংঘের কাছে এক আপোষহীন রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে সন্মানিত হলেন। খালেদা জিয়া বললেন “শেখ হাসিনা সরকার মায়ানমারের কাছ থেকে বাংলাদেশের আসল পাওনা বুঝে আনতে পারেনি, আমরা আরো পাবো।বি এন পি সরকার হলে পুরো পুরি বুঝে নিতো। আজ দেশবাসীর কাছে আমার একটি প্রশ্নঃ তিনি কোথায় ছিলেন ১৯৯১-১৯৯৫ এবং ২০২০১-২০০৬ সালে? কি সারাদিন ফালু আর রাজাকারদের সাথে চক্রান্তের জাল বুনোনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন? নাকি শেখ হাসিনাকে হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র আর পাকিস্তানের দেয়া অর্থের হিসাব করতে করতে ভুলেই গিয়েছিলেন যে আমাদের সমুদ্রের অনেক খানি ভুখন্ড মায়ান্মার সরকার দখল করে রেখেছে? ধিক খালেদা জিয়া ধিক! আপনার মূর্খ অর্বাচীন রাজনৈতিক অদূরদর্শিতাকে। আপনি বাংলার নিরীহ সহজ সরল দুখি মানুষকে আর কতো বোকা বানাবার চেষ্টা করবেন? মোকতেল হোসেন মুক্তি, সভাপতি, মালদ্বীপ আওয়ামী লীগ। www.awamileaguemaldives.com
  •  
  •  
    Omar Faruk Shuvo সুদখোর ইউনুস পাগলের প্রলাপ করলে আমরাও বসে থাকবোনা..কুকুরের পাগলামী বেড়ে গেলে গুলশানে ছেড়ে দিয়ে আসবো গুলাপীর কোলে।

ডঃ কামাল স্যারের অতীতের সকল আওয়ামী লীগ ত্যাগী বা বহিষ্কৃতদের অবস্থা থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। যারাই নৌকার সাথে বেঈমানী বা দেশের সাথে, দলের সাথে বেঈমানী করে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেছেন, তাদের কেউ নেই যে রাজনৈতিক ভাবে ভিক্ষুকের চেয়ে অধম না হয়েছে। যদি বলি সেই শুরু থেকে মরহুম মিজানুর রহমান চৌধুরী, যিনি দেউলিয়াই হন নি লোন আর সুদের অর্থ পরিশোধ না করার অপরাধে শেষ জীবনে হলেন ঋণ খেলাপী। সামান্য নির্বাচনে নোমিনিশন নেবার যোগ্যতাও ছিলনা তার। আসম আব্দুর রব? এরশাদের আমলে অবশ্য টুপাইস ভালোই কামিয়েছিলেন কিন্তু এখন ভিক্ষাও দেয় না কেউ। শাহজাহান সিরাজ? এখন বলছেন তিনি বি এন পি'রে যোদ দিয়ে ভুল করেছিলেন। ডঃ কামাল স্যার? আর কি বলবো এই মহা পণ্ডিতের ভুলের মাসুলের কথা? তিনি নিজের পায়ে নিজে কুঠার আঘাত করে ক্ষত বিক্ষত হলেন কিন্তু কোন ঔষধি ফল পেলেন না। ১/১১ এ একটু নাড়া চাড়া দিয়ে উঠেছিলেন কিন্তু সে আশায়ও গুড়ে বালি। গণতন্ত্রের কাছে হেরে গেলেন ১/১১ এর নায়ক মহা রথীরা। সমঝোতার সরকার তো দূরের কথা । ওনাদের অনেকেই পালিয়ে জীবন বাচিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় তাই আবার অনেকেই গা'চারা দিয়ে উঠে দাড়াতে চাইছেন। আর আমাদের কাদেইরা ছাগল? কি বলবো অপেক্ষা করেন, এমন দিন আসবে যে কাদেরালী গলায় গামছা দিয়া আত্বহত্যা করার সময় ও সুযোগও পাবে না।

জামাত শিবির ঠেকানোকে আমার কিছু বাম এবং ডানের মাঝামাঝি পন্থী বন্ধুরা সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিতে চাইছেন। এই শিবির ঠেকানোকে কোন মতেই ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখবার অবকাশ নেই। কারন কুত্তা পিটালে আপনাকে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত বা সম্পৃক্ত বলে সমাজের কেউই ঘৃণা করবে না বা  বলবে না যে ভাই, আপনি মানুষ হয়ে একটি কুত্তাকে পিটালেন? সব কুত্তাকে মানুষ পিটায়না। শুধু পাগলা কুত্তাকেই পিটানো হয়, মেরে ফেলা হয় অথবা সিটি কর্পোরেশনের লোক জন গাড়ী নিয়ে দল বেঁধে ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলে, যাতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করার সুযোগ না পায়। শিবির পিটালে বা মারলে সেটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মতো আরো একটি অপরাধ, এ কথা যেমন বলা অন্যায়, তেমনি রাজাকার পিটানো বা ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেলাকেও কোন অন্যায় অবিচার বলা আর একটি অন্যায়। বস্তুতঃ এটি একটি দেশাত্ববোধ সম পুন্যের কাজ। যে কাজ ৭১ এর বীর সেনানী সোনার ছেলে মুক্তিসেনারা করে গিয়েছে। এই শুয়োরের বাচ্চাদের ৭১ এর একজন সেকটর কমান্ডার হয়ে খুনী জিয়া তার উচ্চাবিলাস পুরনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিকল্প একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরী করার প্রয়াসে ৭১ এর নরপশু ধর্ষক রাজাকারের পীরানে পীর ঘাতক দালাল হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাকারী গোলাম আযম শ্যূয়রের বাচ্চাকে নাগরিকত্ব প্রদান করে এবং মহান স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানের পয়গাম বহনকারী জামাত-ই-ইসলামকে বৈধ রাজনৈতিক সনদ প্রদান করে ৩০ লক্ষ শহীদের সাথে বেঈমানী করে এমন কি জিয়ার বিরংগনা স্ত্রী খালেদার সাথে বেঈমানী করে প্রতিষ্ঠিত করে যায় জামাতে-ইসলামের দুর্ধর্ষ খুনী দেশদ্রোহীদের আল বদর আল শামস ও তাদের দোষরদের। শাহ আজিজুর রহমান কে প্রধানমন্ত্রী এবং আব্দুল আলীমের মতো কুখ্যাত রাজাকারকে দেয়া মন্ত্রীত্ব। শুধু কি তাই? প্রতিটি মন্ত্রণালয়, কর্পোরেশনের প্রধান থেকে শুরু করে উচ্চ পদে পদোন্নতি এমন কি বিদেশী কুটনইতিক মিশনে নিয়োগ দিয়ে  পুরস্কৃত করেছিলো। শুধু রাজাকারই নয় জাতির জনক বঙ্গদবন্ধুর খুনীদেরকেও । জিয়া মূলত বাংলার ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলো জাতির জনকের নাম । যে কাজটি বিগত ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৫ এবং ২০০১ এর নভেম্বর থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। এখন করছে জিয়ার বিধবা মাগি খাঙ্কি খালেদা । যদি কেউ এই মতের সাথে দ্বীমত পোষন করেন, প্ল্রিজ লীভ ফ্রম মায় ফ্রেন্ড লিষ্ট।

ইতিহাসের নৃশংসতম বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানীসহ ঘাতক চক্রের ভূমিকা:
মুশফিক ইমতিয়াজ চৌধুরী
https://blog.bdnews24.com/dr_mushfique
স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকচক্রের গুলিতে ঝাঁঝরা বঙ্গবন্ধুর সারা দেহ
আজ ইতিহাসের সেই বিভীষিকাময় শোকাবহ ১৫ আগস্ট, ‘যাঁর নামের উপর রৌদ্র ঝরে/চিরকাল গান হয়ে নেমে আসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা/যাঁর নামের উপর কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া’… বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম পুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী, আজ জাতির চরম বেদনার দিন, রুধির হয়ে অশ্রু ঝরে পড়ার দিন, রাজনীতির সেই একমেবাদ্বিতীয়ম প্রবাদ পুরুষের বিয়োগব্যথায় শোকাকুল হওয়ার দিন। শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রনি।
অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আজকে এই শোকের দিনে আমি আমার লেখা নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের নিকটে। ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড – বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমাদের দেশের তরুণ সমাজ বলতে গেলে তেমন কিছুই জানেনা। দীর্ঘ সময় দেশে পাকিস্তান প্রত্যাগত সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় ছিলো, বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের অন্যতম নায়ক জিয়াউর রহমান, পাকিস্তান প্রত্যাগত হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ এবং জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়ার কর্তৃক বাংলাদেশ অপশাসিত হওয়ার কারণে এই বিষয়টি নিয়ে তেমন লেখালেখি হয়নি, মানুষ অজ্ঞতার তিমিরেই থেকে গেছে । এমনকি আওয়ামী লীগের মধ্যেও এই বিষয় নিয়ে যতটা জনগণকে জানানোর ছিলো, ততটা জানানোর আগ্রহ তেমন লক্ষ্য করিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে অজ্ঞতার অবগুণ্ঠন আজকে আমি খুলে দেব বলে শপথ নিয়ে এসেছি । বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে কার কি ভূমিকা, কার কতোটা সংশ্লিষ্টতা তা নিয়ে আমার জানামতে এর চেয়ে তথ্যবহুল কোন আর্টিকেল আজ পর্যন্ত রচিত হয়নি। এরজন্য বিভিন্ন লেখক এবং লেখিকার লেখা কলাম ও গ্রন্থের সহযোগিতা নিতে হয়েছে, তাদের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রইলো। যাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তারা নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন। আসুন শুরু করা যাক ইতিহাসের সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে আমার ম্যারাথন দৌড় –
যেভাবে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট চ্যান্সেলর হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল বঙ্গবন্ধুর । ১৪ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু রাত সাড়ে আটটার দিকে গণভবন থেকে বাড়ি ফেরেন। ১৪ই আগস্ট রাতে কাওরান বাজারে একটি ট্যাংক দেখা যায়, পিজি হাসপাতালের সামনে আরেকটি ট্যাংক দেখা যায় । মতিঝিলের কাছে আরো একটি ট্যাংক । এক কিলোমিটারের ব্যবধানে ৩টি ট্যাংক । আবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের সামনে আরেকটি ট্যাংক। সেদিন রাতে খন্দকার মোশতাক আহমেদের ৫৪ নং আগামসি লেনের বাসায় মেজর রশিদ এবং তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের আগমন। ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্বর্ধনা জানানো হবে বলে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কাজ করে মুজিবপুত্র কামাল সেদিন মধ্যরাতে বাড়ি ফেরেন। ঢাকা সেনানিবাসও ব্যস্ত, কর্নেল ফারুক বেঙ্গল ল্যান্সারের উদ্দেশ্য ভাষণে বলে – মুজিব সেনাবাহিনীদের শেষ করে দেবে এবং ল্যান্সারদের বাতিল করবে এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে বলে –
এবার আঘাত হানার সময় এসেছে 
ঘাতক চক্র তিন লাইন করে বেরিয়ে পড়ে। মাত্র দুই কিলোমিটার দূরেই তাদের লক্ষ্যবস্তু । গভীর রাতে রক্ষীবাহিনী তড়িঘড়ি করে শেরেবাংলা নগরস্থ এমএনএ’র হোস্টেলের সামনে লুঙ্গী ও গেঞ্জি পরে অবস্থান নিলেও অজ্ঞাত (!) কারণবশত কিছুক্ষণ বাদেই ফেরত যায় (কার নির্দেশনায় ফিরে যায়?)। একটি ট্যাংক পুরানো এয়ারপোর্টের রানওয়ে দিয়ে এসে একটি দেওয়াল ভেঙে রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পের দিকে ট্যাংকের বন্দুকের নলটি তাক করে। সে রাতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ৩০টি ট্যাংক অবস্থান নেয়। মুজিব ও তাঁর ভগ্নীপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবত এবং ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণির বাড়ি ট্যাংক দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। সৈন্যরা চারদিক থেকে মুজিবের বাড়ির ওপর গুলি বর্ষণ করতে থাকে। একটি বুলেট মুজিবের ছোটভাই নাসেরের হাতে লাগে। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের মত এবারো বাড়ির সকলে মুজিবের শোবার ঘরে আশ্রয় নেয়, তখন ছিলো পাকিস্তানী বাহিনী আর এবার পাকিস্তানী ও ইসলামী মনোভাবাপন্ন বাঙালি আর্মির দল। মুজিব কয়েকজন অফিসারকে ফোন করেন, তাঁর স্ত্রী শাড়ির এক অংশ ছিড়ে নাসেরের রক্তাক্ত হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেন। কামাল ওপর থেকে নিচে নেমে এসে গার্ডদের অবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন কিন্তু ততক্ষণে গার্ডরা নিরস্ত্র, এই মুহূর্তে মেজর হুদা কয়েকজনকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলে গার্ডরা হুদাকে স্যালুট দেয় এবং মেজর হুদার সাথে থাকা একজন কামালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
মুজিবের বাড়িতে আসার সময় সোবহানবাগে অবস্থানরত সৈন্যরা বিগ্রেডিয়ার জামিলের পথরোধ করে, জামিল নিজের পরিচয় দিলেও পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক তাকে অগ্রসর হতে দেওয়া হয়নি এবং জামিল জোরপূর্বক জীপ নিয়ে এগোতে চেষ্টা করলে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
এদিকে সৈন্যদের অনেকে মুজিবের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে এবং রেহানার বন্ধ কামরায় ঢুকে জিনিসপত্র তছনছ করে।
দেখি তারা কি চায়
বলে চেক লুঙ্গী ও সাদা কুর্তা (পাঞ্জাবী) পরিহিত মুজিব নিজ কামরা থেকে বের হয়ে আসেন। সিড়িতে হুদার সঙ্গে দেখা হলে মুজিব জিজ্ঞাসা করেন
ও’তুমি, কি চাও ?
হুদা বলে –
আমরা আপনাকে নিতে এসেছি
মুজিব একটু গম্ভীর গলায় বলেন
তোমরা কি আমার সঙ্গে তামাশা করছো আমি দেশকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দিতে পারিনা
হুদা ঘাবড়ে যায়, এদিকে বাড়ির একজন কাজের লোক ক্রন্দনরত অবস্থায় বলে ওঠে –
কামাল ভাই আর নেই
হাবিলদার মোসলেহউদ্দিন ছাঁদ থেকে নিচে নামা অবস্থায় সিঁড়িতে মুজিবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাথে সাথে পেছন থেকে তাঁর স্বয়ংক্রিয় বন্দুক দিয়ে মুজিবের সমস্ত পিঠে গুলি করে ঝাঁঝরা করে ফেলে, মুজিব লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। এদিকে সৈন্যরা মুজিবের বাড়ি থেকে হাতের সামনে যা যা পাচ্ছিলো তাই তাই লুটে নিচ্ছিলো, মুজিবের স্ত্রী মিনতি করে তাদের উদ্দেশ্যে বলেন
তোমরা সবকিছু নিয়ে যাও কিন্তু আমাদের জীবন নিওনা
কিন্তু নিচে বন্দুকের গুলির বিকট শব্দে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে উপলব্ধি করেন, মুজিব আর নেই। তিনি ব্যাকুল হয়ে কেঁদে উঠে বলেন,
তোমরা ওকে শেষ করে দিয়েছ, আমাকেও আর রেখো না
বেগম মুজিবকেও গুলি করে মেরে ফেলা হলো। শেখ জামাল, তার স্ত্রী রোজী এবং কামালের স্ত্রী সুলতানা তখন ছিলো ড্রেসিং রুমে , বন্দুকধারীরা সেই কামরায় ঢুকে স্টেনগান দিয়ে তিনজনকে চিরতরে শেষ করে দেয়। তারা নাসের কে একটি বাথরুমে আবিষ্কার করে, তাকে ওখানেই হত্যা করা হয়। রাসেল একটা ঘরের এক কোনায় ভীত হয়ে বসেছিল, তার চোখে পানি। সে কেঁদে বলে,
আমাকে আমার মায়ের কাছে নিয়ে চলো
একজন উন্মাদ বন্ধুকধারী বলে ওঠে –
চল তোকে তোর মায়ের কাছে পৌঁছে দিবো
একজন পুলিশ কর্মকর্তা রাসেলকে হত্যা না করার অনুরোধ জানালে তাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। এদিকে রাসেলের এক হাতে গুলি করা হয়, রাসেলের প্রচন্ড ব্যথায় ককিয়ে উঠে তার জীবন ভিক্ষার আবেদন করে, একটি বুলেটের মাধ্যমে তার জীবন ভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়। ফারুক ও রশীদ একটু দেরী করে মুজিবের বাড়িতে ঢোকে। তারা পুরো বাড়ি পরিদর্শন করে দেখে, সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়েছে কিনা। ফারুক এই সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ঐ মুহূর্তে কাউকে ফোন করে।
শেখ মণি এদিন অনেককে ফোন করেন কিন্তু কোথাও থেকে সাহায্য পেলেন না। এরপর ইতোমধ্যে জোরপূর্বক বাড়ির ভেতরে প্রবেশকারী আর্মির লোকজনদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বের হয়ে আসেন তিনি, তাঁর স্ত্রী আরজুও বসার ঘরে ঢুকবেন, এমতাবস্থায় একজন বন্দুকধারী স্বামী স্ত্রী উভয়ের উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ে। দুজনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মণি সাথে সাথে মারা যান কিন্তু স্ত্রী তখনও জীবিত, তিনি অনুচ্চস্বরে পানির আবেদন জানান ।মনির ৩ বছরের ছেলে তাপস জিজ্ঞাসা করে –
মা, তোমরা মাটিতে পরে আছো কেন ? কথা বলছো না কেন ?
আরজু কাউকে উদ্দেশ্য করে বলেন –
আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চলেন, আমার দুটো ছোট ছোট বাচ্চা রয়েছে
৩য় বারের মত মা হতে চলা আরজুর এটাই ছিলো শেষ বাক্য ।
সেরনিয়াবত যখন বুঝতে পারলেন অস্ত্রধারী সৈন্যরা তাঁর বাড়ি চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে, তখন তিনি মুজিবকে ফোন করেছিলেন কিন্তু মুজিব নিজেই তো বিপদের মুখোমুখি। এরপর সেরনিয়াবত মণির বাসায় ফোন করেন, কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে কেউ ধরে না। সেরনিয়াবত বসার কামরায় প্রবেশ করেন, তাঁর পিছুপিছু তাঁর স্ত্রী পুত্র কন্যা ভাগে শহীদ, কজন অতিথি এবং বাড়ির কাজের লোকজনও প্রবেশ করে। তাঁর ছেলে আবদুল হাসনাত জানালা দিয়ে বের হতে চেয়েছিলেন কিন্তু না পারায় একটি রিভলভার নিয়ে ড্রেসিংরুমে লুকিয়ে ছিলেন। অন্তত মরার আগে তিনি একজনকে মেরেই তবে মরবেন।
মেজর শাহরিয়ার ও হুদার নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সেরনিয়াবতের ঘরে প্রবেশ করে। সেরনিয়াবত মেজর শাহরিয়ারকে তাঁর কমান্ডিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন কিন্তু শাহরিয়ার জানায়, তাদের কোন কমান্ডিং অফিসার নেই এবং সেরনিয়াবতকে আপনি কে – বলে পাল্টা প্রশ্ন করে। অর্থাৎ একজন ব্যক্তিকে না জেনে না চিনেই সে অপারেশনে তাকে হত্যা করতে যায় । সেরনিয়াবত নিজের পরিচয় দিতেই শাহরিয়ার মুচকি হেসে সেরনিয়াবতের সারা শরীর বুলেট দিয়ে ঝাঁঝরা করে দেয়। তাঁর কন্যা হামিদা তাঁকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলে হামিদাকে পায়ে গুলি করা হয়। হাসনাতের ৩ বছরের ছেলে বাবু ভয়ে কেঁদে উঠলে শহীদ তাকে কোলে নেন, হাসনাত ভেবে তাকে ও বাবু – দুজনকেই গুলি করে মেরে ফেলা হয়। বাড়ির ভেতরে এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ করা হয়, সেরনিয়াবতের চৌদ্দ বছরের কন্যা বেবী, নয় বছরের ছেলে আরিফ এবং তিনজন অতিথিকে গুলি করে সেদিন মেরে ফেলা হয়। সেদিন যারা প্রাণে বেঁচে যান কিন্তু আহত হন, তারা হলেন সেরনিয়াবতের স্ত্রী আমিনা, কন্যা হামিদা এবং ছেলে খোকন। হুদার ভাই নুরুল ইসলাম মঞ্জুর, হাসনাতকে খুঁজতে থাকে।
গুলির শব্দে ধানমন্ডি এলাকায় বসবাসরত একজন ভারতীয় কূটনীতিক তাঁর বারান্দায় এসে দাঁড়ান, সেখানে এককালের মুক্তিযোদ্ধা এবং তৎসময়ে ব্যবসায়ী একজন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন, যেন কোন আনন্দ সংবাদ আসতে যাচ্ছে । সেই নেমকহারাম ব্যবসায়ী আনুমানিক ৬.০১ মিনিটে কূটনীতিককে জানান, “কাজ শেষ, এখন রেডিও শুনুন”, কাজ যে শেষ তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অপারেশন লিকুইডেশনের সমাপ্তি সূচক একটি রকেট নিক্ষেপের মাধ্যমে, মোহাম্মদপুরের বস্তিতে এটি বিস্ফোরিত হয়ে ৮ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়।
ঢাকা রেডিও’র প্রচারে মেজর ডালিম বলে –
Under the leadership of Khandaker Moshtaq, the armed forces have taken over
প্রচারে আরো বলা হয়, সেনাবাহিনী মুজিব সরকারকে উৎখাত করে দেশের স্বার্থে তাকে বন্দি করেছে । একটু পরে আরেকটি ঘোষণা দিয়ে বলা হয় –
The ousted President Sheikh Mujibur Rahman has been killed at his residence during the army take-over
সেনাবাহিনী ক্ষমতা অধিগ্রহণের সময় উচ্ছেদকৃত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হয়েছেন । আরো বলা হয়, শেখ মুজিবের বাড়ি থেকে নাকি পাল্টা আক্রমণ করা হয়েছিলো !
আমেরিকান অ্যাম্বাসেডর ইগুয়েন বোস্টারকে সেদিন সকালে অফিসে এবং বাসায় কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন থেকে যায়, এত সকালে বোস্টার কোথায় গিয়েছিলেন ?
মুজিব হত্যার আরেক ষড়যন্ত্রকারী মাহবুবুল আলম চাষী ১৩ই আগস্ট কুমিল্লা থেকে উধাও হয়ে যান। কুমিল্লা একাডেমীতে তার সহকর্মীরা ভেবে পাচ্ছিলেন না, চাষী কাউকে কিছু না বলে কোথায় গেলেন। সেই চাষীকে ১৫ই আগস্ট সকালে মোশতাক ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের সাথে ঢাকার রেডিও স্টেশনে যায়। এই তিন ষড়যন্ত্রকারী যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ নস্যাৎ করে যুদ্ধবিরতির পাঁয়তারা করছিলো, তারা এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের সেই মহাপরাজয়ের প্রতিশোধ তুললো।
১৯৭৫ সালে নিহত মুজিব পরিবারের সদস্যগণ
মুজিবের স্ত্রী, তিন ছেলে এবং দুই পুত্রবধূকে রক্তাক্ত কাপড়েই বনানী গোরস্থানে দাফন করা হয়, কিন্তু নিজেদের ইসলামের সিপাহী বলে দাবী করা সেই তথাকথিত মুসলিম ঘাতক চক্র সেখানে কোন জানাজা কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে দেয়নি। উপরন্তু কার কবর কোনটা, সেটাও চিহ্নিত করে রাখেনি। মুজিবের জন্যও বনানীতে কবর খোঁড়া হয়েছিলো, তবে মুজিবের লাশ এখানে দাফন করলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে এমন আশংকায় তারা ১৬ই আগস্ট সকালে একজন মেজর, একজন লেফটেন্যান্ট ও কিছু সৈন্যকে মুজিবের লাশসহ হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়া পাঠায়। সেই দল গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেবকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে গ্রামের লোকজন কি শেখ মুজিবের লাশ দাফন করবে ? উত্তরে জানানো হয়, যদি মরদেহ হস্তান্তর করা হয় তবে তারা দাফন করবে। গ্রামবাসীদের বলা হয়, তাদেরকে মুজিবের কবর ছাড়াও আরো ১০ -১২টি কবর খুঁড়তে হবে। দুপুর ২.৩০ নাগাদ সেনাবাহিনীর কয়েকজন সেই লাশ নিয়ে উপস্থিত হয়, সেখানে গোপালগঞ্জ মহকুমার ম্যাজিস্ট্রেট একটি পুলিশবাহিনী নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। যদিও ইসলাম সম্মত নয়, তবুও মেজর চাচ্ছিলো কফিনসহ লাশ কবর দিতে। গ্রামবাসীরা দাবী করেন –
আমাদের লাশ দেখতে দিতে হবে
মেজর সংকুচিত হয়ে বলেন –
লাশ না দেখে কি কবর দেওয়া যায়না ?
মৌলভী শেখ আব্দুল হালিম বলেন –
যায়, তবে আপনাদের তাঁকে শহীদ বলে ঘোষণা দিতে হবে।
সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো, তখন মৌলভী বলেন –
আপনারা কি তার দাফন কাফন ইসলামিক আইন অনুযায়ী করতে চান না ?
শুনে চারিদিক নীরব নিস্তব্ধ। উত্তেজনাকর মুহূর্ত । অফিসারেরা দোটানায়। যদিও ওপর থেকে কঠোর নির্দেশ – গ্রামবাসীদের মুজিবের মরদেহ দেখানো যাবেনা। কিন্তু তারা উপলব্ধি করলো যে, যদি একজন মুসলমানকে মুসলমান গ্রামবাসীদের সামনে ইসলামী আইন অনুযায়ী কবর দেওয়া না হয়, তাহলে সেখানে বিদ্রোহের সৃষ্টি হতে পারে। এই কথা চিন্তা করে মেজর বললো –
হ্যাঁ, ইসলামিক আইন অনুযায়ীই হবে তবে তাদের উপস্থিতিতেই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।
কফিন খোলা হলো। মুজিবের সারা দেহ বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত এবং বরফ দেওয়া সারা কফিনটি লাল রক্তে মাখামাখি । গ্রামবাসীরা কফিনের আশেপাশে ভীড় জমাতে লাগলো এবং হতভম্ব ও নির্বাক হয়ে গেল। এদিকে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসতে শুরু করলো, তাদেরকে লাশের সামনে পৌঁছুতে বাধা দেওয়া হলো, কিন্তু যে কোন মুহূর্তে তারা সে বাধা ভেঙে এগিয়ে আসতে পারে, এজন্য প্রথমে এক লেফটেন্যান্ট চিৎকার করে তাদেরকে ফিরে যেতে বললো এবং ইমামকে বললো তাড়াতাড়ি করতে। আর মেজর কুকুরের মত ঘেউঘেউ করে চেঁচিয়ে উঠলো –
আপনাদের আর পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হলো।
মুজিবের লাশ তার গ্রামের বাড়ীর বারান্দাতে রাখা হয়। মুজিবের দেহে ৩৫টি বুলেট বিদ্ধ হয়েছিলো, ১টি বুলেট একটি অটোমেটিক রিভলভারের মাধ্যমে তার পেছন দিয়ে শরীরে ঢোকে, অর্থাৎ মোসলেহউদ্দিন ছাড়াও আরেকজন তাঁকে গুলি করেছিলো। মুজিবের পরনের কুর্তার পকেটে ধূমপানের পাইপ ও ভাঙা চশমাটি ছিলো। মুজিবের গ্রামের বাড়িতে ঐ মুহূর্তে কেউ ছিলেন না, আশেপাশের সকল দোকান পাটও বন্ধ ।একজন গ্রামবাসী একটি সাবান নিয়ে আসে। লাশের শেষ গোসলের জন্য গরম পানির ব্যবস্থা করা হলোনা। লাশ থেকে রক্ত পরিস্কার না করা হতেই উপস্থিত মেজর আবার ঘোঁতঘোঁত করে উঠলো –
তাড়াতাড়ি করুন, আপনাদের আর কত সময় লাগবে।
মুজিবের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত সায়েরা খাতুন হাসপাতাল থেকে কয়েকজন গ্রামবাসী ৪টি শাড়ি নিয়ে আসেন। তারা শাড়ির লাল পাড় ছিড়ে ফেলেন কিন্তু মেজর কাফন সেলাই করতে দিলো না। জানাজা হবে কিনা এমন প্রশ্নে মেজর সম্মতি জানালো এবং বললো তারা জানাজায় অংশগ্রহণ করবে কিনা।পুলিশ উত্তরে বললো- তারা যদি পাক পবিত্র অবস্থায় থাকে তবেই তারা জানাজায় অংশ নিতে পারবে। তারা জানাজায় অংশ নিতে ব্যর্থ হলো। মুজিবকে তাঁর পিতার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হলো ।
সততা ও নিষ্ঠার পরাকাষ্ঠা সহজ সরল সাদাসিদে বঙ্গবন্ধু
নেতার নেতা শেখের ব্যাটা শেখ মুজিব
তিনি (মুজিব) রাজনীতির কবি, কৌশলী নন – নিউজউইক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরকালই অসম্ভব সৎ এবং নিষ্ঠাবান ছিলেন কিন্তু কূটনৈতিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন না। ক্যারিশমাটিক এই নেতা তাঁর আবেগময় জ্বালাময়ী বক্তব্যের মাধ্যমে সহজেই জনমনে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারতেন, সেজন্যই নেতা হিসেবে তিনি জনমানসে হিমালয়সম উচ্চতায় আসীন ছিলেন, কিন্তু একজন রাষ্ট্রনায়ক হতে হলে যে কূটচাল ও কূট বুদ্ধিও রাখতে হয় এবং সময়ে সময়ে সেই কূটনীতিগুলোর প্রয়োগ ঘটাতে হয়, সেটি তিনি বুঝতেন না। সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের মধ্যে একপ্রকার সহজ সরল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে, যেগুলোকে বিপক্ষ অসৎ ও কূটচাল সম্পন্ন ধূর্ত ব্যক্তিদের কাছে বোকামি বলে প্রতীয়মান হয়। বঙ্গবন্ধু যে সৎ সহজসরল এবং বোকা ছিলেন, সেটি তাঁর বিপক্ষ কুখ্যাত কূটনীতিবিদ মার্কিন ডাকসাইটে পররাষ্ট্র সচিব হেনরী কিসিঞ্জারও স্বীকার করে গেছেন –
He was one of the world’s prize fools
কিসিঞ্জার: তিনি (মুজিব) ছিলেন বিশ্বসেরা বোকাদের অন্যতম।
বঙ্গবন্ধুর এই সহজসরলতাকেই কাজে লাগিয়ে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি পাকিস্তান ও ইসলামপন্থী কয়েকজন বিপথগামী সামরিক অফিসারেরা ১৫ই আগস্ট তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাকেই আমূল বদলে দেয়। ইচ্ছে না থাকলেও অবস্থার প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালে বাধ্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা কতিপয় সামরিক অফিসারেরাও এই হত্যাকাণ্ডে সক্রিয় ও পেছন থেকে সংশ্লিষ্ট থাকে ।
সহজ সরল ছিলেন বলেই কে শত্রু আর কে মিত্র সেটি বঙ্গবন্ধু চিনতে পারেননি, সরল বিশ্বাসে পুরো জাতিকেই তাঁর সন্তান বলে মনে করেছেন এবং সন্তান যে একদিন পিতাকে হত্যা করবে – এমন ভাবনা বা আশংকা তাঁর মধ্যে কোনদিনও আসেনি। মুজিব-এর হত্যাকান্ডের কথা জানতে পেরে তাজউদ্দিন স্বগতোক্তি করেছিলেন,
বঙ্গবন্ধু জানতে-ও পারলেন না- কে তার শত্রু আর কে তার বন্ধু ছিল
হেনরী কিসিঞ্জারের সঙ্গে আলাপকালে মিঃ এথারটন বলেছেন –
He brushed it off, scoffed at it, said nobody would do a thing like that to him.
এথারটন: তিনি (মুজিব) তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। বলেন, তাঁর সঙ্গে এমন কিছু কেউ করতেই পারে না।
এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু যে কত্টা সোজা সরল মানুষ ছিলেন, সেটিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু মিন্টো রোডে প্রেসিডেন্ট হাউজে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত অফিস করতেন,তারপর চলে আসতেন শেরে বাংলা নগরের সচিবালয়ে যেখানে তিনি রাত ৯/১০টা পর্যন্ত অফিস করতেন। ওখানেই তিনি দুপুরে কিছু সময় বিশ্রাম নিতেন,সময় সুযোগ পেলে বিকেলে লেকে মাছদের খাবার দিতেন,লনে একটু হাঁটাহাটি করতেন। বঙ্গভবন বঙ্গবন্ধুর সরকারি বাসভবন হলেও তিনি রাতে ওখানে থাকতেন না, থাকতেন ধানমন্ডি ৩২ নং রোডের নিজ বাড়িতে। একজন রাষ্ট্রনায়ক সরকারী সুযোগসুবিধা নিচ্ছেন না এবং নিজের নিরাপত্তার জন্যও প্রয়োজনীয় সিকিউরিটি ফোর্স রাখছেন না – এখান থেকেই সুস্পষ্ট হয়, বঙ্গবন্ধু কোনদিনও দুর্নীতিবাজ ছিলেন না। একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক মুজিব সম্পর্কে বলেন –
অন্যান্য মধ্যবিত্ত বাঙ্গালির মত মুজিবও তার বাড়ি ভালবাসতেন। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখনও তাঁর বসবাসের ধরন পরিবর্তিত হয়নি। তাঁর বাড়িতে কোন গালিচা বা নতুন আসবাবপত্র ছিলোনা। তিনি মাছ, মুড়ি, দই ও গুড় পছন্দ করতেন। তিনি লুঙ্গী ও গেঞ্জি পরে বাসায় বিশ্রাম নিতেন। তিনি একজন মধ্যবিত্ত বাঙালিই থেকে যান
১৯৭১-১৯৭৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে চলে ছদ্মবেশী বিপক্ষ শক্তির তান্ডব ও গোয়েবলসীয় অপপ্রচার
স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে দেশে হাজার সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো:
১) যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের শুন্য নয়, বরং ঋণাত্মক অবস্থান থেকে যাত্রা শুরু করা,
২) আওয়ামী লীগ এবং আজকের বিএনপিপন্থী জামাত পন্থী (সে সময়ের আওয়ামী লীগার ও আর্মি সদস্যরা) ও বামপন্থীদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল অর্থাৎ আওয়ামী লীগের ভেতরেই লুকিয়ে থাকা
ক) বাংলাদেশবিরোধী ও বঙ্গবন্ধুবিরোধী স্বার্থান্বেষী চক্রের চরম দুর্নীতি ও লুটপাট,
খ) বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে ভণ্ড বামপন্থীদের লুটতরাজ সন্ত্রাস এবং
গ)) শেখ মুজিবেরই কতিপয় আত্মীয়ের শেখ মুজিবের নাম ভাঙিয়ে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা কায়েম
ঘ) বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর মধ্যে সুপ্ত গোঁড়া ইসলাম ও পাকিস্তান প্রীতি
ঙ) বঙ্গবন্ধুবিরোধী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কদের নজিরবিহীন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র
ছদ্ম আওয়ামী লীগার তথা বঙ্গবন্ধুবিরোধী স্বার্থান্বেষী চক্রের চরম দুর্নীতি লুটপাট ও সুবিধা গ্রহণ
আওয়ামী লীগের মধ্যে লুকিয়ে থাকা স্বার্থান্বেষী চক্রের অনেকেই আজকে বিএনপি জামাতে সহ বিভিন্ন দলের সমর্থক, অথচ এদের অপকর্মের দায়ভার আওয়ামী লীগের ঘাড়েই চাপানো হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ওপর চাপানো হয়েছে, দুর্নীতি করলো এরা অথচ বদনাম হলো আওয়ামী লীগের, শেখ মুজিবের ! খন্দকার মোশতাক আহমেদ, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, মাহবুবুল আলম চাষী, শাহ মোয়াজ্জেমসহ অনেকেই আছেন এই ছদ্ম আওয়ামী লীগারের তালিকায় যারা দেশের জন্য কিছুই করেননি। মওলানা ভাসানী ৭৫’এর পরে নিজের নগ্ন স্বার্থান্বেষী চরিত্রটি উন্মোচিত করে বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে দায়ী সরকারকে সমর্থন জানিয়েছেন। জেনারেল ওসমানী,কর্নেল তাহের, আসম আব্দুর রব, সিরাজুল আলম খানসহ অনেকেই আছেন যারা আওয়ামী ভেঙে দিতে চেয়েছেন বা ত্যাগ করেছে বা শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডে চুপ থেকে মৌন সমর্থন প্রদান করেছেন । অধ্যাপক আলী আহসান, মওদুদ আহমেদসহ অনেকেই রয়েছেন এই লিস্টে যারা পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগদান করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতা কফিলউদ্দিন সাহেবের পুত্র ডাঃ বদরুদ্দোজা জিয়াউর রহমানের সুযোগসুবিধা দান করার লোভে নিজের ঈমান বেঁচে দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছেন। এদের অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন। এই কি ন্যায়বিচার, এরা করলো দুর্নীতি লুটপাট, এরাই নিলো সুবিধা অথচ বদনাম হলো আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর ? তবে এদের কারণে দেশের ক্ষতি হলেও মুজিব সরকারের মুজিবপন্থী দেশপ্রেমিক নেতাদের জানপ্রাণ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিলো । তারা চেষ্টা করেছিলো, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে শূন্য নয় বরং ঋণাত্মক অবস্থান থেকে সংহত অবস্থানে টেনে তোলার । জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ড. আমব্রিখট মুজিব সরকারের সাফল্যের একটি উল্লেখযোগ্য বিবরণ দেন। তিনি লিখেছেন,
গত ১২ মাস ধরে দেশের অর্থনীতির বিরাট উন্নতি ঘটেছিল। ভালো খাদ্য পরিস্থিতি, বৃহত্তর খাদ্য মজুদ, ব্যাপক রপ্তানি ও ঘাটতিবিহীন বাজেটও ছিল। ধর্মঘট ছিল না। ছিল ভালো জনকর্মসুচি, ভালো “কাজের বিনিময়ে খাদ্য” প্রকল্প, কম বেকারত্ব, অধিকতর দক্ষ জনপ্রশাসন (যদিও এখনো দুর্দশা কাটেনি) প্রভৃতি। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের উত্তম অংশটিকে কেন নির্মুল করা হলো, তা বিচার করা দুরূহ। আমাদের তা দেখা ও বোঝার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
অভিজ্ঞতাহীন রক্তগরম তরুণদের নষ্ট করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে ভণ্ড বামপন্থীদের লুটতরাজ সন্ত্রাস
মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু চীনপন্থীরা নিজের মাতৃভূমির চেয়ে চীনের বৈদেশিক নীতির স্বার্থ বেশি দেখে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন। সিরাজ শিকদার তাদের ই একজন। বরিশালের পেয়ারা বাগানে তিনি মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনীর সাথে লড়াই চালিয়েছেন। অনেকে হয়তো বলবেন, কোন ‘মহান’ আদর্শের জন্য তিনি এ কাজ করেছেন। তাহলে রাজাকারদের আর কি দোষ? তারাও তো ‘মহান’ ধর্মরাষ্ট্র অক্ষুণ্ণ রাখতে এই কাজ করেছেন। হত্যার রাজনীতিতে সিদ্ধহস্ত, নিজের দলের মাঝেই গণহত্যাকারী সিরাজ শিকদারকে মানবতাবাদের প্রচারক ভাবাও দুষ্কর। সামান্য সন্দেহ হলেও নিজের ঘনিষ্ঠ সহচরের রক্তে হাত রাঙ্গানো সিরাজ শিকদারকে বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা করার মত আমি কোন কারণ খূঁজে পাই না। ভারতের মাওবাদী নকশালপন্থী চারু মজুমদারের অন্ধ অনুসরণে সিরাজ শিকদার সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথ বেছে নিয়েছিলেন স্বাধীনতার পরপর। নকশালবাড়ি বলে একটা জায়গা থেকে চারু মজুমদার ও তার দলের সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল বলে পরে নকশালপন্থী শব্দটা চরমপন্থী মাওবাদীদের বোঝাতে ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। থানা দখল, পুলিশের অস্ত্র লুট, ব্যাংক লুট, জোতদার (গ্রামের ভূস্বামী) ও আওয়ামী লীগের নেতা-সমর্থকদের হত্যা ছিল তার রাজনৈতিক কৌশল। তার রাজনীতি সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া ছিল সামান্যই। ঢাকা ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ওই রাজনীতিতে আকৃষ্ট হলেও পশ্চিমবঙ্গে নকশালবাড়ি আন্দোলন যতোটা তরুণ-যুবকদের টেনেছিল বাংলাদেশে সেটা হয়নি। পুলিশ বলেছিল, গ্রেপ্তার হওয়া সিরাজ শিকদার তাদের গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যেতে চাইলে গুলিতে তিনি নিহত হন।পুলিশের এই কথা যদি মিথ্যেও হয়ে থাকে, তারপরও এটা তো সত্য যে, সিরাজ শিকদার ছিলেন ঠাণ্ডা মাথায় অজস্র লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের খলনায়ক । সুস্পষ্টভাবে, এমন সন্ত্রাসী খুনী এবং চরমপন্থী ব্যক্তি মারা গেলেই দেশ ও জাতির মঙ্গল। যদি পুলিশ তাঁকে ক্রসফায়ার করে থাকে, তো সেটি নিশ্চিতভাবেই সঠিক ছিলো।
শেখ মুজিব নিজেই একজন গণতন্ত্রী এবং সমাজতন্ত্রী ছিলেন এবং সেজন্যই গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রকে একসূত্রে বাঁধতে চেয়েছিলেন, এমন বৈপ্লবিক ধ্যানধারণা আমাদের দেশের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ৫ টাকার লিফলেট বিক্রি করা এবং প্রধানমন্ত্রীকে ফাউ ফাউ স্মারকলিপি প্রদান করা বামপন্থী চৈনিকদের পছন্দ হয়নি, তাদের আদর্শ চীন যেমন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলোনা তেমনি তারাও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় ছিলোনা। শেখ মুজিব দেশ গড়ার কাজে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা এবং অনেকটাই নিষ্ক্রিয় থাকা বামচৈনিকেরা দেশের সরকারের মধ্যে কোন যুক্তিতে স্থান পাবে ? ফলে যা হবার তাই হলো, সরকারে এবং দেশের বিভিন্ন পদে চৈনিক বামপন্থীরা সুযোগ না পেয়ে উগ্র চরমপন্থী মাওবাদী কায়দায় দেশে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ও মাও সে তুং স্টাইলের বুলি আওড়ে দেশের রক্তগরম এবং অভিজ্ঞতাহীন তরুণসমাজের ব্রেন ওয়াশ করতে লাগলো, এদেরকে সশস্ত্র সংগ্রামের নামে হত্যাযজ্ঞ,লুটপাট, অরাজকতা,সন্ত্রাস, চুরিডাকাতি,রাহাজানি ইত্যাদি অসামাজিক বিশৃঙ্খল ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লেলিয়ে দিলো। এদের অপরাধটা কেউ দেখলো না, সবাই ভাবলো আওয়ামী লীগ এই অপরাধ দমনে ব্যর্থ। এদের নিয়ন্ত্রণে সরকার সক্রিয় হতে শুরু করলে এরাই দেশে অপপ্রচার চালালো, আওয়ামী লীগ দেশে দমননীতি চালাচ্ছে ! দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সক্রিয় হলেও বিপদ ! তাহলে কোনদিকে যেত আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু কিংবা পৃথিবীর কোন মহান রাষ্ট্রনায়কও এই বন্ধুর পরিস্থিতিতে এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারতেন না।
বঙ্গবন্ধুর কতিপয় আত্মীয় এবং তথাকথিত চাটুকারদের দাপট এবং হত্যাকাণ্ডে মেজর ডালিমের সংশ্লিষ্টতা
বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে একেবারেই দুর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন না, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের স্থপতি বলে তারই কতিপয় আত্মীয় ও তথাকথিত বন্ধু শ্রেণীর ব্যক্তিগণ সেটার অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করা শুরু করে, বঙ্গবন্ধু তাদের কাছ থেকে সততা ও নিষ্ঠা আশা করেছিলেন কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি দিয়ে তারা, ঔদ্ধত্য এবং অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে নির্দোষ বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি জনমানসে ধীরে ধীরে কলঙ্কিত করে তোলেন। দোষ তাদের, কিন্তু জনগণ সেটি অনুধাবন না করেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি খুব্ধ হয়। এই সকল আত্মীয় ও বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শেখ মণি ও গাজী গোলাম মোস্তফা। মেজর ডালিম বঙ্গবন্ধুর এবং বেগম মুজিবের প্রতি অনুগত ছিলো, বঙ্গবন্ধু ও ডালিম একসঙ্গে মুড়িও খেত। সমস্যার সূত্রপাত হয় যখন ডালিমের বোনের বিয়েতে ডালিমের সুন্দরী স্ত্রী তাসনিমকে গাজী গোলাম মোস্তফার এক ছেলে উত্যক্ত করার চেষ্টা করে। ডালিম তাকে চড় মারে । তখন গাজী ডালিমকে মুজিবের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সবসময় বিরোধ নিষ্পত্তিকারী মুজিব – গাজী ও ডালিমের হাত মিলিয়ে দেন ও বিরোধ দূর করে খুশি হন এবং সবাইকে মিষ্টি খেতে বলেন। কিন্তু ব্যাপারটি এখানেই শেষ হয়না। প্রতিশোধপরায়ণ ডালিম কতিপয় সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে গাজীর নয়াপল্টনের বাড়িতে আক্রমণ করে এবং সবকিছু তছনছ করে ফেলে, উপরন্তু হুমকি দেয় ডালিমের কিছু হলে শহরে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে। এ নিয়ে গাজীর অভিযোগের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টার বিষয়টি তদন্ত করে এবং যেসব কর্মকর্তা জড়িত ছিলো। তাদের চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশ দেয়, কেননা শৃঙ্খলাই সেনাবাহিনীর আইন। মুজিবের কয়েকজন বন্ধু এব্যাপারে এই চাকুরী চ্যুতি থামানোর জন্য মুজিবকে অনুরোধ করলেও ডালিম তাঁর বিরোধ মীমাংসাকে অবজ্ঞা করে অমন কাজ করেছে দেখে বলেন –
এটি সেনাবাহিনীর সদর দফতরের সিদ্ধান্ত
এতে ডালিম ক্রুদ্ধ হয় এবং বিভিন্ন জায়গায় এই নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করে বেড়াতো আবার ঠিকই বঙ্গবন্ধুর বাসায় আসতো । এটির কারণে একদিন শেখ রেহানা তাকে স্পষ্টভাষায় এই নিয়ে ডালিমকে বলেন – “ আপনি যখন বাবা সম্পর্কে এসব কথা বলেন, তখন কেন আমাদের বাসায় আসেন” এ নিয়ে ডালিমের শাশুড়ি হেনা, যিনি শেখ হাসিনার বান্ধবী এবং বয়সে বেশ বড় হওয়ার কারণে বেগম মুজিবেরও বান্ধবী, তিনি তার জামাতাকে তাদের সামনে ভর্ৎসনা করেন যে “ তোমার এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলা উচিত নয়” এতে চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ ডালিম আরো ক্ষেপে যায় এবং ক্ষেপলে সে বিবেকবর্জিত পশুর মত আচরণ করতো। মুজিব হত্যা পরিকল্পনায় এসব কারণেই ডালিম সংশ্লিষ্ট হয়েছিলো তবে তাঁর স্ত্রী তাসনিম মুজিব হত্যার পরে পাগলের মত হয়ে যায়, ডালিমের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা জন্মায় তাঁর, মেজর দেখলেই সে থুতু ফেলতো। মুজিব হত্যার পরে এরকম পাগলের মত হয়ে যাওয়া মানুষ আমি (লেখক) অজস্র দেখেছি, কালকে ফেসবুকেই দেখলাম একজনের ম্যাসেজে) কিন্তু সেসময় আর্মি শাসনের অস্থিতিশীলতায় ও মুজিব হত্যার চরম নৃশংসতায় মানুষ নির্বাক হতবাক হয়ে গিয়েছিলো, নীরবে তারা চোখের জল ফেলেছে, কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনি তাদের দুঃখ বেদনা যন্ত্রণা আহাজারি। এই বিষয়টিকে রাজাকারপন্থী বিএনপি জামাতেরা অশ্লীলভাবে ব্যাখ্যা করে যে, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে জনগণ কষ্ট পায়নি । প্রকৃতপক্ষে তৎকালীন সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ জীবিত মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফ যেখানে পাকিস্তানপন্থী প্রো ইসলামিক ব্লকের আধিপত্যের কারণে ন্যুব্জ ও দিশেহারা, সেখানে সাধারণ জনগণ তো আরো বেশি দিশেহারা এবং অসহায় বোধ করবে এবং সেসময় কিছু করতে গেলে দেখা যেত, আর্মিরা বিদ্রোহীদের চরমভাবে দমন করছে, দেশে পুনরায় হয়তো গৃহযুদ্ধ লেগে যেত। তাছাড়া আওয়ামী নেতাদেরও সেসময় খুনী চক্রের কারণে আত্মগোপন করতে হয়েছিলো, ফলে জাতি ছিলো একেবারেই কুলকিনারা ও দিকনির্দেশনাহীন। অস্ত্রের মুখে নিরস্ত্র জনগণ নীরব হয়ে গিয়েছিলো, তাছাড়া আরেকটি বিষয় ছিলো – মানুষ চরম আঘাত পেলে শোকে পাথর হয়ে যায়। বাঙালিদের অবস্থা ছিলো তেমনই, অধিক শোকে পাথর সদৃশ ।
বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থদের মধ্যে সুপ্ত ধর্মান্ধতা ও পাকিস্তান প্রীতি
বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের সদস্যদের অনেকেই ছিলেন পাকিস্তান আর্মিতে চাকুরী করা ছোটখাটো ও মধ্যম শ্রেণীর অফিসারেরা । জাতিসত্ত্বায় বাঙালি হওয়ার কারণে এদের কাউকে কাউকে অনিচ্ছাকৃত তথা বাধ্য হয়েই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হয়। মুজিব সামরিক বাহিনীতে নিয়োগের ব্যাপারে কোন নিয়ন্ত্রণ করেননি, এই নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী ছিলো, সমমনা অফিসারদের উচ্চপদে নিয়োগ দিলে এবং পাকিস্তানপন্থী সদস্যদের সামনে আসতে না দিলে স্বার্থান্বেষী সামরিক বাহিনীতে মুজিবের পক্ষে দাঁড়ানোর মত ব্যক্তি থাকতো, পাকিস্তানপন্থী ব্লক মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারতো না। মুজিব ভুল করে সেই বিষধর গোখরা সাপকে দুধ খাইয়েছেন এই ভেবে যে, পাকিস্তানপন্থীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে তারা হয়তো ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে বাংলাদেশমনা হয়ে উঠবে, দেশের জন্য কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। মুজিব দুর্নীতিবাজ ছিলেন না বলেই সামরিক বাহিনীতে পাকিস্তানপন্থী কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেননি। কে এম শফিউল্লাহ সেনাপ্রধান ছিলেন বটে কিন্তু তার হাতে প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতা ছিলোনা। কেননা, উপসেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান তার সকল কাজে হস্তক্ষেপ করতেন এবং শফিউল্লাহ কিছুটা দুর্বল মনোবৃত্তি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তাছাড়াও পাকিস্তানী মনোভাবাপন্ন জিয়াদের ব্লকও তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী ছিলো, ফলে শফিউল্লাহ’র বিরুদ্ধেই হয়তো ক্যু সংঘটিত হয়ে যেত। অনেকে কে এম শফিউল্লাহকে দোষারোপ করেন কেন তিনি ঐ মুহূর্তে ব্যবস্থা নিলেন না। এই কেন’র উত্তর আর্মিতে পাকিস্তান থেকে প্রত্যাগত ব্লকের সদস্যাধিক্যের মাঝেই নিহিত। চাইলেই সবসময় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়না। কে এম শফিউল্লাহর আরেকটি দুর্বলতা ছিলো যে জিয়াউর রহমানের কাছে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমির উচ্চতর প্রশিক্ষণ ছিলো, যেটি যোগ্যতার বিচারে জিয়াকেই ভবিষ্যতের সেনাপ্রধান বানানোর ক্ষেত্রে একটি বড় প্লাস পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হতে পারত ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফ সামনাসামনি প্রতিক্রিয়া না দেখালেই ভেতরে ভেতরে এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি ফুঁসছিলেন, যার কারণে সুযোগ পাওয়া মাত্রই ৩রা নভেম্বরের ক্যুয়ের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে বন্দী করেছিলেন, যদিও মূর্খ ও অর্বাচীন কর্নেল তাহেরের ক্ষমার অযোগ্য হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে জিয়াউর রহমানকে বিভ্রান্ত সিপাহীরা মুক্ত করে নিয়ে আসে এবং জিয়ার নির্দেশেই বাংলাদেশের ইতিহাসের সে সময় জীবিতদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফ এবং তার দুই সহকর্মী এটিএম হায়দার এবং নাজমুল হুদাকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।
মেজর জিয়াউর রহমান পশ্চিম পাকিস্তান ছিলেন অনেক দিন, রিসালপুর মিলিটারি একাডেমিতে ইন্সট্রাকটর হিসেবে। চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে অস্ত্র খালাসের সময় জুনিয়র অফিসারদের তোপের মুখে বাধ্য হয়েই তাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হয়। উল্লেখ্য, জিয়া কোনদিন সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেননি অর্থাৎ তার মধ্যে গা বাঁচানো এবং সুযোগসন্ধানী স্বভাবটি চিরকালই ছিলো। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম খলনায়ক ফারুক রহমান আবুধাবীতে পাকিস্তানী এক আর্মড রেজিমেন্টের স্কোয়াড্রন কমান্ডার ছিলেন, ১২ ডিসেম্বর তিনি পক্ষ বদলে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন, আরেক স্বার্থান্বেষী সুযোগসন্ধানী আব্দুর রশীদ যোগ দেন তার এক মাস আগে। এর আগে পশ্চিম পাকিস্তানেই ছিলেন তিনি,যুদ্ধ যোগ দেন পালিয়ে নয়,ছুটি নিয়ে!উল্লেখ্য রিসালপুরেই জিয়াউর রহমানের সঙ্গে এদের দুজনের প্রথম পরিচয়। অর্থাৎ, বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিলো প্রকৃতপক্ষে সুপ্ত ও বিপদের সময় দলবদলকারী পাকিস্তানপন্থী ব্যক্তিবর্গের দখলে। মুজিব সামরিক বাহিনীর লোকজনদের পেছনে বিপুল অর্থ খরচ না করে সেই অর্থ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দারিদ্র নিপীড়িত কৃষক শ্রমিক জনগণের পেছনে ব্যয় করতে প্রয়াসী ছিলেন। এতে করে স্বার্থান্বেষী সামরিক বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের অনেকেই মুজিবের ওপর রুষ্ট হয় কেননা তাদের পেছনে অর্থ বরাদ্দ ও সুযোগ সুবিধা কমিয়ে দিলে তাদের সেই প্রাত্যহিক বিলাসব্যসনের জীবন যাপন করা আর সম্ভব হয়ে উঠবেনা। আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে পূর্বে চাকুরী করার ফলে অন্যান্য পাকিস্তানী অফিসারদের গোঁড়া ইসলামিক মনোভাব এদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়। মুজিব একজন পাক্কা মুসলমান ছিলেন, কিন্তু গোঁড়া বা ধর্মান্ধ ছিলেন না, তিনি সকল ধর্মের মিলনে বিশ্বাসী ছিলেন এবং এই অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাংলাদেশের মূলনীতিতে সংযোজিত করেছিলেন। এটি সামরিক বাহিনীর গোঁড়া মুসলিমদের মধ্যে চরম মুজিব বিদ্বেষের সৃষ্টি করে।
যাদেরকে আমরা বলি মুক্তিযুদ্ধের গর্ব, তাদের অনেকেই স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার নীল নকশাটি করেছিল।মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকারদেরকে পৃথকীকৃত করার কোন উপায় আছে কি ? কর্ণেল তাহের, জেনারেল ওসমানী,জিয়াউর রহমান, মেজর আব্দুর রশিদ ইত্যাদি ব্যক্তিরা যদি মুক্তিযুদ্ধ করে থাকে তো পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যা, মুক্তিযোদ্ধা হত্যা এবং পাকিস্তানী রাজাকারদের পুনর্বাসনে এদের সক্রিয় ভূমিকা কেন ? জেনারেল ওসমানী মনে মনে তীব্র হিন্দু বিদ্বেষী ছিলেন, এর পেছনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকুরী করার সময় পাকিস্তানী আর্মি অফিসারদের মধ্যেকার ভারত ও হিন্দু বিদ্বেষের বিষয়টি দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাঁকে এবং জিয়াউর রহমানের কাউকে সেনাপ্রধান না বানিয়ে শফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান বানানোর কারণে জেনারেল ওসমানী বঙ্গবন্ধুর ওপর রুষ্ট হন এবং অশোক রায়নার বই থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আলাপ আলোচনায় তার সংশ্লিষ্টতা ছিলো বলে জানা যায়।
তবে জিয়াউর রহমানের কথা আলাদা,আন্তর্জাতিক মদদে সে ছিল শেখ হত্যার মাস্টারদের মাস্টার মাইন্ডার। অশোক রায়নার বই ‘ইনসাইড র দ্যা স্টোরি অব ইন্ডিয়াস্ সিক্রেট সার্ভিস’ থেকে জানা গেছে বেগম জিয়ার বাড়ির ট্রেস থেকে উদ্ধার করা হয় তিন ঘণ্টা মিটিংয়ের পরে মুজিবের বিরুদ্ধে ক্যু-এর একটি স্ক্রাপ পেপার। কাগজটি যত্নসহকারে গার্বেজ করা হলে একজন গুপ্তচর গৃহভৃত্যের মাধ্যমে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দিল্লীতে পাঠিয়ে দিলে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করে দেয়ার জন্য ‘র’এর পরিচালক মি. কাউ পান বিক্রেতার ছদ্মবেশে বাংলাদেশে আসেন। বঙ্গবন্ধু সেটাকে যথারীতি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ওরা আমার সন্তানের মতো। এই চিরকুটে যাদের নাম ছিল, জিয়াউর রহমান, মেজর রশিদ, মেজর ফারুক, জেনারেল ওসমানী এবং মেজর শাহরিয়ার। বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচারকালে, বেগম জিয়াকে সাক্ষী হিসেবে আমলে নেয়া কি খুবই অযৌক্তিক ? জিয়ার নাম তো লিস্টেই ছিল। মরনোত্তর বলে তাকে অব্যহতি দেয়ার বিরুদ্ধে উল্লেখ আছে রায়ের ১৩৬ পৃষ্ঠায়।
১৫ই আগষ্ট সফল হওয়ার পর রাজাকার শক্তির কেন পুনরুত্থান হয়, যার এক মাত্র কারণ জিয়াউর রহমানের একের পর এক সংবিধানের নানান আইন পরিবর্তন। ’৭২ সন থেকে রাজাকারদের অনেক অভিভাবকই বাংলাদেশের নানান অঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের সরাসরি কাজটি শুরু করে। খোন্দকার আব্দুল হামিদ যাদের অন্যতম।
দৈনিক আযাদ এবং ইত্তেফাকে মর্দে মোমিন ও স্পষ্টভাষীর ছদ্ম নামে লেখা এই লোকটি জিয়াউর রহমানের মধ্যে একজন পাকিস্তান প্রেমিককে আবিষ্কার করে সবার আগে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নানান উষ্কানিমূলক লেখা লিখে জনগণকে ইসলামের সেন্টিমেন্ট দিয়ে উস্কিয়েছে । দুর্ভিক্ষ,জলপড়া বাসন্তী, মৃত্যু, অরাজকতা, লুটপাট, গণ-ধরপাকড়, সিরাজ শিকদার হত্যা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বিষাদ্গোর। স্পষ্টভাষীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু গোলাম আযমের সঙ্গে লন্ডনে তার মোলাকাত হয় ১৫ই আগষ্টের কিছু আগে। (দ্র: জীবনে যা দেখলাম। লেখক গোলাম আযম )। যুদ্ধ বিরোধী আন্তর্জাতিক লবিস্ট, ’৭১ পরবর্তী মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে এই ঘোর মুসলিম লীগারের কলামগুলো ’৭২-’৭৫ পর্যন্ত জনমনে বিষ ছড়ায়। জিয়াউর রহমানকে সরাসরি অভ্যুত্থানের সাংকেতিক সুরসুড়ি তার কলামে। পরবর্তীতে দুই দুইবার তাকে মন্ত্রী বানায় জিয়াউর রহমান। সুতরাং যারা রাজাকারদের পিতা, তাদের বিচার কেন হবে না? না হলেও অন্তত পাঠ্যপুস্তকে এদের বিষয়ে জানান দেয়া রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। ’৭২-এ স্পষ্টভাষীকে গ্রেফতার করা হলেও অদৃশ্য আঙুলের নির্দেশে ছাড়া পেয়েই সাংবাদিকতা এবং পরোক্ষ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে যা, প্রত্যক্ষ রাজনীতির চেয়েও বিপজ্জনক। আমাদের দেশে কোন কিছুই কেন কখনোই অসম্ভব নয়?
এর সাথে যুক্ত হয় সরকারবিরোধী হরেক রকম গোয়েবলসীয় মিথ্যা প্রচারনা, যেমনঃ

* বিদেশ থেকে প্রচুর সাহায্য আসছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন সব লুটেপুটে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে
* শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাতি করে পালানোর সময় গুলিতে আহত হয়েছে
* আওয়ামী লীগের লোকজন দুর্নীতি ব্যাংক ডাকাতি করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে
* ত্রাণসাহায্যের বিশাল অংশ আওয়ামী লীগ ভারতে পাচার করে দিচ্ছে এবং নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে
* বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধংস করে দেয়ার জন্য রক্ষী বাহিনী বানানো হয়েছে, এ বাহিনীতে প্রচুর ভারতীয়কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং বিপক্ষদের বিনা কারণে মেরে ফেলা হচ্ছে
* ভারত বিভক্তির সময় যে সকল হিন্দু ঘরবাড়ী ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিল, তারা অচিরেই ফিরে আসবে এবং জমি জমা, বাড়ী ঘরের দখল নিয়ে নিবে
* বাকশালের মাধ্যমে দেশে গনতন্ত্রকে স্তব্ধ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ একাই রাজত্ব চালাবে
এ সকল তথ্য অপরিণত অভিজ্ঞতাহীন তরুণদের দলে ভেড়ানো সন্ত্রাসবাদী ছদ্ম সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের মুখপাত্র “গণকন্ঠ”, দ্বিচারী ও জাতিবিদ্বেষী ভাসানী ন্যাপ এর মুখপাত্র “হক কথা”, বামপন্থী চৈনিকদের মুখপাত্র “হলিডে” এর মতো পত্রিকায় নিয়মিত ভাবে প্রচার করা হতো। কুখ্যাত সি.আই.এ. এজেন্ট ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনের ইত্তেফাকেও এধরনের মিথ্যা প্রোপাগান্ডামূলক খবর প্রচারিত হতো
এ সকল অপপ্রচারণার কারনে আওয়ামী লীগ তথা মুজিব ১৯৭০ সালে জনপ্রিয়তার যে উচ্চশিখরে উঠেছিলেন, সেই জনপ্রিয়তা ব্যাপক হ্রাস পায় । দেশের বহু মানুষ ঐসকল পত্রপত্রিকার মিথ্যে সংবাদ পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে দেশের সকল দুর্গতির জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী বলে ভাবতে থাকে। অনেকে এমনও ভাবতে শুরু করে যে -পাকিস্তানেই তারা ভাল ছিল। কেউ কেউ এমনও ভাবতে থাকে, মুজিব এবং ভারতই আমাদের পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিল, একত্রে থাকলে মুসলিম রাষ্ট্রটি অনেক শক্তিশালী হতে পারতো।
এদিকে আওয়ামী লীগের মধ্যে ঢুকে থাকা গাদ্দার খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষী, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেম চক্র সক্রিয় ছিল কোনোভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে আবারো একটা সম্পর্কে জড়ানো যায় কিনা সেটা নিয়ে। তাহেরউদ্দিন ঠাকুর(পেশাভিত্তিক ক্রমিক-১৩১, উপদেষ্টা সদস্য বহিঃ প্রচার বিভাগ, তথ্য মন্ত্রনালয়) এবং খন্দকার মোশতাকের বাড়ি ছিলো কুমিল্লায়। একই জেলার মানুষ সুবাদের তাদের মধ্যে চমৎকার ঘনিষ্ঠতা এবং সখ্য গড়ে ওঠে। মাহবুবুল আলম চাষী (ক্রমিক-৬৬৯) ছিলো চট্টগ্রামের মানুষ । এরা দুজনে ছিলেন খোন্দকার মোশতাকের ডান হাত। মানুষের আদালতে দন্ড এড়াতে পারলেও তিনি ইতিহাসের দন্ড এড়াতে পারেননি। মক্কায় হজ্জ্ব করতে যাওয়ার পথে তার গাড়িতে গ্যাস লিক হতে শুরু করে এবং দরজা-জানালা বন্ধ সেই গাড়ি থেকে যথাসময়ে বেরুতে না পেরে তার নির্মম মৃত্যু ঘটে। তার শরীর পুড়ে প্রায় ছাই হয়ে গিয়েছিল। তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একসময়ের অন্যতম প্রিয় শিষ্য এবং তার বিশ্বাসভাজন মন্ত্রী। তিনি ষড়যন্ত্রে পেছন থেকে সক্রিয় ছিলেন, তলে তলে মোশতাকের গোপন বৈঠকে শরিক হতেন।
নামকরা সাংবাদিক আবেদ খান তাঁর ইতিহাদের কাছে আমার এ দায় শীর্ষক কলামে বলেছেন -
তখন বার্তা সম্পাদক মরহুম আসফউদ্দৌলা রেজা। আমার লেখার ওপর তাঁর এতখানি আস্থা ছিল যে তিনি স্ক্রিপ্ট দেখতে চাইতেন না। আমি বাসায় ফিরে ভাবছি একটা দারুণ চাঞ্চল্যকর ‘ওপেন সিক্রেট’ ছাপা হবে পরদিন। কিন্তু দেখলাম, পরদিন রিপোর্টটা ছাপা হয়নি। সেই মুহূর্তে আমার কাছে ‘ওপেন সিক্রেট’ সিরিজের চেয়ে পরিস্থিতিটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।পাকিস্তান আমলে একসময় আমার চিফ রিপোর্টার ছিলেন তাহেরউদ্দিন ঠাকুর। তিনি তখন বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রভাবশালী তথ্য প্রতিমন্ত্রী। গেলাম তাঁর কাছে, খুলে বললাম ঘটনার কথা, আশঙ্কার কথা। জানতাম, তাহের ঠাকুর বঙ্গবন্ধুর খুব বিশ্বস্ত। তাই চাইলাম, তিনি যেন বঙ্গবন্ধুকে খুলে বলেন সব কিছু। ১৫ আগস্টে বুঝেছিলাম, কী ভুল জায়গায় কথা বলেছি আমি। ওদিকে রেজা ভাইয়ের সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের ছিল দারুণ খাতির। আর খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে ইত্তেফাকের সম্পর্কও ছিল অত্যন্ত নিবিড়।
৭৫’র মীর জাফর খন্দকার মোশতাক – তাহেরুদ্দিন ঠাকুর ও মাহবুবুল আলম গংয়ের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র
কাজী আব্দুল হান্নান তাঁর সে রাতের হত্যাকাণ্ড শীর্ষক কলামে বলেন –
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ সময় তার সেক্রেটারি ছিল পরবর্তীকালের অন্যতম ডাকসাইটে আমলা মাহবুব আলম চাষী। ১৯৭৪ সালে ভয়াবহ বন্যার পর বন্যা-উত্তর কর্মসূচিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বনির্ভর বাংলাদেশ কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এই কর্মসূচির পরিচালক করা হয় মাহবুব আলম চাষীকে। খন্দকার মোশতাক তাকে এই পদে নিয়াগের ব্যবস্থা করে। ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসের শেষদিকে কুমিল্লার বার্ডে এই কর্মসূচির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন হয়। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক খুরশিদ আলম, মাহবুব আলম চাষীসহ আরও অনেকে। নিজের চোখে দেখা এই ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছেন খুরশিদ আলম। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বিকেলে একটি আর্মি জিপে সাদা পোশাকে মেজর আবদুর রশিদ এবং অপর এক সামরিক অফিসার রেস্ট হাউসে আসে এবং খন্দকার মোশতাকের কক্ষে প্রবেশ করে। মাহবুব আলম চাষী এ সময় তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে নিয়ে সেই কক্ষে যায়। সেখানে তারা ৩০ বা ৪০ মিনিট কথা বলার পর মাগরিবের আজানের আগে সেনা অফিসার দু’জন চলে যায়। পরে মে বা জুন মাসে মোশতাকের গ্রামের বাড়ির এলাকায় একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে মোশতাকের বাড়িতে চা-পানের সময় মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এবং শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী কর্মসূচির সমালোচনা করতে থাকে। খন্দকার মোশতাককে সেদিন এসব নীতিনির্ধারণী কর্মসূচির বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক কটাক্ষ করতে দেখা যায়। সে বছর জুন-জুলাই মাসে দাউদকান্দি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে পরিবার পরিকল্পনার এক সম্মেলন হয়। সম্মেলনে মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এবং বর্তমানের আলী আশরাফ এমপি উপস্থিত ছিলেন। পরে মাহবুব আলম চাষীও আসে। সম্মেলন চলাকালে আর্মির জিপে আসে মেজর আবদুর রশিদ, মেজর ফারুক, মেজর শাহরিয়ার এবং আরও কয়েকজন সেনা অফিসার। সম্মেলন শেষে মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, মাহবুব আলম চাষী, মেজর রশিদ, মেজর ফারুক এবং মেজর শাহরিয়ার মোশতাকের গ্রামের বাড়ি যায়। আসামিদের এই তৎপরতা ছিল গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এসব বৈঠকের আলোচনায় তারা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। কাঙ্ক্ষিত প্রমোশন না পেয়ে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার আগে লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ১৯৭৩ সালে কুমিল্লায় ছিল। মেজর ডালিম, ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা, মেজর আজিজ পাশা প্রথম ফিল্ড আর্টিলারিতে সেখানে কর্মরত থাকাকালে তাদের সঙ্গে শাহরিয়ারের ঘনিষ্ঠতা হয়। ওই সময়ে ঢাকার লেডিস ক্লাবে মেজর ডালিমের এক আত্মীয়ার বিয়েতে ডালিমের স্ত্রীসহ কয়েকজন লাঞ্ছিত হওয়ার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর ল্যান্সার ইউনিটের ও দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের কিছু অফিসার ও অন্যান্য র্যাঙ্কের কিছু সেনাসদস্য আওয়ামী লীগ নেতা গাজী গোলাম মোস্তফার বাড়ি আক্রমণ ও তছনছ করে। এ ঘটনার পর শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ডালিম, নূর চৌধুরীসহ কয়েকজনের চাকরি যায়। শাহরিয়ার চাকরি ছাড়ার পর ঢাকায় পুরনো টিভি-ফ্রিজ মেরামতের ব্যবসা শুরু করে। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘শেরী এন্টারপ্রাইজ’ ছিল মেজর ডালিম, মেজর নূর চৌধুরী, আজিজ পাশা, ক্যাপ্টেন বজলুল হুদার ওঠাবসার কেন্দ্র। সেখানে তারা আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও অন্য নেতৃবৃন্দের সমালোচনা করত। এ সময় দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারির মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ ভারতে প্রশিক্ষণ শেষ করে এর অধিনায়কের দায়িত্বে যোগদান করায় ডালিম একদিন তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। পুরো ঘটনা তাকে জানিয়ে প্রতিকারের জন্য সে সাহায্য কামনা করলে রশিদ তাকে সাহায্যের আশ্বাস দেয়।
অপরদিকে প্রথম বেঙ্গল ল্যান্সারের দায়িত্ব মেজর মোমিনের কাছে ছেড়ে দিতে হওয়ায় এবং তার অধীনে সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হওয়ায় সৈয়দ ফারুক রহমান ক্ষুব্ধ ছিল। ১৯৭৪ সালের শেষের দিকে অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীতে তার সঙ্গে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনায় সে আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর বীতশ্রদ্ধ ছিল। তার ওপর ডালিমের স্ত্রীকেন্দ্রিক ঘটনা-পাল্টা ঘটনায় ডালিম, নূরসহ কয়েকজনের চাকরিচ্যুতি ঘটে। তৎকালীন ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলোচনা চলত। একদিন তিনি ফারুককে বলেছিলেন, দেশ বাঁচানোর জন্য একটা কিছু করা দরকার।
তখন গুরুত্ব না দিলেও ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পর মেজর খন্দকার আবদুর রশিদের সঙ্গে দেশের অবস্থার পরিবর্তন সম্পর্কে পূর্ব আলোচনার সূত্রে তারা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে ভিত্তিতেই এপ্রিল মাসের এক রাতে ফারুক জিয়াউর রহমানের বাসায় গিয়ে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলাচনা করে পরামর্শ চায়। জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমি কী করতে পারি, তোমরা করতে পারলে কিছু কর। বিষয়টি রশিদকে জানানোর পর পলিটিক্যাল বিষয়টি সে দেখবে বলেছিল। রশিদ পরে আত্মীয়তার সুবাদে খন্দকার মোশতাক এবং জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। মেজর খন্দকার রশিদ ঢাকায় আসার পর আর্টিলারির দ্বিতীয় ফিল্ড রেজিমেন্টের একটি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মহিউদ্দিনের সঙ্গে সুযোগ পেলেই রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলত। ১৯৭৫ সালের মে মাসের মাঝামাঝি একদিন রেজিমেন্ট লাইনে মহিউদ্দিনকে পেয়ে সে তার প্রাইভেট গাড়িতে তাকে হোটেল শেরাটনের পাশে রমনা পার্কের সামনের রাস্তায় নিয়ে যায়। সেখানে ডালিম ও নূর আসে। চারজন পার্কে গিয়ে ঝোপের আড়ালে কথাবার্তা বলে। ১৩ আগস্ট রাত ১০টা সাড়ে ১০টার দিকে ডালিম এবং নূর শাহরিয়ার রশিদের ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে যায়। শাহরিয়ারকে তারা খন্দকার আবদুর রশিদের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে ডালিম ও রশিদের আলোচনাকালে রশিদ তাদের জানায়, ডোন্ট ওরি, ফারুকও সঙ্গে আছে। ১৪ আগস্ট বিকেলে খন্দকার আবদুর রশিদ ও নূর একটি কারে চড়ে শাহরিয়ারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে সঙ্গে নিয়ে খন্দকার মোশতাকের আগামসি লেনের বাড়িতে যায়। মোশতাককে পরদিন সকালে বাড়িতে থাকার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে তারা ফিরে যায়। শেরাটনের কাছে নূর ও শাহরিয়ার গাড়ি থেকে নামে; কিন্তু কথা হয় রাতে আবার দেখা হবে। বিকেল ৪টার দিকে ডালিমকে বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বাড়ির আশপাশে ঘুরতে দেখা যায়। রাত প্রায় ১০টা নাগাদ ডালিম, আজিজ পাশা, বজলুল হুদা এবং নূর চৌধুরী ক্যান্টনমেন্টে শাহরিয়ার রশিদের বাসায় যায়। সেখানে ডালিম তাদের জানায়, সে চিফ অব জেনারেল স্টাফের কাছ থেকে আসছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য আর্মি তলব করা হয়েছে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে আর্মি মুভ করবে। মুক্তিযোদ্ধা অফিসার হিসেবে সে তাদের সহযোগিতা চেয়েছে। এরপর সে মেজর রাশেদ চৌধুরীকে নিয়ে আসে। শাহরিয়ারের বাসায় খাওয়া-দাওয়ার পর তারা আলোচনায় বসে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ডিউটিতে অংশ নেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। সাব্যস্ত হয় মেজর রশিদের দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারির টেকনিক্যাল হেডকোয়ার্টারে রাত ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে তারা একত্রিত হবে। এই আর্টিলারিটি সে সময় নতুন বিমানবন্দর এলাকায় নাইট ট্রেনিংরত ছিল। এদিকে ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ কমান্ডিং অফিসার হিসেবে তার অফিসে অফিসারদের ডেকে রাতে নাইট ট্রেনিং হবে বলে জানিয়ে দেয়। রেজিমেন্টের সব ব্যাটারি, ফার্স্ট লাইন আর্টিলারি, ফার্স্ট লাইন স্মল আর্মসসহ গোলাবারুদ সন্ধ্যার আগে নতুন এয়ারপোর্টের কাছে বালুরঘাটে যাবে এবং বাকি সব অফিসার ও ফোর্স ইউনিট লাইনে হাজির থেকে সন্ধ্যায় মার্চ করে টঙ্গী রোড ধরে এয়ারপোর্ট যাবে বলে সে নির্দেশ দেয়। প্রত্যেক অফিসার ও জওয়ানকে তাদের ব্যক্তিগত হাতিয়ার সঙ্গে নিতে বলা হয়। রাত ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে একে একে দ্বিতীয় ফিল্ড রেজিমেন্টের অফিসার ও জওয়ানরা এয়ারপোর্টের রানওয়েতে জড়ো হয়। রাত ২টায় তাদের পাঠানো হয় বালুরঘাট পজিশনে। সেখানে উপস্থিত সেনাসদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সেনাবাহিনী বিদ্রোহ করেছে এবং দেশে সামরিক শাসন জারি হয়েছে। অপরদিকে পার্শ্ববর্তী ল্যান্সার হেডকোয়ার্টারে রাত ১টায় পেঁৗছায় ডালিম, রাশেদ চৌধুরী, হুদা, শাহরিয়ার, রশিদরা। সেখানে সমবেত এসব সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে ল্যান্সার ইউনিটের অস্ত্রাগার থেকে পোশাক ও অস্ত্র দেওয়া হয়। পশ্চিম পাশের খোলা জায়গায় ইউনিটের ট্যাঙ্কগুলো সারিবদ্ধ রাখা ছিল। ৩টায় সেখানে উপস্থিত হয় দ্বিতীয় ফিল্ড রেজিমেন্টের অফিসাররা। ম্যাপ হাঁটুতে রেখে ক্যাম্প টুলে বসে মেজর ফারুক এ সময় পাশে দাঁড়ানো মেজর খন্দকার আবদুর রশিদের সঙ্গে অপারেশনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করে। ল্যান্সারের অন্যান্য অফিসার, জেসিও এবং এনসিও পর্যায়ের কর্মকর্তারাও সেখানে সমবেত ছিল। এ সময় মেজর মহিউদ্দিনের প্রশ্ন তোলায় পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে ফারুক সবাইকে উত্তেজিত করতে একটি বক্তৃতা দেয়। একইসঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী উপস্থিত অফিসারদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়। সে বলে, শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাসঘাতকতা করে দেশে বাকশাল কায়েম করেছেন। সেনাবাহিনীর পাল্টা রক্ষীবাহিনী গঠন করেছেন। চারটি বাদে সব খবরের কাগজ বন্ধ করে দিয়েছেন। গভর্নর নিয়োগ করেছেন। তিনি রাজতন্ত্র কায়েম করছেন। আমরা রাজতন্ত্র সমর্থন করতে পারি না। আর এসব করতে গিয়ে তিনি সেনাবাহিনীর বাজেট কমিয়ে দিয়েছেন। আর্মি বোধহয় থাকবে না। ডিসব্যান্ড হয়ে যাবে। বাংলাদেশে সরকার বদলানোর আর কোনো পথ নেই। চাবি একজন, শেখ মুজিব। তাকে দিয়ে ‘প্রক্লামেশন’ করিয়ে যদি ‘চেঞ্জ’ করা যায়। সে যদি রাজি না হয়, যদি ‘রেজিস্টান্স’ হয়, দেশ বাঁচবে না। আমরা কেউ ‘সার্ভাইভ’ করব না। কাজেই তাকে ‘এক্সিকিউট’ করা লাগবে। পলিটিক্যাল পরিবর্তন যেটা সেটা মেজর রশিদ ‘ডিল’ করবে। খন্দকার মোশতাককে রাষ্ট্রপতি করে রাষ্ট্র চালানো হবে।
অপারেশন পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে মেইন অপারেশনের দায়িত্ব মেজর ডালিমকে নিতে বলা হলে মাত্র কয়েকদিন আগে সেখানে সে কর্মরত ছিল বলে অসম্মতি জানায়। পরে দায়িত্ব দেওয়া হয় আর্টিলারির মেজর মহিউদ্দিনকে। বঙ্গবন্ধু যাতে পালাতে না পারেন বা বাইরে থেকে তাকে কেউ উদ্ধার করতে না পারেন, তাই পুরো এলাকা সিল করে দিয়ে সরাসরি কথা বলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আসতে বলা হয়। কিন্তু বাধা এলে বা আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ হলে নিচে এনে ‘এক্সিকিউট’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাদের সাপোর্ট দিতে আর্টিলারি ট্যাঙ্ক রাখা হয়। রক্ষীবাহিনী বা অপর কোনো পাল্টা আক্রমণ প্রতিহত করতে ফিল্ড রেজিমেন্টকে বিভিন্ন কৌশলগত অবস্থানে মোতায়েন করা হয়। এ সময় ডালিম জানায়, প্রেসিডেন্টের বাড়িতে প্রথম ফিল্ড রেজিমেন্ট থেকে গার্ড রয়েছে। তারা মহিউদ্দিনকে বাধা দিতে পারে। বজলুল হুদা এর আগে প্রথম ফিল্ড রেজিমেন্টের অ্যাডজুট্যান্ট ছিল বলে সে তাদের ম্যানেজ করতে পারবে ভেবে হুদা, নূর চৌধুরী এবং মেজর মহিউদ্দিনকে একসঙ্গে মূল অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেজর রশিদ দায়িত্ব নেয় জেনারেল জিয়া ও খন্দকার মোশতাক আহমদসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের। ফারুকের দায়িত্বে থাকে ট্যাঙ্ক। রাশেদ চৌধুরী ও শাহরিয়াররা থাকে ডালিমের সঙ্গে। তাদের বলা হয় ডালিম যাবে রেডিও বাংলাদেশে, মেজর শাহরিয়ার, মেজর রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন মোস্তফা এবং ক্যাপ্টেন মাজেদ মিন্টো রোডে আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে ফোর্স মোতায়েন করবে। সেখানে কাজ শেষ করে শাহরিয়ার রেডিও বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে ক্যাপ্টেন মোস্তফাকে আগামসি লেনে খন্দকার মোশতাকের বাড়ি পাহারায় এবেং রিসালদার মোসলেম উদ্দিনকে একজন অফিসারসহ শেখ মণির বাড়িতে পাঠাতে ফারুক নির্দেশ দেয়। মেজর আজিজ পাশাকে পিলখানার বিডিআরদের নড়াচড়া দেখলে সেদিকে অগ্রসর হওয়ার দায়িত্ব দিয়ে ফারুক নিজে অবশিষ্ট ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট ও সৈন্যদের নিয়ে রক্ষীবাহিনী সামলে দেবে বলে ঘোষণা করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভোর ৪টায় তাদের যাত্রা শুরু হয়।
নারকীয় হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী চার সাক্ষীর বর্ণনায় ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড
মামলায় বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী চার সাক্ষীর বর্ণনা থেকে সেদিনের চিত্র বেরিয়ে এসেছে। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু টেলিফোনে তার পিএ মুহিতুল ইসলামকে বলেন,
সেরনিয়াবাতের বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করেছে জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে লাগা
কিন্তু চেষ্টা করেও লাইন না পেলে বঙ্গবন্ধু নিজেই দোতলা থেকে নিচে পিএ মুহিতুলের অফিস কক্ষে নেমে আসেন। পুলিশ কন্ট্রোল রুম না পেয়ে তিনি সেখান থেকে গণভবন এক্সচেঞ্জে নিজেই রিসিভার নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। পৌনে ৫টার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দক্ষিণ দিক থেকে লাগাতার গুলি আসতে থাকে। বঙ্গবন্ধু টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন। কিছু সময় পর গুলি বন্ধ হলে কাজের ছেলে সেলিম ওরফে আবদুল দোতলা থেকে বঙ্গবন্ধুর চশমা ও পাঞ্জাবি নিয়ে আসে। সেখানে দাঁড়িয়েই সেগুলো পরে তিনি বারান্দায় গিয়ে বলেন, ‘এত আর্মি পুলিশ সেন্ট্রি, এত গুলি হলো তোমরা কী কর’ বলে তিনি দোতলায় চলে যান। শেখ কামাল ওপর থেকে নেমে বাড়ির আর্মি ও পুলিশদের তার সঙ্গে আসতে বলে বারান্দায় এগিয়ে যান। কিন্তু গুলি বন্ধ হওয়ার পর কালো ও খাকি পোশাক পরা কিছু সৈনিক হ্যান্ডস আপ হ্যান্ডস আপ বলতে বলতে দৌড়ে আসে। তারা গেট দিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তাদের মধ্য থেকে বজলুল হুদা বারান্দায় দাঁড়ানো শেখ কামালের পায়ে গুলি করে। তিনি এ সময় ‘আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল’ বলার সঙ্গে সঙ্গে তাকে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করা হয়। একটি গুলি বাড়িতে কর্তব্যরত ডিএসপি নজরুল ইসলামের গায়ে লাগে। বজলুল হুদা ও নূর বাড়ির কাজের লোক এবং পুলিশদের গেটের সামনে লাইন করে দাঁড় করায়। সেখানে একজন এসবি অফিসারকে একজন আর্মি গুলি করে মারে। ল্যান্সার মেজর মহিউদ্দিন গুলি করতে করতে ফোর্স নিয়ে দোতলায় উঠে যায়। বঙ্গবন্ধুকে এ সময় তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে তারা তাকে ঘিরে ফেলে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়। একই সময় বজলুল হুদা ও মেজর নূর কয়েকজন ফোর্স নিয়ে মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী বাড়ির গার্ড বাহিনীর হাবিলদার কুদ্দুস শিকদারকে তাদের সঙ্গে আসার নির্দেশ দিয়ে দোতলায় উঠছিল। সিঁড়ি দিয়ে দু’এক ধাপ নামার মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু তাকে ঘিরে রাখা আর্মিদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোরা কী চাস, কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?’ নিচের দিক থেকে ওপরে উঠে আসার মাঝের র্যান্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে মেজর নূর ইংরেজিতে কিছু একটা বলে। মেজর মহিউদ্দিন ও তার সঙ্গের ফোর্সরা একপাশে সরে যায়। বঙ্গবন্ধু আবারও প্রশ্ন করেন, ‘তোরা কী চাস’? সঙ্গে সঙ্গে হুদা তার পাশের কারও কাছ থেকে একটি স্টেনগান নিয়ে এবং নূর তার হাতের স্টেনগান দিয়ে একসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। সিঁড়িতেই লুটিয়ে পড়েন জাতির জনক। তখন তার পরনে ছিল লুঙ্গি, গায়ে পাঞ্জাবি, এক হাতে সিগারেটের পাইপ, অন্য হাতে দিয়াশলাই। এরপর মেজর মহিউদ্দিন, মেজর নূর, মেজর বজলুল হুদাসহ সবাই নেমে দক্ষিণ দিকের গেট দিয়ে বাইরের রাস্তায় চলে যায়। কিন্তু এর পরপরই মেজর আজিজ পাশা, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ল্যান্সারের ও দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারির সৈন্যদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে প্রবেশ করে। আজিজ পাশা বঙ্গবন্ধুর কক্ষের দরজা খুলতে বলে, কিন্তু ভেতর থেকে না খোলায় দরজায় গুলি করা হয়। বেগম মুজিব দরজা খুলে কক্ষে থাকা পরিবারের অন্যদের না মারার জন্য কাকুতি-মিনতি করেন। কিন্তু একদল ফোর্স বেগম মুজিব, শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী বাড়ির চাকর রমাকে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসে। বেগম মুজিব সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মারলে সেখানেই মারতে বলে তিনি আর অগ্রসর হতে না চাওয়ায় অন্যদের নিচে নেওয়া হলেও তাকে আবার রুমে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। আজিজ পাশা সেখানে রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের হাতের স্টেনগান নিয়ে রুমের সবাইকে গুলি করে। সেখানে ছিলেন বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজি এবং শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা।
দোতলা থেকে নামিয়ে শেখ নাসের ও রাসেলকে অন্যদের সঙ্গে লাইনে দাঁড় করানো হয়। এ সময় নাসের বলেন, ‘স্যার আমি তো রাজনীতি করি না, কোনোরকম ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই।’ পাহারারত একজন আর্মি অপর একজনকে এর জবাবে বলে, শেখ মুজিব ‘বেটার দ্যান’ শেখ নাসের। ঠিক আছে, আপনি ওই রুমে গিয়ে বসেন, বলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রিসিপশন রুমে এবং রুমের বাথরুমে নিয়ে তাকে গুলি করা হয়। শেখ নাসের পানি পানি বলে চিৎকার করতে থাকলে গুলি করে ফিরে আসা আর্মিটি অপর একজনকে বলে, পানি দিয়ে আয়। দ্বিতীয়জন গিয়ে তাকে আবারও গুলি করে।
মামলার বাদী মুহিতুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে ভয়ার্ত শিশু শেখ রাসেল লাইনে দাঁড়িয়ে বলেছিল_ ‘ভাইয়া আমাকে মারবে না তো?’ মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করছিল রাসেল। শিশু রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য ল্যান্সারের একজন হাবিলদারকে হুকুম দেয় আজিজ পাশা। তাকে দোতলায় নিয়ে মায়ের লাশের কাছে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘাতক আর্মিটি ফিরে এসে পাশাকে জানায়, স্যার সব শেষ। এর কিছু সময় পর একটা ট্যাঙ্কে মেজর ফারুক বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গেটে আসে। সেখানে আজিজ পাশা, নূর চৌধুরী, মহিউদ্দিন ও বজলুল হুদা তার সঙ্গে কথা বলে। ফারুক ট্যাঙ্ক নিয়ে ফিরে যাওয়ার পরপর একটি লাল কারে করে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আনা হয় কর্নেল জামিলের লাশ।
আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে হত্যাযজ্ঞ শেষ করে শাহরিয়ার এসে ডালিমের সঙ্গে রেডিও স্টেশনে যোগ দেয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর ঘোষণা দিতে থাকে ডালিম। রেডিও স্টেশনের সার্বিক দায়িত্বে থাকে শাহরিয়ার। সেখানে আনা হয় মোশতাককে। আসে তাহেরউদ্দিন ঠাকুর। তিন বাহিনীর তিন প্রধানকে হাজির করে আনুগত্যের ঘোষণা দেওয়া হয়। তাহের ঠাকুর রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোশতাকের ভাষণ তৈরি করে রেকর্ড করায়। ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা ছিল পৃথক তারা সবাই একত্রিত হয় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে। সেখানে সর্বেসর্বা ছিল ঘাতককুলের শিরোমণি সেনা অফিসাররা। যাদের কিছুসংখ্যককে পরবর্তী সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরিতে আত্তীকরণ করা হয়। এরা হলো তৎকালীন মেজর শরিফুল হক ডালিম, মেজর আবদুল আজিজ পাশা, মেজর একেএম মহিউদ্দিন আহাম্মদ, মেজর বজলুল হুদা, লে. ক. এএম রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন কিসমত হাশেম, আবদুল মাজেদ, ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসার, লে. ক. সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. ক. এসএইচ নূর চৌধুরী এবং মেজর আহম্মদ শারফুল হোসেন। তৎকালীন চিফ অব আর্মি স্টাফের অনুরোধে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আত্তীকরণ করে বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে রাখা হয়েছিল।
হাবিলদার (অব.) কুদ্দুস সিকদার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের চার নম্বর সাক্ষী। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তাঁর দেওয়া সাক্ষ্য ১৯৯৭ সালের ২৮ জুলাই গৃহীত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি তত্কালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর বাড়িতে কর্তব্যরত ছিলেন। তাঁর জবানবন্দি নিচে তুলে ধরা হলো:
আমার নাম: হাবিলদার (অব.) মো. কুদ্দুস সিকদার
আমার পিতার নাম: গোলাম মুক্তার সিকদার
গ্রাম-পবলবেগ, পুলিশ স্টেশন-আলফাডাঙ্গা, জেলা-ফরিদপুর
বর্তমান ঠিকানা-বাড়ি নং-৩, বাইশ টেকী, ১৩নং সেকশন, মিরপুর, ঢাকা।
যথাসময়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আমরা পৌঁছাইয়া আমি ও আমার সঙ্গীয় গার্ডরা বিউগলের সুরে সুরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করিতে থাকি। এই সময় বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দক্ষিণে লেকের দিক হইতে লাগাতার গুলি আসিতে থাকে। তখন আমি এবং আমার গার্ডসহ দেওয়ালের আড়ালে লাইন পজিশনে যাই। গুলি বন্ধ হওয়ার পর পাল্টা গুলি করার জন্য আমার পূর্ববর্তী গার্ড কমান্ডারের নিকট গুলি খোঁজাখুঁজি করিতে থাকি। এই সময় কালো ও খাকি পোশাকধারী সৈনিক হ্যান্ডস আপ বলিতে বলিতে গেটের মধ্য দিয়া বাড়িতে ঢোকে। তখন ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা, মেজর নূর ও মেজর মহিউদ্দিনকে (ল্যান্সারের) গেইটে দেখি। তারপর ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা ও মেজর নূর বঙ্গবন্ধুর বাড়ির বারান্দায় আসিয়া সেখানে কামালকে দাঁড়ানো দেখিয়াই ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা হাতের স্টেনগান দ্বারা শেখ কামালকে গুলি করে। শেখ কামাল গুলি খাইয়া রিসিপশন রুমে পড়িয়া যায়। ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা পুনরায় শেখ কামালকে গুলি করিয়া হত্যা করে। ইহার পর ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা ও মেজর নূর বাড়ির পুলিশের ও কাজের লোকদের গেটের সামনে লাইনে দাঁড় করায়। ইহার পর মেজর মহিউদ্দিন তাহার ল্যান্সারের ফোর্স লইয়া গুলি করিতে করিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দোতলার দিকে যায়। তারপর ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা ও মেজর নূর কয়েকজন ফোর্স লইয়া বাড়ির বারেন্দা দিয়া দোতলার দিকে যায়। এই সময় আমাদেরকেও তাহাদের সাথে যাইতে হুকুম দিলে আমি তাহাদের পিছনে পিছনে যাই। ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা ও মেজর নূর সিঁড়ি দিয়া চৌকির (Slap) উপরে গেলে মেজর মুহিউদ্দিন ও তাহার সঙ্গীয় ফোর্স বঙ্গবন্ধুকে নিচের দিকে নামাইয়া আনিতে দেখি। আমি ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা ও মেজর নূরের পিছনে দাঁড়ানো ছিলাম। এই সময় মেজর নূর ইংরেজিতে কি যেন বলিলেন। তখন মুহিউদ্দিন ও তাহার ফোর্স এক পাশে চলিয়া যায়। এই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন ‘তোরা কি চাস’ । এর পরই ক্যাপ্টেন হুদা ও মেজর নূর হাতের স্টেনগান দ্বারা বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু সিঁড়ির মধ্যে পড়িয়া মৃত্যুবরণ করেন। তখন বঙ্গবন্ধুর পরনে একটা লুঙ্গি, গায়ে পাঞ্জাবি, একহাতে সিগারেটের পাইপ, অন্য হাতে দিয়াশলাই ছিল। অতঃপর মেজর মুহিউদ্দিন, মেজর নূর, ক্যাপ্টেন বজলুল হুদাসহ সবাই নিচে নামিয়া আসিয়া দক্ষিণ দিকে গেটের বাহিরে রাস্তায় চলিয়া যায়। কিছুক্ষণ পর মেজর আজিজ পাশা, রিসালদার মোসলেউদ্দিন ও ল্যান্সারের ফোর্স এবং টু-ফিল্ড আর্টিলারির ফোর্স গেটের সামনে আসে। তার পর মেজর আজিজ পাশা তাহার ফোর্স লইয়া গেটের মধ্যে দিয়া বাড়ির দোতলার দিকে যাইতে থাকে। আমিও তাহাদের পিছনে পিছনে যাই। সিঁড়ি দিয়া দোতলায় যাইবার পর দোতলায় সুবেদার মেজর আবদুল ওয়াহাব জোয়ারদারকে দেখি। তারপর মেজর আজিজ পাশা তার ফোর্সসহ দোতলায় বঙ্গবন্ধুর রুমের দরজা খোলার জন্য বলে। দরজা না খুলিলে দরজায় গুলি করে। তখন বেগম মুজিব দরজা খুলিয়া দেয়। দরজা খুলিয়া বেগম মুজিব রুমের ভিতরে থাকা লোকদের না মারার জন্য কাকুতিমিনতি করেন। কিন্তু তাহার কথা না রাখিয়া একদল ফোর্স রুম হইতে বেগম মুজিব, শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও একজন বাড়ির চাকরকে রুম হইতে বাহির করিয়া নিয়া আসে। বেগম মুজিব সিঁড়ির নিকট আসিয়া শেখ মুজিবের লাশ দেখিয়া কান্নায় ভাঙ্গিয়া পড়েন। এরপর বেগম মুজিবকে পুনরায় বঙ্গবন্ধুর বেড রুমে নিয়া যায়। অতঃপর শেখ নাসের, শেখ রাসেল ও চাকরকে নিচে নামাইয়া নিয়া যায়। মেজর আজিজ পাশা, রিসালদার মুসলেমুদ্দিন হাতের স্টেনগান দ্বারা বঙ্গবন্ধুর বেডরুমে থাকা সবাইকে গুলি করে। সেখানে বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ জামালের ও শেখ কামালের স্ত্রী ছিল। তাহারা গুলি খাইয়া মৃত্যুবরণ করেন। তাহার পর তাহারা নিচে চলিয়া আসে। আমিও তাহাদের পিছনে চলিয়া আসিয়া রিসিপশনের বাথরুমের মধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শেখ নাসেরের লাশ দেখি। এরপর গেটের সামনে লাইনে সাদা পোশাক পরিহিত একজন পুলিশের লাশ দেখি। তারপর মেজর আজিজ পাশা গেটের বাহিরে গিয়া ওয়্যারলেসে কথাবার্তা বলে। কথা বলিয়া গেটের সামনে আসে। তখন শেখ রাসেল তাহার মায়ের কাছে যাইবে বলিয়া কান্নাকাটি করিতেছিল। মেজর আজিজ পাশা ল্যান্সারের একজন হাবিলদারকে হুকুম দিলেন, “শেখ রাসেলকে তাহার মায়ের কাছে নিয়া যাও।” ঐ হাবিলদার শেখ রাসেলের হাত ধরিয়া দোতলায় নিয়া যায়। কিছুক্ষণ পর দোতলায় গুলির আওয়াজ ও কান্নাকাটির চিত্কার শুনিতে পাই। তারপর ঐ হাবিলদার নিচে গেটের কাছে আসিয়া মেজর আজিজ পাশাকে (বলে),‘ স্যার সব শেষ!’ এরপর গেটের সামনে একটা ট্যাংক আসে। মেজর ফারুক সাহেব ঐ ট্যাংক হইতে নামিলে মেজর আজিজ পাশা, মেজর নূর, মেজর মহিউদ্দিন, ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা তাহার সহিত কথাবার্তা বলেন। তারপর মেজর ফারুক ট্যাংক নিয়া চলিয়া যান। কিছুক্ষণ পর একটা লাল কারে করিয়া কর্নেল জামিলের লাশ বঙ্গবন্ধুর বাড়ির ভেতর নিয়া যায়। একই সময় দোতলায় কিছু ভাঙ্গাচুরার শব্দ শুনিতে পাই। তখন বাড়ির উত্তর পাশের সিঁড়ি দিয়া দোতলায় উঠিয়া বঙ্গবন্ধুর বেড রুমে যাই। সেখানে বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ জামালের স্ত্রী এবং শেখ কামালের স্ত্রীর লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় দেখি। একই রুমে শেখ রাসেলের চোখ ও মাথার মগজ বাহির হওয়া অবস্থায় তাহার লাশ দেখি। তখন রুমের মধ্যে ফোর্সদের মালামাল তছনছ করিতে দেখি এবং মূল্যবান মালামাল তাহাদের কাঁধের ব্যাগে ঢুকাইতে দেখি।
একই সময় সুবেদার আবদুল ওয়াহাব জোয়ারদার সাহেবকে রুমের ভিতর আলমারি হইতে একটি ব্রিফকেস বাহির করিয়া উহাতে কিছু স্বর্ণালংকার ও কিছু বিদেশি মুদ্রা ঢুকাইতে দেখি। রুমের ভিতর থাকা ফোর্স একটা ব্রিফকেস, একটা রেডিও, একটা টেলিভিশন নিয়া নিচে নামিয়া রাস্তার ধারে একটা জিপ গাড়িতে রাখে।
কিছুক্ষণ পর মেজর ফারুক সাহেব ও মেজর শরিফুল হক ডালিম সাহেব গেটের সামনে আসে। তখন মেজর নূর, মেজর আজিজ পাশা, মেজর মুহিউদ্দিন, ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা ও সুবেদার মেজর আবদুল ওয়াহাব জোয়ারদারও গেটের সামনে উপস্থিত ছিলেন। মেজর ফারুক সাহেব এখন কাঠগড়ায় আছেন (সঠিকভাবে শনাক্ত)। মেজর ফারুক সাহেব ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা ও সুবেদার মেজর আবদুল ওহাব সাহেবকে কাছে ডাকেন। (কাছে ডাকিয়া মেজর ফারুক সাহেব ক্যাপ্টেন বজলুল হুদার কাঁধে স্টার খুলিয়া সুবেদার মেজর আবদুল ওয়াহাব সাহেবের হাতে দেন। এরপর মেজর ফারুক সাহেব সুবেদার মেজর জোয়ারদারের কাঁধের শাপলা খুলিয়া কাঁধে পরাইয়া দেন। ইহার পর মেজর ফারুক সাহেব তাহাকে মেজর হুদা বলিয়া সম্বোধন করিলেন। ইহার পর মেজর ফারুক সাহেব সুবেদার মেজর আবদুল ওয়াহাব জোয়ারদার সাহেবের কাঁধে স্টার লাগাইয়া তাহাকে লেফটেন্যান্ট ডাকিলেন। তারপর সেখান হইতে সব অফিসার চলিয়া যায়।)
যাওয়ার সময় মেজর হুদা আমাকে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে পড়ে থাকা লাশ রক্ষণাবেক্ষণসহ গোটা বাড়ির দায়িত্ব দিয়া যান। আমিসহ ৮ জন ঐ বাড়িতে ডিউটিতে থাকি। জুমার নামাজের পূর্বে ক্যাপ্টেন আবুল বাশার সাহেবকে গেটের সামনে দেখি। ঐ দিন গিয়া রাত্রে মেজর হুদাকে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে দেখি। তিনি আমাকে মোহাম্মদপুর শের শাহ রোডের একটি কাঠের আড়তে নিয়া যায়। সেখানে মেজর বজলুল হুদা কাঠের দোকানদারকে ১০টি লাশের কাঠের বাক্স বানাইয়া দিবার জন্য বলে এবং বাক্সগুলি বঙ্গবন্ধুর ৩২নং রোডস্থ বাড়িতে পৌঁছাইয়া দিতে বলে। সেখান হইতে মেজর বজলুল হুদা আমাকে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে নামাইয়া দিয়া চলিয়া যান। ১৫ই আগস্ট দিবাগত শেষ রাত্রে কাঠের আড়তদার ঠেলা গাড়িতে করিয়া লাশের জন্য ১০টি কাঠের বাক্স নিয়া আসে। ফজরের আজানের পরে মেজর বজলুল হুদা আর্মির Supply transport company-র ফোর্সসহ একটি গাড়িতে করিয়া বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আসে। মেজর বজলুল হুদা, বঙ্গবন্ধুর লাশ বাদে বাকি লাশগুলি (৯টি) ঐ গাড়িতে করিয়া নিয়া যায়। ১৬ই আগস্ট সকাল অনুমান ৯/১০টার দিকে একটি পিকআপে করিয়া মেজর বজলুল হুদা সাহেব বঙ্গবন্ধুর লাশ বিমানবন্দরে নিয়া যায়। ইহার পর একজন জেসিও এবং ৮/১০ জন সৈনিক বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আসে। তাহারা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ করিয়া তালা লাগায়। ইহার পর তাহারা চলিয়া যায়। ১৭ই আগস্ট অনুমান সকাল ১০টার সময় আমাদের বদলি গার্ড আসে। আমি তাহাদিগকে চার্জ বুঝাইয়া দিয়া আমার সঙ্গীয় গার্ড লইয়া গণভবনে চলিয়া যাই। পরের দিন অর্থাত্ ১৮ই আগস্ট দিবাগত রাতে ঢাকা হইতে ওয়ান ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টে যোগদানের জন্য ক্যাপ্টেন আবুল বাশারসহ পুরা গার্ড কুমিল্লা চলিয়া যাই।
মেজর বজলুল হুদা যে ৯টি লাশ নেয় তন্মধ্যে কর্নেল জামিল, শেখ নাসের, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী, বেগম মুজিবের লাশ ও একজন পুলিশ অফিসারের লাশ ছিল।
আর্মিতে ৯টা কোর আছে। আমি আর্টিলারি কোরে ছিলাম। আরমারি কোর নামেও একটি কোর আছে। তাহাদের কালো ওভার আল কমবিনেশনের পোশাক ছিল। আর্টিলারিদের খাকি পোশাক ছিল। আরমার অথবা ল্যান্সার একই কোর।
সুবেদার মেজর ওয়াহাব জোয়ারদার সাহেব আমার অফিসার ছিলেন। তাহাকে আমি চিনি। তিনি এখন কাঠগড়ায় আছেন (সঠিকভাবে শনাক্ত)। লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় সেলিমের হাতে এবং পেটে দুইটি গুলির জখম দেখিলাম। ইহার পর দেখিলাম কালো পোশাক পরিহিত আর্মিরা আমাদের বাসার সব জিনিসপত্র লুট করিয়া নিয়া যাইতেছে। তখন ডিএসপি নুরুল ইসলাম এবং পিএ/রিসেপশনিস্ট মুহিতুল ইসলামকে আহত দেখি। এরপর আমাদের বাসার সামনে একটা ট্যাংক আসে। ট্যাংক হইতে কয়েকজন আর্মি নামিয়া ভিতরের আর্মিদের লক্ষ করিয়া জিজ্ঞাসা করে ভিতরে কে আছে । উত্তরে ভিতরের আর্মিরা বলে ‘All are Finished’। অনুমান ১২টার দিকে আমাকে ছাড়িয়া দিবার পর আমি প্রাণভয়ে আমার গ্রামের বাড়ি টুঙ্গীপাড়া চলিয়া যাই। আমি তদন্তকারী অফিসারের কাছে জবানবন্দি করিয়াছি।
(বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পেপারবুক থেকে সংগৃহীত)
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনসহ তিনটি বাড়িতে সংঘটিত খুনিদের এমন নারকীয় পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের এমন ভয়াল বীভৎসতার হৃদয় স্পর্শী বর্ণনা দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর আলাউদ্দিন আহমেদ পিএসসি। তার বর্ণনায় তিনি ব্যক্ত করেন এইভাবে-
কী বীভৎসতা! রক্ত, মগজ ও হাড়ের গুঁড়ো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল প্রতিটি তলার দেয়াল, জানালার কাচ, মেঝে ও ছাদে। রীতিমতো রক্তগঙ্গা বইছে যেন ওই বাড়িতে। গুলির আঘাতে দেয়ালগুলোও ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। চারপাশে রক্তের সাগরের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ঘরের জিনিসপত্র। প্রথম তলার সিঁড়ির মাঝখানে নিথর পড়ে আছেন ঘাতকের বুলেটে ঝাঁঝরা হওয়া চেক লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরা স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু লাশ। তলপেট ও বুক ছিল বুলেটে ঝাঁঝরা। নিথর দেহের পাশেই তাঁর ভাঙ্গা চশমা ও অতিপ্রিয় তামাকের পাইপটি। অভ্যর্থনা কৰে শেখ কামাল, টেলিফোন অপারেটর, মূল বেডরুমের সামনে বেগম মুজিব, বেডরুমে সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজী জামাল, নিচতলার সিঁড়ি সংলগ্ন বাথরুমে শেখ নাসের এবং মূল বেডরুমে দুই ভাবির ঠিক মাঝখানে বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলের লাশ।
নৃশংসভাবে নিহত ১৮ জনের লাশ তিনটি বাড়ি ও হাসপাতালের মর্গ থেকে সংগ্রহ করে সেগুলো দাফন করার এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্কালীন মেজর আলাউদ্দিন আহমেদ পিএসসি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তত্কালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর ঘটনাস্থল ধানমন্ডির বাড়িসহ আরও দুটি বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। আগ্নেয়াস্ত্রের বুলেটে ক্ষতবিক্ষত লাশ এবং সেগুলো দাফন করার দায়িত্ব পালন করে সে সময়ের ঢাকা সেনানিবাসের স্টেশন হেডকোয়ার্টারে কর্মরত স্টাফ অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ একটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছিলেন নিজের দপ্তরে। এ ঘটনায় আবেগতাড়িত হয়ে পরে ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি কবিতাও লিখেছিলেন তিনি। কবিতাটির শিরোনাম ছিল ‘একটি কালো রাত’।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা সম্পর্কে মেজর আলাউদ্দিনের একটি স্মৃতিচারণা এর আগে একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম আলো এবার সংগ্রহ করেছে তাঁর আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনটি। হূদয়স্পর্শী ভাষায় ইংরেজিতে লিখিত সেই প্রতিবেদনের বাংলা অনুবাদ এখানে প্রকাশিত হলো:

১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এর ঘটনায় নিহতদের অবস্থা ও দাফন-কাফন:
১৯৭৫-এর ১৬ আগস্ট রাত তিনটায় ঢাকা সেনানিবাসের স্টেশন কমান্ডারের আদেশে আমি প্রয়াত শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি যাই। স্টেশন কমান্ডার আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন। মেজর বজলুল হুদা ও তাঁর লোকজন পাহারা দিচ্ছিলেন বাড়িটি। হুদা আমাকে প্রথমে বাধা দিলেও পরে ঢোকার অনুমতি দেন।
এক. সড়ক নম্বর ৩২, শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি: সবগুলো লাশ সিঁড়ির গোড়ায় আনা হলো। রাখা হলো কাঠের কফিনে। বরফ আনা হয়েছিল। রক্ত, মগজ ও হাড়ের গুঁড়ো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল প্রথম তলার দেয়াল, জানালার কাচ, মেঝে ও ছাদে। বাড়ির সব বাসিন্দাকেই খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলির আঘাতে দেয়ালগুলোও ঝাঁঝরা হয়ে যায়। খোসাগুলো মেঝেতে পড়া ছিল। কয়েকটি জানালার কাচ ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ঘরের জিনিসপত্র, গিফটবক্স ও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিয়েগুলোর উপহারের প্যাকেট। পবিত্র কোরআন শরিফও মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখলাম।
ক. শেখ মুজিবের বাড়িতে নয়জনকে হত্যা করা হয়েছিল। লাশগুলো (প্রদত্ত রিপোর্ট মতে) যে অবস্থায় পাওয়া যায়:
১. শেখ মুজিব: প্রথম তলার সিঁড়ির মাঝখানটায় যে সমতল অংশটি তার তিন-চার ধাপ ওপরে। চশমার ভাঙা কাচ ও একটি পাইপ সিঁড়িতে পড়ে ছিল।
২. শেখ কামাল: অভ্যর্থনা কক্ষে
৩. টেলিফোন অপারেটর: অভ্যর্থনা কক্ষে
৪. শেখ নাসের: নিচতলার সিঁড়িসংলগ্ন বাথরুমে
৫. বেগম মুজিব: মূল বেডরুমের সামনে
৬. সুলতানা কামাল: মূল বেডরুমে
৭. শেখ জামাল: মূল বেডরুমে
৮. রোজী জামাল: মূল বেডরুমে
৯. শিশু রাসেল: মূল বেডরুমে, তার দুই ভাবির মাঝখানে
দুই. বাড়ির সব বাসিন্দাকেই খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁদের সবাই তাত্ক্ষণিকভাবে প্রাণ হারান।
শেখ মুজিব: প্রথম তলার সিঁড়ির মাঝখানে যে সমতল জায়গাটা তার তিন-চার ধাপ ওপরে একেবারে কাছ থেকে গুলি করে শেখ মুজিবকে খুন করা হয়। তাঁর তলপেট ও বুক ছিল বুলেটে ঝাঁজরা। শেখ মুজিব সব সময় চশমা পরতেন এবং তাঁর ধূমপানের অভ্যাস ছিল। তাঁর চশমা ও তামাকের পাইপটি সিঁড়িতে পড়া ছিল। পরনে চেক লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি। চশমার একটি গ্লাস ভাঙা। রক্তে পাঞ্জাবির রং ছিল গাঢ় লাল। একটি বুলেট তাঁর ডান হাতের তর্জনীতে গিয়ে লাগে এবং আঙুলটি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
শেখ কামাল: কামালের বুক ও তলপেটে তিন থেকে চারটি বুলেট বিদ্ধ হয়। তাঁর পরনে ছিল ট্রাউজার। নিচতলায় তাঁকে খুন করা হয়।
টেলিফোন অপারেটর: তাঁকে নিচতলায় খুন করা হয়।
শেখ নাসের: শেখ নাসেরকে খুন করা হয় বাথরুমের কাছে। তাঁর হাত উড়ে গিয়েছিল। গুলিতে তাঁর দেহের বেশ কিছু স্থান ছিল ক্ষতবিক্ষত। তাঁর গায়ে কোনো পোশাক ছিল না। এবং লাশ বিছানার চাদরে মোড়ানো ছিল।বেগম মুজিব: বেগম মুজিবকে বুকে ও মুখমণ্ডলে গুলি করা হয়। তাঁর পরনে ছিল সুতি শাড়ি এবং কালো রঙের ব্লাউজ। গলায় মাদুলি বাঁধা একটি সোনার নেকলেস। কনিষ্ঠা আঙুলে ছোট্ট একটি আংটি। তখনো তাঁর পায়ে ছিল একটি বাথরুম স্লিপার!
সুলতানা কামাল: সুলতানা কামালের বুক ও তলপেটে গুলি লাগে। পরনে ছিল শাড়ি ও ব্লাউজ।
শেখ জামাল: শেখ জামালের মাথা চিবুকের নিচ থেকে উড়ে গিয়েছিল। পরনে ট্রাউজার। ডান হাতের মধ্যমায় ছিল একটি মুক্তার আংটি। সম্ভবত এটি ছিল তাঁর বিয়ের আংটি।
রোজী জামাল: তাঁর মুখটি দেখাচ্ছিল বিবর্ণ, মলিন। মাথার একাংশ উড়ে গিয়েছিল। তাঁর তলপেট, বুক ও মাথায় গুলি করা হয়। পরনে ছিল শাড়ি ও ব্লাউজ।
শিশু রাসেল: সম্ভবত আগুনে তার পা ঝলসে যায়। মাথা উড়ে গিয়েছিল। পরনে ছিল হাফপ্যান্ট। লাশ একটি লুঙ্গিতে মোড়ানো ছিল।
তিন. মেঝেতে ছড়ানো-ছিটানো ছিল সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জামাল ও কামালের বিয়ের অনেক উপহারসামগ্রী এবং গিফট প্যাকেট। কিছু বাক্স ছিল ফাঁকা। কামালের কক্ষে রুপার তৈরি অনেক জিনিসপত্র দেখা যায়। সিঁড়িতে ছিল আল্পনা আঁকা। অভ্যর্থনা কক্ষটি ছিল নোংরা। আমি ওপরতলা থেকে শুনলাম নিচতলায় হুদা চিত্কার করছেন। তিনি এ বাড়ি থেকে কিছু জিনিসপত্র চুরি করায় কয়েকজন সিপাহিকে গালাগাল দিচ্ছিলেন।
চার. সড়ক নম্বর ১৩/১, ধানমন্ডি, শেখ মণির বাড়ি: মণি ও তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে তাঁদের এই বাড়িতে খুন করা হয়। তাঁদের বাড়ির দিকে ‘সেনাবাহিনীর গাড়ি’ আসতে দেখে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব ছেড়ে সরে যান। বাড়িটি ছিল আংশিক তছনছ করা। মেঝেতে স্পষ্ট রক্তের দাগ। মাঝের টেবিলে একটি অ্যালুমিনিয়ামের বাটিতে কিছু ভিজানো চিঁড়া।
পাঁচ. ৩৭ মিন্টো রোড, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি: মন্ত্রীর বাড়িটি ছিল ফাঁকা। ড্রয়িং রুমজুড়ে দেখা গেল জমাট বাঁধা রক্ত। বাড়ির নিরাপত্তা পুলিশ আগেই পালিয়ে গিয়েছিল!
ছয়. সেরনিয়াবাত ও শেখ মণি এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে সংগ্রহ করা হয়। লাশগুলো ছিল বিকৃত। তাপ ও আর্দ্রতা লাশের ক্ষতি করে। লাশ থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল। বনানী গোরস্থানে দাফনের জন্য আমরা লাশগুলো সেনানিবাসে নিয়ে এলাম। শেখ মুজিবের লাশ ছাড়া ৩২ নম্বর সড়কের অন্য সবার লাশও আরেকটি ট্রাকে করে সেখানে আনা হয়।
দাফন-কাফন সম্পর্কে প্রতিবেদন

১. মৃতদেহ সংগ্রহ: ১৫ আগস্ট ঘটনায় নিহতদের লাশ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়ক এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে সংগ্রহ করা হয়। দুটি ট্রাকে করে ১৮টি লাশ দাফনের জন্য আনা হয়। বনানী গোরস্থানে দাফনের জন্য গুলশান মিউনিসিপ্যালিটি থেকে অনুমতি নেওয়া হয়। এএসসি (আর্মি সার্ভিসেস কোর) সিপাহিদের একটি প্লাটুন গোরখোদকের কাজ করে। স্টেশন কমান্ডার আগেই আমাকে বলেছিলেন, ১৬ আগস্টের দিনের প্রথম আলো ফোটার আগেই যাতে দাফনের সব কাজ শেষ হয়ে যায়!
২. দাফন: আগস্ট মাসের তাপ ও আর্দ্রতায় কিছু লাশ বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে কোনো ফ্যান ছিল না। ৩২ নম্বরের লাশগুলোতে বরফ দেওয়া ছিল। ফলে সেগুলোর অবস্থা ছিল অপেক্ষাকৃত ভালো। সিপাহিদের কয়েকজন ছিল, খুবই গলা চড়িয়ে কথা বলছিল। শেখ মুজিববিরোধী মনোভাব প্রকাশ করছিল তারা। ফলে আমাকে গোটা পরিস্থিতিই সতর্কতার সঙ্গে সামাল দিতে হয়। অবশ্য কোনো লাশেরই যাতে অমর্যাদা না হয় আমি সেটি নিশ্চিত করেছিলাম। সিপাহিদের কয়েকজন কবর খুঁড়তে অনীহা প্রকাশ করে, লাশের খারাপ অবস্থার কারণে কয়েকজন এমনকি ছুঁতে পর্যন্ত রাজি ছিল না। আমি নিজে প্রথম মৃতদেহটি (বেগম মুজিবের) ওঠাই এবং চিরশয্যায় শায়িত করি। শেখ নাসেরের দেবাবশেষ একইভাবে দাফন করি। এরপর আর আমার সমস্যা হয়নি। চার নম্বর ছাড়া বাকি প্রায় সবগুলো কবর ঠিকভাবে খোঁড়া হয়। কারণ আমরা সূর্যোদয়ের আগেই সব সেরে ফেলার জন্য তাড়াহুড়ো করছিলাম। গোরস্থানমুখী সড়কগুলোয় আমরা আগেই সিপাহি মোতায়েন এবং গোরস্থান এলাকায় ‘কারফিউ’ জারি করি। ভোরে ঘুম ভাঙা কিছু লোক ও পথচারী কী ঘটছে বোঝার চেষ্টা করলে তাদের নিরুত্সাহিত করা হয়।
৩. সাত নম্বর সারির চারপাশে বেড়া দেওয়া হয় এবং অস্থায়ী চৌকি বসিয়ে ২৪ ঘণ্টা পাহারার ব্যবস্থা করা হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য গোরস্থানটিতে দাফন কাজ বন্ধ ও দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
৪. মৃতদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র: কয়েকটি লাশের সঙ্গে কিছু গয়না পাওয়া যায়। একটি তালিকা তৈরি করে গয়নাগুলো স্টেশন কমান্ডারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
৫. শেখ মুজিবের দাফন: ১৬ আগস্ট, ১৯৭৫ বেলা ১১টায় শেখ মুজিবের লাশ সেনাবাহিনীর একটি ট্রাকে করে ক্যান্টনমেন্টে আনা হয়। কাফন কেনা হয় সিএসডি (ক্যান্টিন স্টোরস ডিপার্টমেন্ট) থেকে। এটি কেনা হয়েছিল বাকিতে! অর্ডন্যান্সের জিডিও (গ্যারিসন ডিউটি অফিসার) মেজর মহিউদ্দিন আহমেদকে লাশের সঙ্গে টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার খুঁটিনাটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। একটি বিএএফ (বাংলাদেশ এয়ারফোর্স) হেলিকপ্টারযোগে লাশ দাফনের জন্য টুঙ্গিপাড়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মৃতদেহের গোসল ও জানাজা দেওয়া হয়। জানাজায় শেখ মুজিবের চাচাসহ ডজনখানেক লোক শরিক হন! একটি অস্থায়ী চৌকি বসিয়ে কবরটি পাহারার জন্য রক্ষী মোতায়েন করা হয়। জিডিও টুঙ্গিপাড়া থেকে ফিরে সদর দপ্তরের মিলিটারি অপারেশনসের ডিরেক্টরের কাছে তাঁর রিপোর্ট পেশ করেন।
৬. নিহতদের বাড়িগুলো সিল করা হয়: শেখ মুজিব, শেখ মণি ও সেরনিয়াবাতের বাড়ি তালাবদ্ধ করে সিলগালা করা হয় এবং চাবি স্টেশন সদর দপ্তরে রাখা হয়।
৭. অনেক বাধাবিপত্তি ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আমাদের সাধ্যমতো সর্বোচ্চ যত্ন ও মর্যাদার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করি।
বনানী গোরস্থান: সাত নম্বর সারিতে যাঁদের কবর দেওয়া হয়
১. বেগম মুজিব, ২. শেখ নাসের, ৩. শেখ কামাল, ৪. সুলতানা কামাল, ৫. শেখ জামাল, ৬. রোজী জামাল, ৭. শিশু রাসেল, ৮. অজ্ঞাত পরিচয় ১০ বছর বয়সী একটি বালক, ৯. ফাঁকা, ১০. অজ্ঞাত পরিচয় ১২ বছর বয়সী একটি বালক, ১১. গৃহপরিচারিকা, বয়স ৪৫, ১২. অজ্ঞাত পরিচয় ১০ বছর বয়সী একটি ফুটফুটে বালিকা, ১৩. শেখ মণি, ১৪. মিসেস মণি, ১৫. অজ্ঞাত পরিচয় ২৫ বছর বয়সী এক যুবক, ১৬. অজ্ঞাত পরিচয় ১২ বছর বয়সী একটি বালক, ১৭. আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ১৮. অজ্ঞাত পরিচয় ২৫ বছর বয়সী এক যুবক।
নোট: নয় নম্বর কবরের নাঈম খানের লাশ লে. আবদুস সবুর খানের (এনওকে) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।
মেজর আলাউদ্দিন আহমেদ
আর্টিলারি স্টেশন স্টাফ অফিসার
স্টেশন হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
১৮ আগস্ট, ১৯৭৫
প্রথম আলো ১৫ আগস্ট ২০০৩ থেকে পুনর্মুদ্রিত
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্লট নির্মাণে কর্নেল ফারুক এবং কর্নেল রশিদ ও মেজর জেনারেল জিয়ার সংশ্লিষ্টতা
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ফারুক ও রশীদের সঙ্গে পেছনে লুকিয়ে থাকা নাটের গুরু জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফসুলজের ‘এনাটমি অফ এ ক্যু’ প্রতিবেদনটির সত্যতা প্রমাণিত হয় যখন ফারুক এবং রশীদ উভয়েই ১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসে সানডে টাইমসের সাংবাদিক এন্থনি মাসকারেনহাসকে ১৫ই আগস্ট প্রসঙ্গে সাক্ষাতকার দেয় । আসুন ভিডিওটি দেখি –
লেটেন্ট ওয়ার্ডস অব মুজিব কিলিং
কর্নেল ফারুক এবং কর্নেল রসিদ বলছে কেন তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ছিল।
এন্থনিঃ তোমরা কি তোমাদের মতাদর্শে প্রত্যাবর্তনের কথা মুজিবকে বোঝানোর চেষ্টা করে ছিলে ?
রশিদঃ না ! আমাদের লেভেলের জুনিয়ার অফিসারদের সেই সুযোগ ছিল না।
এন্থনীঃ মুজিবকে হত্যা না করে তোমাদের লক্ষ্য অর্জন কি সম্ভব ছিল না ?
রশিদঃ না, তাঁর ভেতর সাধারন গনমানুষকে আন্দোলিত করার আশ্চর্য এক ক্ষমতা ছিল। তাকে জীবিত রেখে কোন অভ্যুথান বা ক্যু ঘটাতে গেলে অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হতো। অধিকন্তু তিনি ছিলেন খুবই অভিজ্ঞ একজন রাজনীতিবিদ তাই তার যে কোন তৎপরতায় আমরা পরাজিত হতাম এবং দেশটাই হারাতাম ।
এন্থনীঃ তো তোমরা বলছ মুজিব বেঁচে থাকলে সাধারন গনমানুষকে নিয়ে তোমাদের এই ক্যু ব্যর্থ করে দিত ?
রশিদঃ হ্যাঁ তাই হতো। তাই তাকে হত্যাই ছিল আমাদের মতাদর্শ পুনপ্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ।
এসাইনম্যান্ট চুড়ান্ত করে হত্যাকারী জুনিয়র কর্নেলের এ দলটির তাদের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য একই মতাদর্শের সবচেয়ে যোগ্য একমাত্র ব্যক্তি হিসাবে যাকে বিবেচনা করলো তিনি ছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান।
ফারুকঃ আমাদের লীড করার জন্য জেনারেল জিয়াই ছিল মতাদর্শগত ভাবে যোগ্যতম ও বিশ্বস্ত ব্যাক্তি। তার সাথে দেখা করলাম ২০ শে মার্চ ১৯৭৫, জনারেল জিয়া বললেন একজন সিনিয়র অফিসার হিসাবে আমি তোমাদের এই টিমে সক্রীয় হতে পারি না, তোমরা জুনিয়র অফিসাররা এই অংশটা চালিয়ে যাও।
ফারুকঃ এর পর লনে হাটতে হাটতে বললাম, স্যার ! আমরা প্রফেশনাল সোলজার। আমরা প্রফেশনাল কীলারের মত কোন একক ব্যক্তিকে সার্ভ করবো না। আমরা আপনার এবং আমাদের মতাদর্শের বিজয় দেখতে চাই। এ মিশনে আপনার সমর্থন ও নেতৃত্ব অনিবার্য।
এন্থনীঃ রশিদ ! মুজিবকে হত্যার পর তুমি আর ফারুক মুশতাকের সাথে দেখা কর। তোমরা কি আগে তার সাথে প্ল্যান করেছিলে ?
রশিদঃ হ্যাঁ! আগষ্টের প্রথম সপ্তাহে মুশতাকের সাথে আমাদের সংযোগ ঘটানো হয়। পরে প্রস্তুতি শেষে ১৪ আগষ্ঠ ১৯৭৫ দেখা করি ।
এন্থনীঃ মুজিবকে হত্যার পরিকল্পনা তার সাথে আলোচনা করেছিলে ?
রশিদঃ না ! এভাবে সরাসরি বলিনি তবে ইসারায় বুঝিয়েছি আপনি এবং আমরাদের মতাদর্শ পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য মুজিবকে হত্যার সব প্রস্তুতি সম্পূর্ন হয়েছে এবং আমাদের গোষ্ঠির সকলে প্রস্তুত আছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে – এসাইনমেন্ট চূড়ান্ত করে হত্যাকারী জুনিয়র কর্নেলের এ দলটি তাদেরকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একই মতাদর্শের সবচেয়ে যোগ্য একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে যাকে বিবেচনা করলো তিনি ছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান । লিফশুলজও একই কথা বলেন, তার সেই সোর্সের বরাতে তিনি জানান, মোশতাক নয়, ফারুক রশীদদের ই্চ্ছে ছিলো এই অভ্যুত্থানকে একটা পূর্ণাঙ্গ সামরিক রূপ দিতে। অর্থাৎ মুজিব হত্যার পর একটি মিলিটারি কাউন্সিল গঠন করে দেশ শাসন। আর এর নেতৃত্বে জিয়াই ছিলো তাদের একমাত্র এবং গ্রহনযোগ্য পছন্দ। লিফশুলজের Anatomy of a coup থেকে জানা যায় -
General Zia, who was then Deputy Chief of the Army, expressed continuing interest in the proposed coup plan, but also expressed reluctance to take the lead in the required military action. The junior officers had already worked out a plan, Rashid told Zia, and they wanted his support and leadership. Zia temporised. According to the account given by Rashid to Mascarenhas and confirmed by my source, Zia told him that as a senior officer he could not be directly involved but if they junior officers were prepared, they should go ahead. According to my unusual source, the Majors hoped right up until the end that Zia would take the lead in the coup. Their view was that the best option would be not to bring in Mustaque with whom they were in constant, yet discreet, contact. The best option from the Majors perspective was to establish a Military Council as the commanding authority after the coup. In fact, it was largely Rashid who was in charge of defining the options for his group. It was their hope that Zia would lead such a council. While the junior officers might have preferred a senior officers’ coup with Zia at the head, they secured the next best option. With General Zia’s neutrality or even tacit support assured, the junior officers could move ahead without fear that Zia would throw his forces against them at the crucial moment.
ফারুকের ভাষ্যমতে – সুস্পষ্টভাবেই প্রথম পছন্দ ছিলো জেনারেল জিয়া যে তাদের মতই মনেপ্রাণে একই মতাদর্শের ছিল । তার সঙ্গে ১৯৭৫ সালের ২০ শে মার্চ তারা দেখা করে এবং চরম কৌশলী জিয়াউর রহমান সরাসরি সামনে আসতে না চেয়ে বিষয়টির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বললো –
আমি সিনিয়র অফিসার, তাই তোমাদের সঙ্গে এই টিমে আমি সরাসরি সক্রিয় হতে পারিনা, তবে তোমরা জুনিয়র অফিসারেরা যদি তাকে হত্যা করতে চাও, তবে গো এহেড
অর্থাৎ জিয়া মনে মনে চাইছিলো, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হোক, কিন্তু এই হত্যাকাণ্ড সফল হবে কি হবেনা সেটি নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত জিয়াউর রহমান নিজেকে আড়ালে রাখারই সিদ্ধান্ত নেন ।
এন্থনি মাসকারেনহাসের এ লেগাসি অব ব্লাডে এই ঘটনাগুলো উল্লেখিত হয়েছে ।
পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক লরেঞ্জ লিফসুলজ এবছর ফেব্রুয়ারী মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছেন -
Ziaur Rahman was in the shadow of the whole episode of August 15, 1975 because he was very much one of the main players of the game.
হাইকোর্টের এক প্রশ্নের জবাবে লিফশুলজ বলেন,
Ziaur Rahman could have stopped the assassination of Sheikh Mujibur Rahman because he (Zia) knew the plot
যেহেতু জিয়াউর রহমান হত্যা পরিকল্পনার বিষয়টি জানতেন, সেহেতু তিনি চাইলে মুজিব হত্যাকাণ্ডকে রুখতে পারতেন কিন্তু সেটি তিনি করেননি । ১৯৭১ সালে গা বাঁচিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা ভীরু কাপুরুষ জিয়াউর রহমান এখানেও তার গা বাঁচানো নির্লজ্জ কাপুরুষতা অব্যাহত রাখে সরাসরি বিষয়টিতে জড়িত না থাকার মধ্য দিয়ে। জিয়াউর রহমান যদি ২০শে মার্চের পরে বঙ্গবন্ধুকে ঘটনার সবকিছু খুলে বলতো, তাহলে একটা কথা ছিলো, কিন্তু এই ঘটনা গোপন রেখে কার্যত সে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে ইন্ধন যুগিয়েছে এবং গো এহেড বলে তার সমর্থন প্রদান করেছে উপরন্তু ঘটনা গোপন রেখে একজন মানুষকে মেরে ফেলায় ভূমিকা রেখেছে, অর্থাৎ নিশ্চিতভাবেই বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার সংশ্লিষ্টতা ছিলো এবং সে ১৯৮১ সালে মারা না গেলে আজকে তারও বিচার করা যুক্তিযুক্ত ছিলো ।
তবে ফারুক ২০শে মার্চের কথা উল্লেখ করলেও লিফশুলজ বলেন –
my source described how both Mustaque and General Ziaur Rahman had been in contact and discussions with the Majors for more than six months prior to the actual coup. This individual had personally attended numerous meetings that Major Rashid had held separately with Zia and Mustaque. In his television interview with Anthony Mascarenhas, Rashid described a meeting with General Zia on March 20, 1975, in which a coup was discussed in detail. This meeting took place five months before the coup. My source attended this meeting with General Zia but claimed it was not the first in which plans for a coup were discussed.
অর্থাৎ, ২০শে মার্চের আগেও জিয়া – মোশতাক – ফারুক গংদের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র মোতাবেক লিফশুলজ খবর পেয়েছেন বলে দাবী করেছেন। ২০শে মার্চই হোক আর তার আগেই হোক, মাসকারেনহাস ইন্টারভিউ থেকে সুস্পষ্ট যে তাদের মধ্যে মুজিব হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা ছিলো ।
আরো উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো লিফশুলজ তাঁর বাংলাদেশী সোর্স মোতাবেক জেনেছিলেন – মোশতাক এবং জিয়া উভয়েই ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেলে আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন এই হত্যাকাণ্ডে আমেরিকা তাদের সহায়তা করবে কিনা। কর্নেল রশীদের প্রশ্নের জবাবে দুজনেই বলেন –আমেরিকা তাদের সঙ্গে রয়েছে । সোর্স থেকে জানা যায় –
Major Rashid independently raised a question concerning what the attitude of the United States would be to the planned coup. “Both Zia and Mustaque independently told us that they had checked with the Americans,” said this military officer. “Their answers were the Americans. I then realized that Zia and Mustaque had their separate channels to the Americans
শাহাদুজ্জামানের ক্রাচের কর্নেল থেকে জানা যায় –
ঘটনার খানিক পর কর্ণেল রশীদের ফোন পান সেনানিবাসে অবস্থানরত ব্রিগেডিয়ার শাফায়াত জামিল। ঘটনায় হতভম্ব ও উদভ্রান্ত অবস্থায় তিনি ছুটে যান কাছেই উপ সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের বাসায়। উত্তেজিত অবস্থায় দরজা ধাক্কাতে থাকেন তিনি, বেরিয়ে আসেন জিয়া। পরনে স্লিপিং ড্রেসের পায়জামা ও স্যান্ডো গেঞ্জি। এক গালে শেভিং ক্রিম লাগানো। শাফায়াত উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন,
দ্য প্রেসিডেন্ট ইজ কিল্ড
শুনে জিয়া অবিচলিত। তার শান্ত প্রতিক্রিয়া-
প্রেসিডেন্ট ইজ ডেড সো হোয়াট? ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার ।গেট ইউর ট্রুপস রেডি। আপহোল্ড দ্য কনস্টিটিউশন।
একটু পরেই চিফ অব জেনারেল স্টাফ খালেদ মোশাররফের সাথে সাথে জিয়াও সেনাসদরে এসে উপস্থিত। ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় সেনাপ্রধান শফিউল্লাহর জরুরী তলব পেয়ে এসেছেন তারা। খালেদের পরনে শার্ট ও পায়জামা, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। নিজেই গাড়ি চালিয়ে এসেছেন। জিয়া এসেছেন ক্লিন শেভ ও মেজর জেনারেলের এক্সিকিউটিভ পোশাকে ড্রাইভার চালিত সরকারী গাড়িতে । জিয়ার এরকম পূর্বপ্রস্তুতিমূলক ফিটফাট হয়ে থাকা এবং ভাবলেশহীন শান্ত – নির্লিপ্ত কণ্ঠস্বর যথেষ্ট প্রশ্নের উদ্রেক ঘটায় যে তিনি নিশ্চয়ই আগেই থাকেই জানতেন, না জানলে তারও খালেদের মত অগোছালো অবস্থায় হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসার কথা ছিলো ।
কেন জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সামনে না এসে পেছন থেকে সংশ্লিষ্ট ছিলেন ?
জিয়াউর রহমান কিন্তু অখ্যাত মেজর নন, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে হিলাল-ই-জুরাত পদক জোটে তার (সূত্র : উইকিপিডিয়া ও পাক ডিফেন্স ফোরাম)। পাক সেনাবাহিনীর এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বীরত্বের পদক (নিশান-ই-হায়দার হচ্ছে সর্বোচ্চ যা জীবিতরা পান না,যেমন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বীরশ্রেষ্ঠ। পাকিস্তানে দীর্ঘসময় থাকার কারণে এবং পাক সরকার কর্তৃক উক্ত পদক জেতার কারণে জিয়াউর রহমান মনেপ্রাণে ছিলেন পাকিস্তানপন্থী, যার জন্য ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর পক্ষে অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিলেন এবং জুনিয়র অফিসারদের চাপে পড়ে পক্ষ বদল করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের গুণগান তাকে গাইতেই হয়, কেননা পাকিস্তানকে যতই ভালভাসুন না কেন, বাঙালি বলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীতে কখনোই তিনি উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হতে পারতেন না, তাই ভেতরে পাকিস্তান প্রেম বজায় রেখে এবং মুখে বাংলাদেশের গুণকীর্তন করে তিনি বাংলাদেশে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। আর পাকিস্তান প্রেমের কারণে পাকিস্তান থেকে রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে প্রধানমন্ত্রীত্ব দিয়েছেন, রাজাকার আব্দুল আলিমকে মন্ত্রী বানিয়েছেন, জামাত নেতা গোলাম আজমকে পুনর্বাসিত করেছেন।
জিয়াউর রহমান ছিলেন ধীরস্থির এবং কৌশলী। তিনি উচ্চাভিলাষী ছিলেন, এজন্য নিজেই কালুরঘাট থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যতীত একটি ঘোষণা দিয়েছিলেন যেটি সম্প্রচারিত করা হয়নি। তাকে একাত্তরের রনাঙ্গনেও সম্মুখ যুদ্ধে দেখা যায়নি, কিন্তু তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষক বলে ইতিহাসে একটি শক্তস্থানে বসে যান, ইসলামিক মনোভাবের কারণে পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তনকারী আর্মির উচ্চপদস্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মান্ধ ব্লকটির কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এবং এদেশের সাধারণ জনগণের মধ্যেও সেই মনোভাবের প্রভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেন । মুজিব হত্যার যে সুদূরপ্রসারী ফলাফল হতে পারে, অভ্যুথান আদৌ সফল হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থাকার কারণে এবং সফল না হলে জাতির কাছে তিনি চিরকালের মত কলংকিত হয়ে যেতে পারেন এই আশংকায় তিনি মুজিব হত্যার সকল দায় নিজের কাঁধে নিতে অনাগ্রহী ছিলেন। লিফশুলজের বর্ণনায় –
The Majors hoped until the last that Zia would take command of a new military Council that would be set up in the immediate aftermath of the coup. Even on August 15th they believed this was still a possibility. But, according to this source, Zia stepped back into the shadows once it emerged that a massacre had occurred at Mujib’s house and the houses of other relatives in which women and children were mercilessly killed alongside their menfolk. According to this source, Rashid himself was shocked at the killings and believed in the years that followed that there had been a “hidden plan” submerged within the coup that he neither knew about nor controlled.
মুজিব হত্যার প্রধান বেনিফিসিয়ারী কে ? – মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান । ২০শে মার্চই তা সুস্পষ্ট হয় ফারুক গংয়ের তাকে নেতা হিসেবে মেনে নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশের মাধ্যমে। পরবর্তীতে খালেদ মোশাররফকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে এবং জিয়াকে মুক্ত করে আনা কর্নেল তাহেরকে বন্দী করে ও পরবর্তীতে বাংলাদেশের সর্বময় ক্ষমতা দখল করে জিয়া প্রমাণ করে দেন – এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান বেনেফিসিয়ারী জিয়াই ।
হাই রেজুলেশনে দেখুনঃ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ
ইতিহাসের জঘণ্যতম বর্বর হত্যাকান্ড ১৫ আগষ্ট হত্যাকাণ্ডকে বিচারের আওতামুক্ত রাখতে খোন্দকার মোশতাক ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জারি করেন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। পরবর্তীতে জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তার অনুগত জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পাস করিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট হতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জারি করা সকল সামরিক আইন-বিধি কার্যক্রমকে বৈধতা দেন। শুধু তাই নয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়ে যাদের বিচার হবার কথা,সেই খুনিদের আখ্যায়িত করা হলো ‘সূর্যসন্তান’ বলে! পুনর্বাসিত করা হলো উচ্চপদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে। জেনারেল জিয়া এবং এরশাদের সামরিক সরকার তা বহাল রাখল বহু বছর। এরপর থেকে ক্ষমতাসীন কোন সরকারই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি,বরং খুনিদের নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে এমনকি পুরস্কৃতও করেছে।
১৯৭৬ সালের ৮ জুন ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে অভিযুক্ত হত্যাকারী গোষ্ঠীর ১২ জনকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। যেমন:
১. লে. কর্নেল শরিফুল হককে (ডালিম) চীনে প্রথম সচিব,
২. লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব,
৩. মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব,
৪. মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব,
৫. মেজর শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব,
৬. মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব,
৭. মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব,
৮. মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব,
৯. কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব,
১০. লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব,
১১. লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব,
১২. লে. আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
তাঁদের নিয়োগপত্র ঢাকা থেকে লিবিয়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্কালীন কর্মকর্তা ও পরবর্তীকালে পররাষ্ট্রসচিব শমসের মবিন চৌধুরী। এর আগে ওই বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা-সমঝোতার জন্য ঢাকা থেকে তত্কালীন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুরুল ইসলাম (শিশু) ঢাকা থেকে লিবিয়া গিয়েছিলেন। ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জিয়াউর রহমানের নির্দেশে খুনিদের বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (ফরেন সার্ভিস ক্যাডার) অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। সে সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এসব জানা গিয়েছিল।
তবে ১২ জন সেনা কর্মকর্তা চাকরিতে যোগ দিতে রাজি হলেও ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের প্রধান দুই হোতা কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ও কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশীদ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ও চাকরি গ্রহণে অসম্মতি জানিয়েছিলেন। তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্যে লিবিয়ায় প্রেসিডেন্ট কর্নেল গাদ্দাফির সব ধরনের সহযোগিতা পান।
সত্তরের দশকের শেষে রাষ্ট্রপতি জিয়ার শাসনামলে আমরা এ তথ্য জেনেছিলাম যে, বিদেশে অবস্থানরত খুনি গোষ্ঠীর শরিফুল হক (ডালিম), আজিজ পাশা, বজলুল হুদা এবং নূর চৌধুরীসহ এই অভিযুক্তরা ১৯৮০ সালের ১৭ জুন ঢাকা সেনানিবাসে একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন। সেনাবাহিনী অগ্রিম খবর পেয়ে তা ব্যর্থ করে দেয়। ঢাকায় অভ্যুত্থান-প্রয়াসীদের গ্রেপ্তার করে সামরিক আইনে বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ঢাকার রাজনৈতিক সূত্রগুলোর মাধ্যমে এসব খবর আমরা জেনেছিলাম।
সেনাবাহিনীর অনুসন্ধানে শরিফুল হক (ডালিম), আজিজ পাশা, বজলুল হুদা ও নূর চৌধুরীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছিল। তাঁদের সঙ্গে ফারুক ও রশিদের সরাসরি যুক্ত থাকার তথ্যও পেয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা উগ্র বামপন্থীদের সঙ্গে মিলে এ অভ্যুত্থান করতে চেয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালের মে মাসে ইসলামাবাদ, পরে তেহরান ও আঙ্কারায় বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করেছিলেন। এ সময় তাঁরা একাধিকবার ঢাকায় বৈঠক করেন। সর্বশেষ ১৯৮০ সালের মে মাসে ঢাকায় চূড়ান্ত সভা হয়েছিল; তাতে ডালিম, পাশা ও হুদা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন জেল থেকে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক রহমান। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৭৭ সালের কোনো একসময়ে ফারুক গোপনে ঢাকায় এসে অবস্থানকালে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আটক ছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ও এরশাদকে হত্যা করে দেশে ‘ইসলামি সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করা। এসব তথ্য আরও বিস্তারিত জানা যায় ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের বাংলাদেশ: রক্তাক্ত অধ্যায় গ্রন্থ থেকে। ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনকে (বর্তমানে নির্বাচন কমিশনার) বিদ্রোহ-পরবর্তী সেনাসদস্যদের বিচারের জন্য সেনাবাহিনী থেকে সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে গেলে ডালিম, হুদা ও নূর বিদেশে নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যান। আজিজ পাশা তখন ঢাকায় থাকায় গ্রেপ্তার হন। তিনি রাজসাক্ষী হতে রাজি হন এবং পরে তাঁকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে সরকার কূটনীতিকের দায়িত্ব দিয়ে রোমে পাঠায়। পরবর্তী সময়ে তাঁকে ঢাকায় পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। পরে ডালিম, হুদা ও নূরকেও বিভিন্ন দেশে আবার কূটনীতিকের দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হয় এবং তাঁরা একাধিক পদোন্নতি পান।
অসৎ এবং বিবেকবর্জিত নারী, মানুষ নামের কলংক বেগম খালেদা জিয়া ও ভুয়া জন্মদিন

চিত্রঃ মানুষ কতটা অসৎ এবং বিবেকবর্জিত হলে এরকম ঘৃণ্যকর্মে লিপ্ত হতে পারে !
২০০১ সালে বি এন পি ক্ষমতায় এসে জাতীয় শোক দিবস এবং ছুটি বাতিল করে। আর জাতির জনকের মৃত্যুবার্ষিকীতে নষ্ট ভ্রষ্ট মহিলা খালেদা জিয়া বিভিন্ন রঙের শিফন জর্জেট শাড়ী পরে চরম নির্লজ্জ বেহায়াপনায় কেক কেটে তার ভুয়া জন্মদিন পালন করতো । জাতির জনকের মৃত্যুতে এরূপ অশ্লীল পৈশাচিক উল্লাসে রত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জাতির জনককে অবমাননা করার দায়ে মামলা এবং সমুচিত শাস্তি হওয়া উচিত ।
গণভবনে বাস করলে হয়তো এই সামরিক অভ্যুত্থান সফল হতো না। যুক্তি হিসেবে বলা যায় –
১) গণভবনে সুরক্ষার পরিমাণ অনেক বেশি ছিলো।
২) রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্প কাছেই ছিলো
৩) গণভবনে ক্র্যাকডাউন করার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন ছিলো, সেই সময়ে সাহায্য পৌঁছেও হয়তো যেতে পারতো।
তবে এমন নাও হতে পারতো, কেননা যেভাবে ধানমন্ডির ৩২ নং বাসার গার্ডদের নিরস্ত্র করা হয় এবং যেভাবে ৩০টা ট্যাংক ঢাকা শহরে মোতায়েন করা হয় তথা রক্ষী বাহিনীর ক্যাম্পের দিকে তাক করা থাকে , তাতে বোঝা যায় কতটা সুপরিকল্পিত ছিলো ষড়যন্ত্রের নীলনকশা। ঢাকা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সাভারে ছিলো রক্ষীবাহিনীর সদর দফতর, কেউ কেউ চাচ্ছিলেন পাল্টা যুদ্ধ করতে, কিন্তু তাদের কাছে এন্টি ট্যাংক গান ছিলোনা। এখানেও ষড়যন্ত্রকারীরা কতটা পরিকল্পনাবদ্ধ যে হত্যাকাণ্ডটি এমন সময়ে চালানো হলো যখন সারা ঢাকার মানুষ ঘুমে আচ্ছন্ন এবং রক্ষীবাহিনীর মহাপরিচালক নুরুজ্জামান বিদেশে লন্ডনে অবস্থান করছেন যাতে তিনি কোন নির্দেশ না দিতে পারেন।
আমেরিকা ও পাকিস্তান সরকার, সিআইএ এবং আইএসআইয়ের সংশ্লিষ্টতা
বিদেশী চক্রান্তের মধ্যে রয়েছে আমেরিকান সিআইএ, পাকিস্তানের ভুট্টো এবং আইএসআই সহ কতিপয় ইসলামিক দেশের ষড়যন্ত্র। ১৫ই আগস্ট ভুট্টো শুধুমাত্র পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নতুন শাসনকে স্বীকৃতিই দিলেন না বরং ৩য় বিশ্বের দেশগুলোর কাছেও বাংলাদেশের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানালে, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি। মুজিব হত্যাকাণ্ডের পরপরই ভূট্টো বাংলাদেশের মানুষের জন্য সাহায্য পাঠানোর কথা ঘোষণা করে বলেন –
বাংলাদেশের জনগণের জন্য অতিশীঘ্র ৫০০০০ টন চাল, এক কোটি গজ মোটা কাপড় ও ৫০ লক্ষ গজ মিহিকাপড় উপহার স্বরূপ পাঠানো হবে এবং ভবিষ্যতেও আমাদের সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
মুজিব হত্যার উপহার ?
দেখুন- ভুট্টো বাঙালিকে শুয়োয়ের বাচ্চা জাহান্নামে যাক বলে গালি দিচ্ছে
অথচ ১৯৭৪ সালে এরকম সামান্যতম কোন সাহায্য সহযোগিতার কথা ভুট্টো বলেননি। যেই ভুট্টো তার দেশের জনসভায় আমাদের দেশের বিরুদ্ধে কিরকম হিংস্র এবং আক্রমণাত্মক ভাবে আমাদেরকে শুয়োর কা বাচ্চা জাহান্নাম মে জায়ে –বলে গালি দিচ্ছে, সেই ভুট্টোর কেন হঠাৎ এই ক্রোকোডাইল টিয়ার বা কুমিরের কান্নার ছদ্মাভিনয় ? বঙ্গবন্ধু নিহত এবং মোশতাক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ভুট্টোর তাৎক্ষণিক কূটনৈতিক অবস্থান ও সাহায্য প্রেরণ সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, মোশতাক সরকার এবং আর্মিরা ভুট্টোর পছন্দনীয় ছিলো এবং এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভুট্টো আগে থেকেই কিছু না কিছু জানতেন, নাহলে হঠাৎ করে এত ঔদার্য (ছদ্ম) দেখানো সম্ভব নয়।
মার্কিন সরকার এবং সিআইএর ষড়যন্ত্র ( ডিক্লাসিফাইড ডকুমেন্টের অসংলগ্নতা )
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে নিশ্চিতভাবেই মার্কিন ষড়যন্ত্র ছিলো। কেননা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ২৫ বছরের অধিক পুরনো ডিক্লাসিফাইড দলিল থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্যে মার্কিন সরকার বা গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততা নিয়ে বিভিন্ন অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য লক্ষ্যণীয় হয়।
এসব দলিলের কোথাও দেখা যায়, ১৯৭৫ সালের মার্চেই আমেরিকা বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলো যেটি হতেই পারেনা কেননা ১৯৭১ সালের নিক্সন সরকার পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো এবং তার পররাষ্ট্র সচিব হেনরী কিসিঞ্জার চরম মুজিববিদ্বেষী ছিলো। চরম বিদ্বেষী ব্যক্তি কখনোই তার শত্রুকে সতর্ক করেনা, এটা কমন সেন্সের ব্যাপার। এই ডিক্লাসিফাইড ডকুমেন্ট আসলে আসল ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার পাঁয়তারা। আবার সেই দলিলেরই কোথাও দেখা যাচ্ছে, এবিষয়ে হেনরী কিসিঞ্জার মুজিবকে সতর্ক করার কথা দাবী করলেও দেখা যাচ্ছে, এথারটন এবং হাইল্যান্ড বলছেন –মুজিবকে নাম বলা হয়েছিলো কিনা তা চেক করতে হবে (এথারটন) এবং তারা এই ব্যাপারে সম্যকভাবে কিছুই বলেনি (হাইল্যান্ড) মন্তব্য করেন। অর্থাৎ তিন ধরনের অস্পষ্ট ব্ক্তব্য। দুই ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, এই দলিলের অনেক কিছুই স্রেফ ভাঁওতাবাজি বা আই ওয়াশ। আবার ২০০৫ সালে কতিপয় মার্কিন সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মার্কিনী সংশ্লিষ্টতা ছিলো। লরেঞ্জ লিফশুলজের গ্রন্থের মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, এই হত্যাকাণ্ডে মার্কিন সরকার এবং জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা ছিলো। আবার বাংলাদেশ সম্পর্কিত ডিক্লাসিফাইড ডকুমেন্টে এই হত্যাকাণ্ডের কথা মার্কিন সরকার জানতো বলে স্বীকার করলেও ১৯৭৫ সালের অক্টোবরে হেনরী কিসিঞ্জার ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান যে, তারা এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। ব্যারিস্টার কামাল হোসেন আমেরিকা ও পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার কথা জোরকণ্ঠে দাবী করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ডঃ ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন –সবসময় যে অফিশিয়াল ডকুমেন্টে সব সত্যই লেখা থাকবে এমনটি নয় এবং সেখানে অনেক লুক্কায়িত কথাবার্তা থাকতে পারে। বাস্তবেও দেখা যায়, ঐ ফাইলটিতে অমিটেড লিখে কিছু অংশ মুছে ফেলা হয়েছে এই দাবী করে যে, সেগুলো বাংলাদেশ সম্পর্কিত নয়। সেখানে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিলোনা সেটাই বা কে বলতে পারে ? আবার ২৫ বছর পর হঠাৎ এই ফাইল অবমুক্ত করাটাও কোন যুক্তির কথা নয়। যদি এটি অবমুক্ত করাই হলো, তো অমিটেড অংশ অবমুক্ত করা হলোনা কেন ? প্রশ্ন থেকেই যায়।
ফারুক-রশীদ গংয়ের মত একই মতাদর্শী ভাসানীর মুজিববিদ্বেষ এবং আওয়ামী বিদ্বেষ ও হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন প্রদান
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে ভাসানীর সক্রিয় অংশগ্রহণ না থাকলেও কর্নেল ফারুক রশীদ এবং মোশতাক গংদের বাংলাদেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে গড়ে তোলার মতাদর্শের সঙ্গে ভাসানীর চরম মিল ছিলো এবং তারা সকলেই ছিলো চরমভাবে ভারতবিদ্বেষী। আর মুজিব নিহত হওয়ার পর মুজিব ও মুজিব সরকারকে উৎখাতে মোশতাক ও খুনী বিপথগামী আর্মি অফিসারদের সাহসের তারিফ করে অভিনন্দন জানিয়ে ভাসানী তাদের একটি তারবার্তা পাঠান।
এর মাধ্যমে ভাসানীর মত ব্ল্যাকশিপের ছদ্মবেশী চরিত্রটি সকলের সামনে প্রকটিত হয়ে পড়ে। মুজিব সবসময়ই ভাসানীকে শ্রদ্ধা করতেন এবং তাঁর ছেলেরা কখনো ভাসানীর পাগলামিপূর্ণ উদ্ধত বক্তব্যের সমালোচনা করলে তাদের তিনি ভর্ৎসনা করতেন। কিন্তু হীনমন্য ও সুবিধাবাদী ভাসানী চিরকালই মুজিবের জনপ্রিয়তায় চরম ঈর্ষান্বিত বোধ করতেন, তাঁর প্রতি ঈর্ষাপ্রসূত বিদ্বেষ পোষণ করতেন। এজন্যই তিনি নিজের রাগ ও ক্ষোভ সংযত করতে না পেরে ১৯৭০ সালে বলেছিলেন – আমার লাশের ওপর দিয়ে মুজিব ক্ষমতায় আসবে । মুজিবের প্রতি ভাসানীর বিদ্বেষের কারণ হলো –
ক) ১৯৪৮ -১৯৫৮ পর্যন্ত ভাসানী ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, কিন্তু মুজিব যেভাবে সঘনে শ্রাবণে প্লাবনের বেগে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির শীর্ষ নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন তাতে ভাসানীর মত ব্যক্তি সেই প্লাবনে খড়কুটোর মত ভেসে গেলেন । এখানেই ভাসানীর ভেতরের খেদ এবং ঈর্ষা ।
খ) ভাসানী চীনপন্থী এবং ভারতবিদ্বেষী ছিলেন যেই চীন ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে এবং সেখানে ভারত আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে । মুজিব কোন পন্থী ছিলেন না, তবে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর চমৎকার সম্পর্ক ছিলো। এটি ভাসানী সহ্য করতে পারতেন না । এই ভাসানীই পুনরায় লাইমলাইটে আসার জন্য গোপনে ভারতের সঙ্গে কনফেডারেশন করতে চেয়েছিলেন। অথচ মিডিয়াতে পাত্তা পেলেন না, ভাসানী হয়ে গেলেন গৌণ এবং মুজিব হয়ে গেলেন মুখ্য । এটি ভাসানীকে মুজিববিদ্বেষী করে তোলে।
ভাসানী ১৯৭০ সালের একুশে মার্চ লাহোরে পৌঁছে ঘোষণা দেন যে – সরকার জনগণের ওপর জোর করে নির্বাচন চাপিয়ে দিলে তিনি গেরিলা যুদ্ধ শুরু করবেন, যার জন্য তার ৩০০০০ সশস্ত্র লোকও আছে । নির্বাচন হওয়াই ছিলো যৌক্তিক এবং মাত্র ৩০০০০ সৈন্যের ধারণা শিশুসুলভ চপলতা বৈ কিছুই নয়।
মুজিব হত্যায় ভাসানীর সক্রিয় সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও খুনী সরকার ও বিপথগামী আর্মি অফিসারদের অভিনন্দন জানিয়ে ভাসানীও মুজিব হত্যায় পরোক্ষভাবে নিজের নামকে কলংকিত করেছেন। ভাসানীর মত সুবিধাবাদী রাজনৈতিক চরিত্র আমাদের দেশে প্রচুর। রিপোর্ট মোতাবেক চুক্তির ৪৪০০০ কিউসেক পানি পাওয়ার পরেও এই ভাসানীই তথাকথিত লং মার্চ করে আমাদের মধ্যে জাতিবিদ্বেষ (ভারতবিদ্বেষ) পয়দা করেছেন এবং সাম্প্রদায়িকতাকে আরো উস্কে দিয়েছেন । আমার মাতামহ ১৯৫২ সালের ভাষাসৈনিক তথা ১৯৭১ সালের বুদ্ধিজীবী মুহাম্মদ জিয়াদ আলী রাজশাহীতে পদ্মা নদীর নিকটে শাহ মখদুম দরগার পাশে বাস করতেন। তিনি বলেছেন –মুজিব আমলে বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা পেত, প্রমত্তা পদ্মার ঢেউয়ের কলকল শব্দ সেই বাসা থেকে স্পষ্ট শোনা যেত। পানি প্রাপ্তির সমস্যা সৃষ্টি হয় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে যখন ভারতবিরোধী ও ধর্মপন্থী সরকারেরা ভারতের সঙ্গে ক্রমাগত বৈরী আচরণ করা শুরু করেন, সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেন এবং পরিণতিতে খুব্ধ ভারতও একই ধরনের পাল্টা মনোভাব দেখায়। আইয়ুব খান আমলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের এক বছর আগে ভাসানী পাকিস্তানের স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতির পন্থা অনুসরণ করে আইয়ুব খানের হাতকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দেন। ভাসানীর মধ্যে আসলে নীতি বলে কিছু ছিলোনা, একবার সামরিক শাসনের পক্ষে গেছেন, একবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এসেছেন, একবার ভারতের সঙ্গে কনফেডারেশনের জন্য রত হয়েছেন, আবার খুনী সরকারকে সমর্থন দিয়েছেন। তিনি নীতিহীনভাবে বিভিন্ন মতাদর্শের জগাখিচুড়ি পাকিয়েছেন !
১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মি বাঙালিদের উপর ঝাপিয়ে পড়লে ভাসানী ভারতে চলে যান এবং ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন –
ভারতই যে বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে ভারত তার প্রমাণ দিয়েছে। আমি তা কখনো ভুলতে পারিনা
সেই ব্যক্তিই আবার কদিন পর বলতে শুরু করেন –
ভারতে থাকাকালীন সময়ে তিনি একপ্রকার বন্দীই ছিলেন। বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য তিনি প্রত্যেকদিন পূর্ব পুরুষের বসতবাড়ি দেখতে আসা হাজার হাজার ভারতীয়দের দোষারোপ করেন।
তিনি প্রশ্ন করেন –
তারা যদি দেশকে এতোই ভালবাসে, তবে তারা এদেশে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেনা কেন
তিনি সুস্পষ্টভাবে বাংলাদেশ ও ভারতকে হতবুদ্ধি করে সম্পর্ক অবনতি করার অপচেষ্টায় বাংলাদেশ, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার সমন্বয়ে বৃহত্তর বাংলার অভিপ্রায়কে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস চালান। পাকিস্তানের সাথে আসাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আগেও পাকিস্তান আমলেও তিনি দাবী করেছিলেন। এর দুবছর আগে একই ধরনের অভিপ্রায়কে তিনি সিআইএ-র ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চীন ১৯৭২ সালের ২১শে আগস্ট ভেটো দেয়, ভাসানী বলেন –
আমি কঠিন ভাষায় চীনের ভেটোর বিরুদ্ধে প্রচণ্ডভাবে প্রতিবাদ করছি
কিন্তু তার প্রতিবাদে না আছে প্রচণ্ডতা আর না আছে কঠিন ভাষা, এবং তার বিহ্বলতা সবই দুদিনের স্থায়ী মানসিক বিকার।
এর চারদিন পর ২৫শে আগস্ট অকৃতজ্ঞ ভাসানী ভারতকে বাংলাদেশের ১ নং শত্রু হিসেবে আখ্যা দেন এবং বলেন –
সংক্ষিপ্ত অবস্থানের জন্য প্রত্যেকদিন প্রায় ৩০ লক্ষ ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকছে । এ ধরনের চলাচল দেশের অপর্যাপ্ত সংস্থানে দুঃসহ বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে এবং দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বিস্ময়কর মূল্যবৃদ্ধির পশ্চাতে প্রধান কারণ এটিই
একদিনে ৩০ লক্ষ সফরকারী। তারা ভ্রমণ করছে কিভাবে ? কোন ভারতীয়ের বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য তার পাসপোর্টে ঐ দেশের বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। আর ভারতে কি যুদ্ধ লেগেছিলো নাকি যে প্রতিদিন ৩০ লক্ষ ব্যক্তি বাংলাদেশের মত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে মরতে আসবে ? ভাসানী বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষের পথিকৃৎ, তার হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তিনি কোনরকম লজ্জা বা বিবেকের তাড়না ছাড়াই বিভিন্ন বিষয়ে এরকম উদ্ভট ও মাত্রাতিরিক্ত/অতিরঞ্জিত সংখ্যা উদ্ধৃত করতেন। তিনি সরকারের সংবিধান প্রণয়নের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি ইসলামী নীতির ভিত্তিতে সংবিধান এবং ইসলামী শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপের দাবী জানান এবং তার ভেতরের গোপন বাসনা মোতাবেক বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র থেকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র বানানোর পায়তারা শুরু করেন।
সাম্প্রদায়িকতার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত ভাসানী ধর্মভিন্নতার সেন্টিমেন্টকে ইস্যু করে ভারতের বিপক্ষে জনগণকে খেপিয়ে তোলা ও উস্কে দেওয়ার জন্য বলেন – ভারত বাংলাদেশকে বাজে পণ্যের আবর্জনা স্তূপের মাঠ বানিয়েছে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহবান জানিয়ে তিনি ভারতকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন, বাংলাদেশের মানুষের মনে ভারতবিদ্বেষের সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্য বলেন –
বাংলাদেশ ভারতের ভিয়েতনাম হবে
তিনি সতর্ক করে দেন –
বাংলাদেশ যতদিন পর্যন্ত ভারতীয় কর্তৃত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত না করবে, ততদিন পর্যন্ত চীন বাংলাদেশের জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে ভেটো দেবে
তিনি নিশ্চিত ছিলেন, মুজিব তার সঙ্গে বেইজিংয়ে গেলে তিনি বাংলাদেশকে চীনের স্বীকৃতি আনিয়ে দিতে পারবেন।
সৌজন্যতাহীন ও ভদ্রতাহীনভাবে দুমদাম উল্টোপাল্টা মন্তব্য করতে জুড়ি নেই যার, তিনি ভাসানী। মধ্য ৫০’ এর দশকে একবার আকস্মিকভাবে এক জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে তিনি বলেন –
আপনি মারা গেলে ন্যূনতম ৫০০ লোক খুশী হবে
কিংকর্তব্যবিমুঢ় ম্যাজিস্ট্রেট বলেন –
আমি কি করেছি
উত্তরে ভাসানী বললেন –
কিছুই না। আপনি একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। সেটাই যথেষ্ট
– প্রমাণ ছাড়াই এভাবে অভিযুক্ত করা কতটা যুক্তিযুক্ত বা ভদ্রোচিত ?
এই মওলানা ভাসানী ভারতের সঙ্গে কনফেডারেশন গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলো কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি হওয়ার কারণে তিনি চরম ভারতবিদ্বেষী হিসেবে পুনঃরাবির্ভূত হন। ইন্দিরা গান্ধীকে লেখা তার চিঠির অংশবিশেষ –
১ম চিঠি
আমার শেষ সংগ্রাম বাংলাদেশকে স্বাধীন করা, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ভারতের সহিত কনফেডারেশন। এই তিন কাজের সাধন ইনশাল্লাহ আমার জীবিতকালে দেখার প্রবল ইচ্ছা অন্তরে পোষন করি।
বাধা যতই আসুক, আমার আন্তরিক আশা ও বিশ্বাস আপনাদের আশীর্বাদে অবশ্যই পূর্ণ হইবে। আমার আন্তরিক আশীর্বাদ আপনার আদর্শানুযায়ী সমাজতন্ত্র শুধু ভারতে নহে এশিয়া আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হইবে। যখন দরকার মনে করেন দিল্লীতে ডাকাইলেই হাজির হইব।
২য় চিঠি
আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, বাংলাদেশে স্বাধীনতা অর্জন এবং ভারতের সাথে স্বাধীন বাংলাদেশের কনফেডারেশন গঠন করার লক্ষ্যে আমি আমার সংগ্রাম অক্ষুন্ন রাখব।যেই আমাকে প্রো-চাইনিজ বলে আপনার কাছে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা করুন, ইনশাল্লাহ আমি ভারত ও আপনার অবাধ্য হবো না।
সূত্রঃ
সৈয়দ আবুল মকসুদ : মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (পৃষ্ঠা ৪৬১-৪৬২)
সিরাজউদ্দিন আহমদ, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ (পৃ.৩৬১-৩৬২)
শেষোক্ত বইয়ে সেখানে ভাসানীকে নিয়ে একটি চ্যাপ্টার আছে যেখানে তার পিএস সাইফুল ইসলামের জবানীতে বলা হয়েছে :
মওলানা সাহেবের নিজ হাতে লেখা এই খসড়া বার বার পড়লাম। এই মুহূর্তে মওলানা ভাসানীকে রহস্যময় মনে হলো। রাণীক্ষেতে তিনি নিজ হাতে এই ধরণের আর একটি খসড়া দাঁড় করিয়ে আমাকে দিয়েছিলেন অনুবাদ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠিয়ে দিতে। আসামেও আমাকে দিয়ে এ ধরণের একটি খসড়া দাড় করিয়েছিলেন। রাণীক্ষেত ও আসামের খসড়ায় তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন, তাকে আসামে থাকতে দিলে তিনি আসাম ও ভারতের আভ্যন্তরীন রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাবেন না এবং ভারত সরকারকে তার খরচ বহন করতে হবে না। অবশ্য এ দুটো চিঠিতে ভারতের সাথে বাংলাদেশের কনফেডারেশনের কথা উল্লেখ করেছিলেন।
আর্মির পাকিস্তানপন্থী ব্লকের আধিপত্য এবং কে এম শফিউল্লাহর দুর্বল ভূমিকা
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট এর আগে ও পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ঘটতে থাকা ঘটনাবলী নিয়ে বলেছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অবঃ)কে এম শফিউল্লাহ, বীর উত্তম।সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন ইনাম আহমেদ এবং জুলফিকার আলী মানিক, এর অংশবিশেষ উল্লেখিত হলোঃ
একটি লম্বা এবং ক্লান্তিকর দিন শেষে শফিউল্লাহ যখন বিছানায় যান তখন রাত প্রায় দেড়টা।প্রায় ফজরের নামাজের সময় তার ভৃত্য তাকে জাগিয়ে তোলে এবং তিনি দেখতে পান যে তখনকার মিলিটারী ইন্টেলিজেন্স এর ডিরেক্টর কর্ণেল সালাউদ্দিন তার কক্ষের দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছেন।তিনি শফিউল্লাহকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কি আর্মার্ড এবং আর্টিলারী ডিভিশনকে শহরের দিকে পাঠিয়েছো’?শফিউল্লাহ টের পান তার মেরদন্ড বেয়ে একটি ঠান্ডা হিমস্রোত বেয়ে যাচ্ছে।তিনি উত্তর দেন ‘না তো। কেনো?’
সালাউদ্দিন উত্তর দেন, ‘আর্মার্ড ডিভিশন এবং আর্টিলারী ডিভিশন রেডিও ষ্টেশন, গণভবন এবং বঙ্গবন্ধুর ধনামন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ীর দিকে এগুচ্ছে।’
শফিউল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, “ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার এব্যাপারটি জানে’? সে সময ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন কর্ণেল শাফায়াত জামিল।
শাফায়াত জামিল বলেন,‘আমি জানিনা।আমি আপনার কাছেই প্রথম এসেছি।’
‘যাও শাফায়াত জামিলকে বলো এক, দুই এবং চার নম্বর ব্যাটালিয়নকে পাঠিয়ে আর্টিলারী এবং আর্মার্ড বাহিনীর অগ্রসর হওয়া বন্ধ করতে।’ এ নির্দেশ এর সাথে শফিউল্লাহ এও বলেন যে তিনি নিজেও দ্রুত শাফায়াত জামিলকে ফোন করতে যাচ্ছেন।এখানে বলে রাখা ভালো যে, আর্মিতে চীফ অফ ষ্টাফ সমগ্র আর্মিকে পরিচালিত করে আর ট্রুপগুলো পরিচালিত হয় ব্রিগেড কমান্ডারদের নির্দেশে ।
শফিউল্লাহ তখন লাল টেলিফোনটি তুলেন শেখ মুজিবকে সতর্ক করার জন্য।কিন্তু ফোন লাইনটি ব্যস্ত ছিলো।তখন তিনি শাফায়াত জামিলকে ফোন করেন এবং এ লাইনটিও ব্যস্ত পান।এরপর তিনি কর্ণেল জামিলউদ্দিন আহমেদকে ফোন করেন।কর্ণেল জামিল তখন সদ্য প্রেসিডেন্টের মিলিটারী সেক্রেটারী পদ থেকে ডিএফআইতে বদলী হয়েছেন।ফোনে শফিউল্লাহকে জামিল বলেন যে, বঙ্গবন্ধু তাকে ফোন করেছিলেন এবং তাকে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যেতে বলেছেন কারন সেখানে কিছু লোক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে।শফিউল্লাহ জামিলকে বলেন বঙ্গবন্ধুকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করার জন্য।জামিল পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যাওয়ার পথে সোবাহানবাগ মসজিদের সামনে বিদ্রোহী আর্মি অফিসারদের হাতে নিহত হন।
শফিউল্লাহ যখন কর্ণেল শাফায়াত জামিলকে ফোনে পান তখন প্রায় ভোর সাড়ে পাঁচটা।‘তুমি কি জানো, আর্টিলারী এবং আর্মার্ড সেনারা কেনো শহরের দিকে যাচ্ছে?’ তিনি শাফায়াতকে জিজ্ঞেস করেন।
‘না’।
‘আমি তাকে বলি যে, সালাউদ্দিন আমাকে এ ব্যাপারে জানিয়েছে, এবং তাকে আমি তৎক্ষনাত তার অধীনস্থ এক, দুই ও চার নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টকে পাঠিয়ে অগ্রসররত সেনাদের থামানোর ও ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেই।’
শফিউল্লাহ এয়ার ফোর্স এবং নৌবাহিনীর প্রধানদের সাথেও এ ব্যাপারে কথা বলেন এবং তারাও তাকে অবহিত করেন যে এ ব্যাপারে তারা কিছু জানেননা।এর কিছুক্ষণ পরে তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সাথে কথা বলেন এবং তারাও এব্যাপারে তাদের অজ্ঞতার কথা জানান।
তিনি যখন জিয়াকে সেনাদের শহরের দিকে অগ্রসরতার কথা জানান, জিয়া প্রতিউত্তরে বলেছিলেন, ‘তাই না কি?’ এর থেকেই তিনি ধরে নেন জিয়া ব্যাপারটি সম্পর্কে কিছু জানতেননা। এরপর তিনি খালেদ মোশাররফ এবং জিয়া উভয়কেই যতদ্রুত সম্ভব তার বাসভবনে আসতে বলেন।
তারা দু’জনেই ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে উপস্থিত হন। খালেদ তার নিজস্ব গাড়ি চালিয়ে আসেন, পরনে ছিলো স্লিপিং গাউন। জিয়া এসেছিলেন তার অফিসের গাড়ি করে, শেভ করা এবং সেই সাত সকালেও ইউনিফর্ম পরিহিত।
খালেদ এবং জিয়া তার বাড়ী পেৌঁছানোর আগে তিনি আরেকবার প্রেসিডেন্ট এর বাড়ীতে ফোন করেন এবং এবার তিনি বঙ্গবন্ধুকে ফোনে পান।
শফিউল্লাহ বলেন, ‘যখন ডিএমআই (সম্ভবত ডিএফআই হবে, মূল অংশে ডিএমআই আছে) আমাকে সেনাদের শহরের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্পর্কে অবহিত করে সেটা ছিলো সোয়া পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে এবং শাফায়াত জামিলের সঙ্গে আমি কথা বলি সাড়ে পাঁচটা থেকে পাঁচটা পঁয়ত্রিশ এর মধ্যে।আমি যখন বঙ্গবন্ধুকে প্রথমবার ফোন করি তার বিশ থেকে পচিঁশ মিনিট পর আমি তাকে ফোনে পাই।সময়টা আমার ঠিক মনে নেই তবে তা অবশ্যই সকাল ছয়টার আগে।’
‘তোমার বাহিনী আমার বাসায় আক্রমণ করেছে।তারা হয়তো কামালকে [বঙ্গবন্ধুর ছেলে] হত্যা করতে পারে।এক্ষুনি তোমার বাহিনী পাঠাও’। বঙ্গবন্ধু রাগত কন্ঠে বলেন শফিউল্লাহকে।
শফিউল্লাহ বলেন, ‘স্যার আমি কিছু একটা করার চেষ্টা করছি।আপনি কি কোন ভাবে বাড়ী থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন?’
‘ও পাশ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে আমি হ্যালো বলতে থাকি এবং এক মিনিট পরেই আমি গুলির শব্দ পাই এবং তার কয়েক মিনিট পরেই ফোন লাইনটি ডেড হয়ে যায়।’
এরপর খালেদ মোশাররফ এবং জিয়াকে সহ শফিউল্লাহ তার অফিসের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হন।এর মধ্যে দশ থেকে পনেরো মিনিট হয়ে গিয়েছে শফিউল্লাহ কথা বলেছেন কর্ণেল শাফায়াত জামিলের সাথে কিন্তু তখন পর্যন্ত সেনাদের অগ্রসরতা থামেনি।
শফিউল্লাহ ছেচল্লিশ নম্বর ব্রিগেডকে পরিচালিত করার জন্য খালেদ মোশাররফকে নির্দেশ দেন এবং তাকে রিপোর্ট করতে বলেন।
নাসিম, জিয়া এবং খালেদ মোশাররফ সহ শফিউল্লাহ তার অফিসে বসে ছিলেন এবং তাদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে একটি ট্যাংক তাদের অফিসের কাছে অবস্থান নিয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পরেই দু’তিনটি গাড়ি তার অফিস চত্বরে আসে এবং মেজর শরীফুল হক ডালিম পনেরো-ষোল জন সৈন্য সহ তার অফিসে প্রবেশ করে।ডালিম তার কিছুদিন আগে চাকুরীচ্যুত হন।
‘চীফ কোথায়?’ শফিউল্লাহর কক্ষে প্রবেশ করতে করতে ডালিম জিজ্ঞাসা করেন।
ডালিম এবং তার সৈন্যদের অস্ত্র শফিউল্লাহর দিকে তাক্ করা ছিলো।
শফিউল্লাহ ডালিমকে বলেন, ‘অস্ত্র দেখে এবং ব্যবহার করে আমি অভ্যস্ত।যদি তোমরা অস্ত্র ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এসে থাকো তবে ব্যবহার করো।আর যদি কথা বলতে চাও তবে অস্ত্র বাহিরে রেখে এসো।’
ডালিম অস্ত্র নীচু করে বললেন, ‘প্রেসিডেন্ট আপনাকে এক্ষণি রেডিও ষ্টেশনে যেতে বলেছেন।’
উত্তেজনাকর কিছু মুহুর্ত পার হওয়ার পর শফিউল্লাহ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট? আমি যতদূর জানি প্রেসিডেন্ট মারা গিয়েছেন।’ যখন শফিউল্লাহ তার অফিসে পৌছান, তার এডিসি ক্যাপ্টেন কবির তাকে জানান যে প্রেসিডেন্ট মারা গিয়েছেন।
ডালিম গর্জে উঠে বলেন, ‘আপনার জানা উচিত যে খন্দকার মোশতাক এখন প্রেসিডেন্ট।’
শফিউল্লাহ বলেন ‘খন্দকার মোশতাক আপনার প্রেসিডেন্ট হতে পারে, আমার নয়’।
ডালিম বললেন, ‘আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেননা যা আমি এখানে করতে আসিনি।‘
শফিউল্লাহ উত্তর দেন, ‘তোমার যা ইচ্ছা তুমি করতে পারো, আমি তোমার সাথে কোথাও যাচ্ছিনা।‘
শফিউল্লাহকে ইসলামীব্লকপন্থী জিয়াউর রহমান এবং মুজিববিরোধী মেজর ডালিম উভয়ে হাইজ্যাক করে
শফিউল্লাহ এরপর তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান এবং ডালিম্ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ভেতর দিয়ে সোজা ছেচল্লিশ নম্বর ব্রিগেডে যান।কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে তিনি দেখতে পান ব্রিগেডের সকল সৈন্য এবং তাদের সকল অফিসারেরা চক্রান্তকারীদের সাথে যোগ দিয়েছে।সেখানে তিনি মেজর খন্দকার আব্দুর রশীদ এবং ৪৬ নম্বর ব্রিগেডের তৎকালীন মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এর দেখা পান।তারা তাকে বারংবার রেডিও ষ্টেশনে যাবার তাগিদ দিচ্ছিলো।শফিউল্লাহ তাদের বলেন যে তিনি একা রেডিও ষ্টেশনে যাবেননা।
পুরো সময়টা ধরে শফিউল্লাহ ভাবছিলেন।এটা তার কাছে পরিষ্কার ছিলো যে, সেনাবহিনীর বড় অংশটিই বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দিয়েছে।যেহেতু কেউ তার নির্দেশ মানছিলোনা সেহেতু সে সময় কিছু করার চেষ্টা করতে যাওয়াটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতো।শফিউল্লাহ স্বগোক্তি করেন, ‘আমাকে আগে আমার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে’।
পরে বিদ্রোহীরা নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার এ্যাডমিরাল এমএইচ খান এবং বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার সহ তিন প্রধানদের নিয়ে রেডিও ষ্টেশনে যায়।সেখানে শফিউল্লাহ দেখতে পান খন্দকার মোশতাক একটি কক্ষে বসে আছেন সাথে তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর।
শফিউল্লাহকে দেখার সাথে সাথে মুশতাক আন্দোলিত কন্ঠে বলেন, ‘শফিউল্লাহ, অভিনন্দন!তোমার সেনারা খুব ভালো কাজ করেছে। এখন বাকীটা সেরে ফেলো।’
‘সেটা কি?’ শফিউল্লাহ প্রশ্ন করেন।
‘সেটা আমার থেকে তুমি ভালো জানো’, মুশতাক উত্তর দেন।
‘সে ক্ষেত্রে এটা আমার উপর ছেড়ে দিন’।শফিউল্লাহ দ্রুত উত্তর দেন এবং কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন।
তখন তাহেরউদ্দিন ঠাকুর মুশতাককে বলেন, ‘ওনাকে যেতে দেবেননা।ওনার সঙ্গে আমাদের এখনও কিছু কাজ বাকী আছে’।
শফিউল্লাহ যখন বেরিয়ে আসছিলেন তখন তিনি দেখতে পান ডালিম এবং রশীদ সৈন্য নিয়ে দাড়িয়ে আছে এবং তারা তিন বাহিনীর প্রধানদের আর একটি কক্ষে নিয়ে আসে।
এর কিছুক্ষণ পর তাহেরউদ্দিন ঠাকুর কক্ষটিতে প্রবেশ করে এবং শফিউল্লাহকে খন্দকার মুশতাক এর সমর্থনে একটি লিখিত বক্তব্য জোরে পাঠ করতে বলে।কথামতো শফিউল্লাহ তাই করেন এবং বক্তব্যটি রেকর্ড করা হয়।রেকর্ড শেষ হয়ে গেলে মুশতাক ঘোষণা করেন, ‘আমি তিন বাহিনীর প্রধানদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেখতে চাই’।
মুজিব হত্যার সঙ্গে বাকশালের সংশ্লিষ্টতা

বাকশাল = বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ – অর্থাৎ এটিই প্রকৃতপক্ষে জনগণের দল, দেশের সেসময়ের ৮৫% কৃষক শ্রমিকের দল। তাদের দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যেই তাদের প্রাধান্য দিয়ে এই দল গঠন করা হয়েছিলো। বাকশাল ছিলো ২য় বিপ্লব । বাকশাল ছিলো সশস্ত্র বাহিনী – চরমপন্থী বামদল এবং বিত্তবান সমাজের বিরুদ্ধে এক মহাপ্রতিবাদ। বাকশাল প্রতিষ্ঠায় এই সংখ্যালঘু শ্রেণী অর্থাৎ ১৫% আর্মি/বিত্তবান/শহুরে জনগোষ্ঠীর স্বার্থ বিনষ্ট হয়। তাই তারা ক্ষেপে ওঠে, তাদের প্রতিক্রিয়াশীলতার মাধ্যমে তারা দেশের নবজাগরণকে ব্যহত করার জন্য বাকশালের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য অপপ্রচার চালায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বাংলাদেশের আর্মির অনেক সদস্য যারা একসময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলো, তারা বাকশাল পছন্দ করেনি। কারণ এতে আর্মিদের প্রতি সরকারী ব্যয় কমে যেত এবং সাধারণ মানুষের ওপর সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি পেত। ফলে, ফ্রি ফ্রি খাওয়াদাওয়া, সুযোগ সুবিধা নেওয়া এবং গলফ খেলা বিলিয়ার্ড খেলা টেনিস খেলা বের হয়ে যেত ! বাকশাল ছিলো সুবিধাবঞ্চিত জনগণের অবস্থা উন্নতির জন্য গঠিত দল। ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাকশাল সম্পর্কে বলেন – চিত্রটি দেখুন ( মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বই থেকে গৃহীত )
অর্থাৎ বাকশাল একটি গ্রহণযোগ্য বিষয় ছিলো সকলের কাছে এবং দেশের অরাজকতা নিরসনের জন্য তথা সামরিক খাতে খরচ হ্রাস করে গরীব মানুষের অবস্থার উন্নতি করার লক্ষ্যেই বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। সেটাকেই স্বার্থবাদী সশস্ত্র বাহিনী এবং মুনাভালোভী ব্যবসায়ী ও বিত্তবান শ্রেণী রোখার জন্য বাকশালের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে প্রোপাগান্ডা চালায়।
অর্থাৎ, স্বার্থে আঘাত লাগা থেকেই সশস্ত্র বাহিনী ও সুবিধাবাদীদের বাকশাল নিয়ে গোয়েবলসীয় অপপ্রচার এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ । বিস্তারিত জানতে অমি রহমান পিয়ালের দ্বিতীয় বিপ্লব বা বাকশাল : শুনুন বঙ্গবন্ধুর মুখেই -পড়ে দেখুন।
বাংলার মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে (১৯২০-১৯৭৫) স্বদেশের মাটি আর মানুষকে এমন গভীর মায়া মমতা ও ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধেছিলেন,যে বন্ধন কোনোদিন ছিন্ন হবার নয়। আজীবন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে,দরিদ্র নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে এমন অনন্য সংগ্রামী ভূমিকা রেখেছিলেন,যার নজির ইতিহাসে বিরল। মাত্র ৫৫ বছরের ক্ষুদ্র জীবনে ২৯ বার জেলে গিয়েছিলেন তিনি,এই বাংলা এবং বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। জীবনের অনেকগুলো মূল্যবান বছর কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন যিনি দেশ আর মানুষের মুক্তির জন্য, সেই প্রিয় স্বদেশের মানুষ যে তাকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করতে পারে,এ ছিল তাঁর কল্পনারও অতীত। এমন সিংহহৃদয় অবিসংবাদী মহান নেতাকে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী পর্যন্ত গুলি করে মারার সাহস পায়নি, ফাঁসি দেওয়ার পরিকল্পনা করেও ফাঁসি দিতে পারেনি। আর সেই মহান পুরুষকে কিনা মারলো তাঁরই প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশের কতিপয় ব্যক্তি ? জাতি হিসেবে বাঙালি জাতি যে কতটা সুবিধাবাদী স্বার্থপর ও সুযোগসন্ধানী হিংস্র নৃশংস এবং অকৃতজ্ঞ -কৃতঘ্ন, তার প্রমাণ এখানেই । নরপশু ঘাতকদের ২ জন এবং ষড়যন্ত্রকারীদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধাও ছিলো, এই কি মুক্তিযোদ্ধাদের নমুনা ? আজকে অনেক মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানপন্থী জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে জোট করা বিএনপির নেতা কর্মী ও সমর্থক। মুক্তিযোদ্ধারা যদি বাংলাদেশের পক্ষে হয়, ঘাতক নরপশু ও ষড়যন্ত্রকারীরা যদি মুক্তিযোদ্ধা হয়, তবে কি করে তারা বাংলাদেশের মহাস্থপতিকে ও মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করতে পারে ? কি করে আজকে অগণিত মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার জামাতের দোসর বিএনপিকে সমর্থন করতে পারে ? এজন্যই প্রাজ্ঞ ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন –
একবার যে রাজাকার, সব সময়ই সে রাজাকার। কিন্তু একবার যে মুক্তিযোদ্ধা, সবসময় সে মুক্তিযোদ্ধা না-ও থাকতে পারে।

মুজিব হত্যাকাণ্ডে বিচারের বাণী নিভৃতে কেঁদে বেড়িয়েছে ১৯৭৫-২০১০ এর ২৬শে জানুয়ারী পর্যন্ত । অবশেষে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে জাতি কিছুটা কলঙ্কমুক্ত হলো।
রাত ১ টার মধ্যে কার্যকর হয়ে গেল ৫ খুনির মৃত্যুদণ্ডাদেশ । ওদের ফাঁসির পরে যখন কফিন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো তখন দেখা গেল হাজার হাজার মানুষ সেই কফিনে থুতু এবং জুতা নিক্ষেপ করছে। এগুলো ছিলো জনগণের চরম কষ্ট ও যন্ত্রণার বঃহিপ্রকাশ। সেদিন প্রায় সারারাত জেগেছিল বাংলাদেশ। পরের দিন ২৮ শে জানুয়ারি গোটা দেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু জাতি পুরোপুরি কলঙ্কমুক্ত হয়নি আজও।
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার পরিজনের হত্যাকারী পলাতক আরো ৬ খুনী লে. ক. (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশীদ,মেজর (বরখাস্ত) শরীফুল ইসলাম ডালিম,মেজর (অব.) নূর চৌধুরী,রিসালদার মোসলেহউদ্দিন,লে. ক. (অব.) রাশেদ চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদকে এখনো পালিয়ে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যতদিন পর্যন্ত ঐ নরপশুদের ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো না যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত জাতি পুরোপুরি কলঙ্কমুক্ত হতে পারবেনা।
শফিক আলম মেহেদী কথায় নাসির খানের সুরে এবং গাজী মিজানের কণ্ঠে গাওয়া “তিনি কি আসবেন” গানটিই হোক আমাদের আশা ভরসা -

তিনি কি আসবেন/তিনি কি আসবেন/তিনি কি আসবেন/আবার আসবেন/যিনি চোখ তুলে তাকালে রোদ উঠতো ফুল ফুটতো পাখি ডাকতো/সাম্য স্বদেশ স্বাধীনতা করে করে/ আমলা হবার বাসনা – গৃহের নিবিড় সুখ জলাঞ্জলি দিলেন/সুনিপুণ স্থপতির মত মুক্ত স্বদেশ নির্মেঘ নীল আকাশ রেখে গেলেন/উত্তরসূরীদের অনায়াস অধিকারে/তিনি কি আসবেন/তিনি কি আসবেন/তিনি কি আসবেন/আবার আসবেন/বাংলার ঘরে ঘরে/অগণন সূর্যোদয়ের স্বপ্নিল প্রত্যাশায়/যৌবনের অনিন্দ্যসুন্দর অনেকগুলো বছর কারাবাসে কাটালেন যিনি আরণ্যক অন্ধকারে/তিনি কি আসবেন/তিনি কি আসবেন/তিনি কি আসবেন/আবার আসবেন/হ্যামিলনের আশ্চর্য বাঁশিওয়ালার মতন/বুনো হাওয়ায় যে কন্ঠ ভেসে এলে ঘর গৃহস্থালি বনবাদাড় উজাড় করে/ ছুটো যেত অযুত লক্ষ মানুষ/পল্টনে- রেসকোর্সে স্বপ্নের ঘোরে/ তিনি কি আসবেন/তিনি কি আসবেন/তিনি কি আসবেন/আবার আসবেন/যাকে দেখে পদ্মা মেঘনার উত্তাল তরঙ্গরাশি নত হতো বিপুল কুর্নিশে/ তিনি কি আসবেন/তিনি কি আসবেন/তিনি কি আসবেন/আবার আসবেন/আমাদের মাঝে পতিত পৃথিবীতে যার মুখ চেয়ে সন্তানপ্রতিম বাঙালি আমরা অনন্ত প্রার্থনার সুরে বলবো – হে জনক হে ঋষি এধুলো এ মাটি স্পর্শ করে দাও/ সোনা হোক সোনা হোক সোনা হোক – খাটি সোনা খাটি সোনা খাটি সোনা।
সূত্র :
১) কারা মুজিবের হত্যাকারী –এ এল খতিব (Who Killed Mujib – A L Khatib )
২) তিনটি সেনা অভ্যুথান ও কিছু না বলা কথা,লে কর্নেল এম এ হামিদ,মোহনা প্রকাশনী,১৯৯৫
৩) একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ রক্তাক্ত মধ্যআগষ্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর,কর্নেল শাফায়াত জামিল,সাহিত্য প্রকাশ , এপ্রিল ২০০০
৪) বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড:ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস,অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
৫) ভোরের হত্যাযজ্ঞ (ভোরের কাগজ:১৫ আগস্ট,২০০৫)
৬) পচাত্তরের পনেরই আগষ্ট,মেজর মো মুখলেছুর রহমান,আহমদ পাবলিশিং হাউজ,ঢাকা ১৯৯৬
৭) মুজিব হত্যায় সি আই এ,দেলোয়ার হোসেন,এশিয়া পাবলিকেশন,ঢাকা ১৯৯৬
৮) ক্রাচের কর্ণেল শাহাদুজ্জামান
৯) ভোরের কাগজ,১৫ আগষ্ট ১৯৯৩
১০) বাংলাবার্তা,১২ আগষ্ট ১৯৮৮
১১) সমকাল ১৩-১৪ আগষ্ট ২০০৮
১২) মিজানুর রহমান চৌধুরী,রাজনীতির তিনকাল
১৩) সৈয়দ আবুল মকসুদ : মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
১৪) সিরাজউদ্দিন আহমদ, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ
বিভিন্ন কলাম
১) সে রাতের হত্যাকাণ্ড – কাজী আব্দুল হান্নান
২) জিয়ার পক্ষে ফারুক-রশীদ অস্ত্র কিনতে মার্কিন দূতাবাসে যান – মিজানুর রহমান খান
৩) ‘অভ্যুত্থানকারীরা মুজিবকে হত্যার চেয়ে বেশি কিছু ভাবেনি’- মিজানুর রহমান খান
৪) ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রাখছিলেন কারা?’ – মিজানুর রহমান খান
৫) ইতিহাসের কাছে এ আমার দায় : আবেদ খান
৬) শোকাবহ আগস্ট: আমব্রিখটের চিঠি
৭) নতুন ষড়যন্ত্রের মুখে বাংলাদেশ, এবার টার্গেট শেখ হাসিনা – মিনা ফারাহ
৮) জিয়া সম্পর্কে প্রিয় সাইটের একটি রিপোর্ট
৯) অধিকাংশ দিন আত্মগোপনে থাকতাম: বাদী – কামরুল ইসলাম
১০) ১৫ই আগস্ট আরো নিহত হন যারা – বিডিনিউজ২৪
ইংরেজী গ্রন্থ
1. Additioinal Paper Books of Death Reference No. 30 of 1998 (Arising out of Sessions Case No. 319 of 1997)Judgement Passed by Mr. Kazi Golam Rasul District & Sessions Judge, Dhaka.
2. Bangladesh: A Legacy of Blood, by Anthony Mascarenhas, Hodder and Stoughton, 1986
3. Memoir written in 2005 by Lawrence Lifschultz
4.Bangladesh: The Unfinished Revolution by Lawrence Lifschultz, London: Zed Press, 1979
5. World in Action , ITV , Granda Television , August 1976
6. God willing: the politics of Islamism in Bangladesh ( By Ali Riaz)
7. Anatomy of a Coup: A Journey of a Quarter Century (Lawrence Lifschultz)
 

 

দূরের এবং কাছের, দেশে এবং দেশের বাইরের সকল বাংলা ভাষাভাষী ভাই বোনদের জানাই মুজিবীয় সুভেচ্ছা এবং  সকল শহীদদের প্রতি জ্ঞাপন করছি গভীর শ্রদ্ধা । স্বরণ  করছি অকুন্ঠ শ্রদ্ধাভরে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদদের । যে একবার যায় সে আর ফিরে না, এইতো বিধির অমোঘ নিয়ম। বাঙ্গালী জাতি যে সোনার মানুষটিকে হারিয়েছে এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট গুটিকয়েক বন্দুকধারী বিপথগামী কুজন্মা কুলাঙ্গার এই বিশ্বকাপানো বিশ্বনেতাকে রাতের অন্ধকারে কাপুরুষের মত স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার লাল সবুজের পতাকায় আবার চন্দ্রবিন্দু (চাঁদ তারা) বসানোর হীন চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিলো। ওরা এখনো গোটা দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে গঞ্জে আস্তানা গেড়ে আছে ধর্মের নামে, ইসলামের নামে, ধর্মীয় শিক্ষার নামে এবং ওদেরকে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আর্থিক সহায়তাসহ সার্বিক পরিচালনা করছে, তাদের কেউ না কেউ, কোনো না কোনোভাবে আওয়ামী লীগের ভিতরেও প্রবেশ করতে পেরেছে।

জাতিরজনকের স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়ণের ক্ষেত্রে ঠিক বঙ্গবন্ধুর মতো একই উদার নীতির বিপক্ষে কিছু কথা বলার জন্যই এ লেখা শুরু করেছি। হয়তো বুঝিনা, অথবা না বুঝেই পোদ্দারপট্টির অথর্ব প্রফুল্ল পোদ্দারের মতো দোকানে কোনো কাষ্টমার না থাকলে যেমন বিড় বিড় করত, ঠিক তেমনি কিছুক্ষণ বিড় বিড় করে ঘুমিয়ে পরবো । আমরা হচ্ছি ছাগলের তিন নম্বর। বাচ্ছা শব্দটি আর লিখলাম না। কারণ নেতানেত্রীগণ আমাদের যতোই বাচ্ছা বলে এড়িয়ে যাকনা কেনো আমরা আর বাচ্ছা নই, শুধু তাই নয়, আমাদের বাচ্ছারাও এখন মূখ ফুটে তাদের মনের কথা বলতে শিখেছে। আমাদের আগামী প্রজন্ম আমাদের পূর্বসূরিদের চেয়ে অনেক সতর্ক ও স্বচেতন মেধার অধিকারী ।এই প্রজন্মের শিশু কিশোরদের মেধা, প্রজ্ঞা আর মানসিক উৎকর্ষতার কাছে আমরা অতিশয় দুর্বল।

জাতিরজনকের ঔদার্য মহানুভবতা এবং অতি কোমল সহজ সরল মন মানসিকতাই তাঁর জীবনের এবং পরিবারের কাল হয়ে পৃথিবী থেকে তাঁকে অকালে সরিয়ে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সবুজ বিপ্লব” তথা “বাকসাল” বাস্তবায়ণ হলে আজ এ দেশ এবং এ দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠকামো হতো দখিন এশিয়ার মধ্যে সব চেয়ে উন্নত । বঙ্গবন্ধু দেশ জাতি এবং শোষিত জনগোষ্ঠীর কথা ভাববার অবসরে কখনো নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা, সন্তান সন্ততির অদূর ভবিষ্যতের কথা ভাববার অবকাশ পাননি। এমনও দিন গেছে সারা দিন গ্রামের পর গ্রাম পায়ে হেঁটে কর্মীদের সাথে, নেতানেত্রীদের সাথে দলীয় মিটিং সভা সমাবেশ করে করে সারাটি দিন অতিবাহিত করার পর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে কেউ বলে দিতেন, মুজিব ভাই, আমরাতো কিছু খাইনি আজ? যে ব্যক্তি নিজের ক্ষুধার কথা ভুলে যায় বাংলার শোষিত লাঞ্ছিত বঞ্চিত মেহনতি জনগোষ্ঠীর জন্য, সে মহান নেতা নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাববার অবকাশ পেয়েও ভাবেননি। বঙ্গবন্ধুর সাথে ওই একই রাতে নিহত কর্নেল শওকত জামিলের স্ত্রীর কাছ থেকে জানা গেলো আরো কত নানান রকম ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু ভেবেছেন এইতো জীবন যেমন চলছে সাদা মাটা নিত্য নৈমিত্তিক অন্য আর দশজন বাঙ্গালীর মতোই। আমাদের ভাগ্য ভালো যে ১৯৭৫ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বাংলাদেশে ছিলেন না।    

জননেত্রী শেখ হাসিনার দেহে বইছে জাতিরজনকের রক্তকণিকা । তিনিও দেখেছি  কারো কোনো  অতীব হৃদয় বিদারক করুণ ইতিহাস, ঘটনা বা কারো দুঃখ বেদনার বর্ণনা শুনে অবোধ বালিকার মতো চোখ মুছতে থাকেন। কাজেই স্বভাবজাত বাঙ্গালীর কন্যা বঙ্গ বন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাও বঙ্গবন্ধুর মতোই আবেগপ্রবণ এবং অতিশয় দুয়াবান। এই আবেগ অনুভূতি আর দয়াশীল মনোবৃত্তিই নেত্রীত্বের ব্যক্তিত্ত্বকে প্রশাসকের আসনে দুর্বল করে ফেলে বড় অন্যায় অপরাধের ক্ষেত্রেও বজ্র কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।

জাতিরজনককে হত্যার পর ওরা মেতে ওঠেছে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে হত্যার উন্মাদনায়। স্বাধীনতা বিরোধী এই খুনী মোস্তাকের অংশটি একত্রিত হয়েছে আল বদর আল শামস আর রাজাকার, পাকিস্তানের আইসিআই, আমেরিকান সিআইএ'র সাথে । বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে হত্যার নীল নকশা অংকন করেছে সাকা, বাবর, হারিস, সাঈদী, মুজাহিদ, নিজামী, কামাল হোসেন, চিশতী, ব্যারিষ্টার মঈনুলমেজর মতিন এবং ঘসেটি বেগম খালেদা জিয়া স্বয়ং ।

রাখে আল্লাহ মারে কে? মাঝ খান থেকে জাতি হারালো আই ভি রহমানের মত দেশপ্রেমিকাকে। আমরা হারালাম কতগুলো নিবেদিত দেশপ্রেমিক নেতানেত্রী । কতশত কর্মী ভক্ত সমর্থক অকালে পংগু হলো ২১ আগস্ট গগনবিদারী গ্রেনেড হামলায়।  শেখ হাসিনার কানে দেখা দিয়েছে শব্দতগ সমস্যা কিন্তু এবারের মত বেঁচে গিয়েছে বাঙ্গালী জাতিরজনকের জেষ্ঠ্যকণ্যা শেখ হাসিনা । যদি আমরা শেখ হাসিনাকে ওই দিন হারাতাম, আজ বাংলার ইতিহাস হতো অন্য রকম। হায়েনার কালো থাবা থেকে ২১ আগস্ট অবধারিত মৃত্যুর হাত থেকে  আল্লাহ্‌ তায়া'লা তাঁকে রক্ষা করেছেন। যুগে যুগে হিংস্র নরপশু নর ঘাতক, হিংস্র দানব দলে দলে আসবে, যাবে আর এরই মাঝে সতর্কতার সাথে বাঙ্গালী জাতিকে আগিয়ে যেতে হবে।

শেখ হাসিনা আমাদের চেয়ে ভালো করেই জানেন যে তাঁর শত্রু জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর চেয়েও ভয়ানক, হিংস্র এবং শক্তিশালী। ২১ অগাস্টই তার জলন্ত প্রমান । একথা নেত্রী তাঁর বক্তব্যে অনেক মঞ্চেই উল্লেখ্য করেছেন। তারপরেও কোনো একটি আশঙ্কা আমাদের মনকে বিচলিত করে, দুশ্চিন্তার পোকাগুলো কিলবিল করে, নাড়া দেয়। কি জানি কি হয়, যদি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঢিল পড়ে যায়? যদি কোনো মীর জাফর কোথাও লুকিয়ে থেকে থাকে? কে ওদেরকে খুঁজে বেড় করবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে অথবা সচিবালয়ের অফিস থেকে?

হতে পারে কারো কোনো ব্যক্তিগত  স্বার্থ উদ্ধার ও হাসিলের জন্যে র‍্যাবকে অর্থ দিয়ে এ কাজ করানো হয়েছে, হতে পারে লিমন সন্ত্রাসী নয়, হতে পারে সবই। যে দেশে ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যার দায়ে ফাঁসীর বদলে মন্ত্রীত্ব উপহার দেয়া হতে পারে, যে দেশে স্বাধীনতার মহানায়ক/স্থপতিকে স্বপরিবারে হত্যা করার পরে ওই মধ্যযূগীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করার পথ সাংবিধানিকভাবে রুদ্ধ করা হয়, সে দেশে সামান্য অস্ত্রধারী র‍্যাবের দ্বারা অনেক কিছুই সম্ভব। যে দেশে সেনাবাহিনী যখন যাকে খুশী খুন করে বলেঃ "আমিই দেশের রাজা, আমিই সেনাপতি" সে দেশে লিমনের মতো একটি সাধারণ কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে র‍্যাব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যে কোনো অজুহাতে পঙ্গু করে দেয়াটা অতীব ক্ষুদ্র বলে আমি মনে করি।  

বিষয়টি গুরুত্ব পেলো কেনো? কারন, আওয়ামী লীগের গায়ে অনেক দুর্গন্ধ তাই।  বিগত ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি জামাতের সীমাহীন দুর্নীতি, লুন্ঠন, হত্যা, ধর্ষণ, সন্ত্রাস আর অরাজকতার বিরুদ্ধে এই মিডিয়া কখনই মূখ খুলেনি কেনো? বাংলাদেশে ক্রসফায়ার কোন সরকারের আমল থেকে প্রবর্তিত হয়েছেএ কথা মিডিয়ার পা'চাটা অর্থ লিপ্সু লোভী সাংবাদিকদের মনে করিয়ে দিতে হবে।  এখানে একটি কথা আবারো বলতে চাই, মনে রাখবেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলেই র‍্যাবের সকল ইউনিট/সদস্য নৌকায় ভোট দিয়েছে এ কথা ভিত্তিহীন এবং হাস্যকর। ৭৫ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত কত হাজার সেনা সদস্য/অফিসার, বিডিআর সদস্য/অফিসার, পুলিশ সদস্য/অফিসার আওয়ামী লীগ নিয়োগ দিয়েছে? পরিসংখ্যানে দেখা যাবে দু'দুবার আঃলীগ ক্ষমতায় এলেও আওয়ামী সরকারের দেয়া নিয়োগপ্রাপ্ত প্রজাতন্ত্রের সকল সদস্য/অফিসার (সেনা, বিডি আর, পুলিশ এবং সরকারি অফিস আদালতে) এর সংখ্যা দাড়ায় মাত্র ৫%।    

কাজেই প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর হতে হয়, সতর্ক হতে হয়। সরকারের কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ণে হীম শীম খেতে হচ্ছে প্রতিটি অফিস আদালতে এবং জেলাসমূহের প্রশাসনের প্রতিটি টেবিলে প্রতিটি ক্ষেত্রে । যদি বিরোধী দলের কোনো ইস্যু না থাকে তাহলে আর কি করা। খালেদা জিয়া নিজের গায়ে আগুলাগিয়ে যুব লীগ বাঁ ছাত্রলীগের নামে মিথ্যে মামলা ঠুকতে পারেন কারন যাদের জন্ম তারিখটাই মিথ্যের বেসাতিতে ভরপুর, তাদের জন্য দুয়েকটি মিথ্যে বানোয়াট আর ভিত্তিহীন কাহিনী রচনা করা কঠিন কোনো কাজ নয়।

বিগত ৪০ বছরে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে ঘায়েল করা, নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যে মামলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে ঘরবাড়ী জমিজমা দখল, খুন, ধর্ষণ তথা বৃহৎ আওয়ামী শক্তিকে বাংলার মাটি থেকে চির তরে নিশ্চিনহ করার প্রকল্পসমূহ একাত্তুরের নির্লজ্জ হায়েনা পাকিস্তানের আইএসআই স্থানীয় স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক দালাল রাজাকারদের দ্বারা বাস্তবায়নে অর্থ যোগান দিয়ে যাচ্ছে। আর মিডিয়ার দালাল গুলোতো আছেই। তাদেরও পত্রিকার ব্যবসা ভালো চলবে। ওরা আবার কোন দিন খালেদা জিয়াকে মাছ ধরার জাল পরিয়ে বলবে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।

আমি ক্ষমা চাইছি দেরীতে শীবের গীত গাইবার জন্য আমি একটা কথা আগেই বলে রাখি যে আমি কিন্তু রাজ্জাকভাইয়ের সরাসরি রাজনৈতিক কর্মী ছিলাম ৬৬ থেকে ৭১ পর্যন্ত আমি নিজে দাদা নামের গাঞ্জাখোর গুরুর দীক্ষা নেবার সুযোগ পাইনি কিন্তু তার কর্মকাণ্ডের সব সংবাদাদি তাতক্ষ্ণিকভাবে জানতে পারতাম বিশেষ করে বি এল এফ এর সাথে রাজ্জাকভাই, মনিভাই সরাসরি জড়িত ছিলেন জুয়েল শুরুতেই একটি সুন্দর ক্যাপশন দিয়ে আরম্ভ করেছে আর সেটি ছিলো রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ সি খানের ভন্ডামী প্রসঙ্গে এই বড়াকে আবশ্যই আমাদের শ্রদ্ধা করতে হবে যেমন শ্রদ্ধা করতে হবে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকেও আমাদের আপনভাই, চাচা, ফুফা, দাদা অথবা অন্য কোনো একান্তজন বদ্ধ উন্মাদ হলে পারা প্রতিবেশির সাথে তাল মিলিয়ে আমরা তো জুতা নিক্ষেপ করতে পারিনা কারণ ওরা স্বাধীনতার স্বাপক্ষশক্তি রব এবং শাহজাহান সিরাজো ওই একই সারির ব্যর্থ অপদার্থ মুক্তিযোদ্ধা এবং সংগঠক ওরা আছে বলেইতো ১৭ কোটি মানুষ মুল্যায়ণ করতে পারে যে " কে চোর আর কে পুলিশ? এই বড়ার প্রসঙ্গে আগে আমি হাবীব এবং জুয়েল অনেক লিখেছি ওনার কিছু শীষ্য আছে, তার মধ্যে " লুইচ্ছা বাবা সেফাত আলী নং , মিল্টন হাসনাত নং ,

২০২১ সালের মধ্যে আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দ্রব্যমূল্য হ্রাস ও মহামন্দা রোধ, দুনীতি দমন,জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে আওয়ামী লীগ দিন বদলের সনদ নামে ২৩ দফা নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে৷ ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস কঠোর হস্তে দমন করার অঙ্গিকার করা হয়েছে৷ ২০২১ সালকে টার্গেট করে আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে৷ এ প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০১৩ সালে অর্থাৎ ৪ বছরের মধ্যে দেশকে পুনরায় খাদ্যে আত্মনির্ভরশীল করা, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা, বেকারত্বের হার ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, আগামী ৫ বছরে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ৪৫ শতাংশ থেকে ২৫-এ নামিয়ে আনা, ৱাতক পর্যন্ত শিক্ষাকে সবার জন্য অবৈতনিক করা, দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট ও ভাতের অধিকার দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার-এই শ্লোগানের ভিত্তিতে রচিত এ ইশতেহার ভিশন-২০২১ নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণী যারা প্রথম ভোটার হয়েছেন তাদেরকে উৎসর্গ করেন৷।

ইশতেহারে গভীর সংকট থেকে দেশকে উদ্ধার করে ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে উন্নয়ন,গণতন্ত্র, শান্তি ও প্রগতির পথে এগিয়ে নেয়ার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করা হয়৷ চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, দ্রব্য মূল্য সন্ত্রাসী সিণ্ডিকেট ভেঙে দেয়া, বিশ্ব-মন্দা মোকাবিলায় টাস্ক ফোর্স গঠন এবং তথ্য বিশ্লেষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার কথা ইশতেহারে বলা হয়েছে৷

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে৷ আরও বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হবে ২০ হাজার মেগাওয়াট৷ ৩ বছর মেয়াদি ক্র্যাস প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করে ২০১৩ সালের মধ্যে ৭ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০১৫ সালের মধ্যে ৮ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে৷ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করাসহ বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা,সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মানবাধিকার, আইনের শাসন ও নাগরিক মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করা হবে৷ শিক্ষা,বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ ব্যয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা, নতুন শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করে শিক্ষা-ব্যবস্থা আধুনিক, ২০১৩ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা এবং ২০১৫ সালের মধ্যে সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করা হবে৷ ঢাকায় আরেকটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর,পদ্মা সেতু নির্মাণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সড়ক,রেল ও নৌ পথের আধুনিকায়ন করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে৷ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতি সত্তা ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন বাতিল করা হবে৷ সার্ক, বিমসটেকসহ আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার এবং ইসলামিক উম্মাহর সংহতি ও ইসলামি দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা উন্নততর করা হবে৷ সমমর্যাদার ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে ‘সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’-এই নীতির ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হবে৷

সমগ্র জাতির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ইশতেহার বাস্তবায়ন করে নতুন প্রজন্মকে সুন্দর ও সফল ভবিষ্যৎ উপহার দেয়ার অঙ্গীকার করেন শেখ হাসিনা

 

 

 

আমার সকল দুঃখের প্রদ্বীপ 

বঙ্গবন্ধুর খুনী এবং সকল রাজাকারের

অনতিবিলম্বে ফাঁসি কার্যকর করা হোক। 

The memorial music album of Bangabandhu “mukthir gaan” 1 2 & 3 you may listen on:

Horrific history of Bengal

https://amibangalee.webs.com/

https://bangabandhuporisad.webs.com/

https://bangabandhu.webs.com

https://sheikhhasina.blog.com

https://bangabandhuporisadmv.blogspot.com

https://thegreatestbangalee.blogspot.com

https://theburningnation.weebly.com/

https://charterofchange.blogspot.com/

https://charterofchange2021.blogspot.com/

https://august75tragedy.blogspot.com

https://thefatherofnation.blogspot.com

https://mujibshena.blogspot.com

https://bangladeshawamileague.webs.com

https://worldawamileague.blogspot.com

https://jathirpitha.wordpress.com

https://skmujiburrahman.blogspot.com

https://skhasinawajed.blogspot.com

https://deshratna.weebly.com

https://swadhinbangla.webs.com

https://digitalbangladesh.blog.com

https://thepatriotism.blog.com

https://bdpolitics.blog.com

https://warcrime1971.webs.com

https://warcrime1971.blogspot.com

https://warcrime1971.weebly.com

https://muktimusician.livejournal.com

https://moktelhossainmukthi.blog.com

https://mukthi.xanga.com

https://muktimusician.blog.co.in

https://muktirpata.weebly.com

https://khasherhat.blogspot.com

https://soundcloud.com/muktimusician

https://muktimusician.multiply.com/

https://muktimusician.xanga.com

https://muktishena71.typepad.com

https://muktishena71.webnode.com

https://muktimusician.typepad.com

https://muktimusician.posterous.com

https://amramujibshena.blog.com/

https://www.blogigo.co.uk/muktimusician

https://mukthimadaripuri.blog.co.in

https://muktimusician.blog.com

https://muktimadaripuri.blogspot.com

https://muktimusician.blogspot.com

https://mukthircollection.blogspot.com

https://blogtown.co.nz/muktimusician/

https://muktimusician.photobucket.com/

https://bentio.com/muktimusician

https://muktimusician.wordpress.com

https://muktimusician.blogspot.com

https://bd.linkedin.com/in/muktimusician

https://mukthircollection.blogspot.com

https://www.caringbridge.org/muktimusician

https://en.wikipedia.org/wiki/Muktimusician

https://muktimusician.myblogsite.com

https://muktishena71.bloggy.se/

https://friendfeed.com/muktimusician

https://muktimusicina.twitpic.com/

https://www.netlog.com/muktimusician

https://www.squidoo.com/muktimusician

https://priyo.com/muktimusician

https://muktimadaripuri.blogspot.com

https://muktimusician.mediashare.com

https://freedomfighters71.blogspot.com

https://muktimusician.picturepush.com

https://community.webshots.com/user/muktimusician

https://thegenerationnext.webs.com

https://thefutureleader.webnode.com

https://ziaandrazakars.blogspot.com

https://khaledaziaandrazakars.wordpress.com

https://warcriminalsinbangladesh.wordpress.com

https://warcriminalsinbangladesh.blogspot.com

https://warcriminalnizami.blogspot.com

https://warcriminalsakachoudhury.blogspot.com

https://godfathertareqzia.blogspot.com

https://razakarnizami.blogspot.com

https://barristertaposhfanclub.blogspot.com

www.myspace.com/muktimusician

www.orkut.com/warcriminalsinbangladesh

www.warcriminalsinbangladesh.hi5.com

www.facebook.com/muktimusician

www.picasaweb.com/muktimusician

www.orkut.com/muktimusician

www.muktimusician.hi5.com

www.youtube.com/deshnetree

www.youtube.com/muktisena71

www.youtube.com/nizami71

www.tagged.com/amibangali

www.tagged.com/muktimusician

www.tagged.com/deshratna

www.youtube.com/muktimusician

www.shtyle.fm/muktimusician

www.orkut.com/muktimusician

www.quepasa.com/muktimusician

www.tagged.com/mukthimadaripuri

www.tagged.com/muktithegreat

www.tagged.com/amibangali

www.tagged.com/khankirpolababar

www.bebo.com/muktimusician

www.hibuu.com/muktimusician

www.twitter.com/muktimusician

www.zimbio.com/member/muktimusician

www.facebook.com/deshratna2009

www.facebook.com/sheikhhasinafanclub

www.facebook.com/shadhinatha

www.facebook.com/jatirjanokbangabandhu

www.facebook.com/thebrokenbackbone

www.facebook.com/proggasrijanikhelaghor

www.blogigo.co.uk/muktimusician

www.playlist.com/muktimusician

www.last.fm/user/muktimusician

www.somewhereinblog.net/blog/muktimusician

https://www.facebook.com/bangabandhu.parisod

www.facebook.com/durnithi.rajnithi

www.facebook.com/jatirjanokbangabandhu

www.facebook.com/shadhinatha

www.facebook.com/deshratna2009

www.youtube.com/muktimusician

www.myspace.com/muktimusician

www.dailymotion.com/muktimusician

https://www.facebook.com/sheikhrussellrahman

Email ID:

muktimusician@gmail.com

muktimusician@usa.com

muktimusician@europe.com

muktibhai@hotmail.com

mukthimadaripuri@gmail.com

muktimadaripuri1953@yahoo.com

muktishena71@gmail.com

mujibshena@yahoo.com

deshratna2009@gmail.com

muktisena71@yahoo.com

m.ukthi@live.com

sheikhrussell@live.com

মুক্তির কথা মুক্তির ব্যাথা

যায়না বলা যথা তথা

ইসলামের ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অপূর্ব মিল। দেশ স্বাধীন করলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা আর মাত্র তিন বছর পর ১৯৭৫ সালে ক্ষমতা দখল করলো দেশের স্বাধীনতা-বিরোধীরা। বাংলাদেশ জাতীর পিতাসহ কয়েক হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসী দিয়ে হত্যা করা হল। পাকি দালাল শাহ আজিজ হল প্রধানমন্ত্রী। কুখ্যাত রাজাকার আব্দুল আলীম হল জিয়ার মন্ত্রী পরিষদের সদস্য। অন্যান্য সব পাকি যুদ্ধাপরাধী দালালরা, সামরিক ও বেসামরিক পদ দখল করলো। চেষ্টা করলো আমাদের বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানানোর

১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট গুটিকয়েক বন্দুকধারী বিপথগামী কুজন্মা কুলাঙ্গার এই বিশ্বকাপানো বিশ্বনেতাকে রাতের অন্ধকারে কাপুরুষের মত স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার লাল সবুজের পতাকায় আবার চন্দ্রবিন্দু (চাঁদ তারা) বসানোর হীন চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিলো। ওরা এখনো গোটা দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে গঞ্জে আস্তানা গেড়ে আছে ধর্মের নামে, ইসলামের নামে, ধর্মীয় শিক্ষার নামে এবং ওদেরকে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আর্থিক সহায়তাসহ সার্বিক পরিচালনা করছে, তাদের কেউ না কেউ, কোনো না কোনোভাবে আওয়ামী লীগের ভিতরেও প্রবেশ করতে পেরেছে।

জাতিরজনকের স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়ণের ক্ষেত্রে ঠিক বঙ্গবন্ধুর মতো একই উদার নীতির বিপক্ষে কিছু কথা বলার জন্যই এ লেখা শুরু করেছি। হয়তো বুঝিনা, অথবা না বুঝেই পোদ্দারপট্টির অথর্ব প্রফুল্ল পোদ্দারের মতো দোকানে কোনো কাষ্টমার না থাকলে যেমন বিড় বিড় করত, ঠিক তেমনি কিছুক্ষণ বিড় বিড় করে ঘুমিয়ে পরবো । আমরা হচ্ছি ছাগলের তিন নম্বর। বাচ্ছা শব্দটি আর লিখলাম না। কারণ নেতানেত্রীগণ আমাদের যতোই বাচ্ছা বলে এড়িয়ে যাকনা কেনো আমরা আর বাচ্ছা নই, শুধু তাই নয়, আমাদের বাচ্ছারাও এখন মূখ ফুটে তাদের মনের কথা বলতে শিখেছে। আমাদের আগামী প্রজন্ম আমাদের পূর্বসূরিদের চেয়ে অনেক সতর্ক ও স্বচেতন মেধার অধিকারী ।এই প্রজন্মের শিশু কিশোরদের মেধা, প্রজ্ঞা আর মানসিক উৎকর্ষতার কাছে আমরা অতিশয় দুর্বল। আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্য কি করেছি ? ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্য কি করেছি ? প্রাণঢালা ভালবাসা কি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপনের জন্য যথেষ্ট ??? চার বছর অনেক স্বল্প সময় আবার অনেক দীর্ঘ সময়। আর বছর গুনতে চাইনা। এসো হাত ধরি। আমরা আমাদের বঙ্গবন্ধুর জন্য কারও দিকে চেয়ে থাকতে পারি না। আমাদের যা কিছু আছে তা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কথা বলব।

জাতিরজনকের ঔদার্য মহানুভবতা এবং অতি কোমল সহজ সরল মন মানসিকতাই তাঁর জীবনের এবং পরিবারের কাল হয়ে পৃথিবী থেকে তাঁকে অকালে সরিয়ে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর “সবুজ বিপ্লব” তথা “বাকসাল” বাস্তবায়ণ হলে আজ এ দেশ এবং এ দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠকামো হতো দখিন এশিয়ার মধ্যে সব চেয়ে উন্নত । বঙ্গবন্ধু দেশ জাতি এবং শোষিত জনগোষ্ঠীর কথা ভাববার অবসরে কখনো নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা, সন্তান সন্ততির অদূর ভবিষ্যতের কথা ভাববার অবকাশ পাননি। এমনও দিন গেছে সারা দিন গ্রামের পর গ্রাম পায়ে হেঁটে কর্মীদের সাথে, নেতানেত্রীদের সাথে দলীয় মিটিং সভা সমাবেশ করে করে সারাটি দিন অতিবাহিত করার পর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে কেউ বলে দিতেন, মুজিব ভাই, আমরাতো কিছু খাইনি আজ? যে ব্যক্তি নিজের ক্ষুধার কথা ভুলে যায় বাংলার শোষিত লাঞ্ছিত বঞ্চিত মেহনতি জনগোষ্ঠীর জন্য, সে মহান নেতা নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাববার অবকাশ পেয়েও ভাবেননি। বঙ্গবন্ধুর সাথে ওই একই রাতে নিহত কর্নেল শওকত জামিলের স্ত্রীর কাছ থেকে জানা গেলো আরো কত নানান রকম ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু ভেবেছেন এইতো জীবন যেমন চলছে সাদা মাটা নিত্য নৈমিত্তিক অন্য আর দশজন বাঙ্গালীর মতোই। আমাদের ভাগ্য ভালো যে ১৯৭৫ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বাংলাদেশে ছিলেন না।    

জননেত্রী শেখ হাসিনার দেহে বইছে জাতিরজনকের রক্তকণিকা । তিনিও দেখেছি  কারো কোনো  অতীব হৃদয় বিদারক করুণ ইতিহাস, ঘটনা বা কারো দুঃখ বেদনার বর্ণনা শুনে অবোধ বালিকার মতো চোখ মুছতে থাকেন। কাজেই স্বভাবজাত বাঙ্গালীর কন্যা বঙ্গ বন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাও বঙ্গবন্ধুর মতোই আবেগপ্রবণ এবং অতিশয় দয়াবান। ‘এই আবেগ অনুভূতি আর দয়াশীল মনোবৃত্তিই নেত্রীত্বের ব্যক্তিত্ত্বকে প্রশাসকের আসনে দুর্বল করে ফেলে বড় অন্যায় অপরাধের ক্ষেত্রেও বজ্র কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।

জাতিরজনককে হত্যার পর ওরা মেতে ওঠেছে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে হত্যার উন্মাদনায়। স্বাধীনতা বিরোধী এই খুনী মোস্তাকের অংশটি একত্রিত হয়েছে আল বদর আল শামস আর রাজাকার, পাকিস্তানের আইসিআই, আমেরিকান সিআইএ'র সাথে । বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে হত্যার নীল নকশা অংকন করেছে সাকা, বাবর, হারিস, সাঈদী, মুজাহিদ, নিজামী, কামাল হোসেন, চিশতী, ব্যারিষ্টার মঈনুল,  মেজর মতিন এবং ঘসেটি বেগম খালেদা জিয়া স্বয়ং ।

রাখে আল্লাহ মারে কে? মাঝ খান থেকে জাতি হারালো আই ভি রহমানের মত দেশপ্রেমিকাকে। আমরা হারালাম কতগুলো নিবেদিত দেশপ্রেমিক নেতানেত্রী । কতশত কর্মী ভক্ত সমর্থক অকালে পংগু হলো ২১ আগস্ট গগনবিদারী গ্রেনেড হামলায়।  শেখ হাসিনার কানে দেখা দিয়েছে শব্দতগ সমস্যা কিন্তু এবারের মত বেঁচে গিয়েছে বাঙ্গালী জাতিরজনকের জেষ্ঠ্যকণ্যা শেখ হাসিনা । যদি আমরা শেখ হাসিনাকে ওই দিন হারাতাম, আজ বাংলার ইতিহাস হতো অন্য রকম। হায়েনার কালো থাবা থেকে ২১ আগস্ট অবধারিত মৃত্যুর হাত থেকে  আল্লাহ্‌ তায়া'লা তাঁকে রক্ষা করেছেন। যুগে যুগে হিংস্র নরপশু নর ঘাতক, হিংস্র দানব দলে দলে আসবে, যাবে আর এরই মাঝে সতর্কতার সাথে বাঙ্গালী জাতিকে আগিয়ে যেতে হবে।

শেখ হাসিনা আমাদের চেয়ে ভালো করেই জানেন যে তাঁর শত্রু জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর চেয়েও ভয়ানক, হিংস্র এবং শক্তিশালী। ২১ অগাস্টই তার জলন্ত প্রমান । একথা নেত্রী তাঁর বক্তব্যে অনেক মঞ্চেই উল্লেখ্য করেছেন। তারপরেও কোনো একটি আশঙ্কা আমাদের মনকে বিচলিত করে, দুশ্চিন্তার পোকাগুলো কিলবিল করে, নাড়া দেয়। কি জানি কি হয়, যদি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঢিল পড়ে যায়? যদি কোনো মীর জাফর কোথাও লুকিয়ে থেকে থাকে? কে ওদেরকে খুঁজে বেড় করবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে অথবা সচিবালয়ের অফিস থেকে?

হতে পারে কারো কোনো ব্যক্তিগত  স্বার্থ উদ্ধার ও হাসিলের জন্যে র‍্যাবকে অর্থ দিয়ে এ কাজ করানো হয়েছে, হতে পারে লিমন সন্ত্রাসী নয়, হতে পারে সবই। যে দেশে ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যার দায়ে ফাঁসীর বদলে মন্ত্রীত্ব উপহার দেয়া হতে পারে, যে দেশে স্বাধীনতার মহানায়ক/স্থপতিকে স্বপরিবারে হত্যা করার পরে ওই মধ্যযূগীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করার পথ সাংবিধানিকভাবে রুদ্ধ করা হয়, সে দেশে সামান্য অস্ত্রধারী র‍্যাবের দ্বারা অনেক কিছুই সম্ভব। যে দেশে সেনাবাহিনী যখন যাকে খুশী খুন করে বলেঃ "আমিই দেশের রাজা, আমিই সেনাপতি" সে দেশে লিমনের মতো একটি সাধারণ কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে র‍্যাব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যে কোনো অজুহাতে পঙ্গু করে দেয়াটা অতীব ক্ষুদ্র বলে আমি মনে করি।

বিষয়টি গুরুত্ব পেলো কেনো? কারন, আওয়ামী লীগের গায়ে অনেক দুর্গন্ধ তাই।  বিগত ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি জামাতের সীমাহীন দুর্নীতি, লুন্ঠন, হত্যা, ধর্ষণ, সন্ত্রাস আর অরাজকতার বিরুদ্ধে এই মিডিয়া কখনই মূখ খুলেনি কেনো? বাংলাদেশে ক্রসফায়ার কোন সরকারের আমল থেকে প্রবর্তিত হয়েছে?  এ কথা মিডিয়ার পা'চাটা অর্থ লিপ্সু লোভী সাংবাদিকদের মনে করিয়ে দিতে হবে।  এখানে একটি কথা আবারো বলতে চাই, মনে রাখবেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলেই র‍্যাবের সকল ইউনিট/সদস্য নৌকায় ভোট দিয়েছে এ কথা ভিত্তিহীন এবং হাস্যকর। ৭৫ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত কত হাজার সেনা সদস্য/অফিসার, বিডিআর সদস্য/অফিসার, পুলিশ সদস্য/অফিসার আওয়ামী লীগ নিয়োগ দিয়েছে? পরিসংখ্যানে দেখা যাবে দু'দুবার আঃলীগ ক্ষমতায় এলেও আওয়ামী সরকারের দেয়া নিয়োগপ্রাপ্ত প্রজাতন্ত্রের সকল সদস্য/অফিসার (সেনা, বিডি আর, পুলিশ এবং সরকারি অফিস আদালতে) এর সংখ্যা দাড়ায় মাত্র ৫%। কাজেই প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর হতে হয়, সতর্ক হতে হয়। সরকারের কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ণে হীম শীম খেতে হচ্ছে প্রতিটি অফিস আদালতে এবং জেলাসমূহের প্রশাসনের প্রতিটি টেবিলে প্রতিটি ক্ষেত্রে । যদি বিরোধী দলের কোনো ইস্যু না থাকে তাহলে আর কি করা। খালেদা জিয়া নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে যুব লীগ বাঁ ছাত্রলীগের নামে মিথ্যে মামলা ঠুকতে পারেন।

কারন যাদের জন্ম তারিখটাই মিথ্যের বেসাতিতে ভরপুর, তাদের জন্য দুয়েকটি মিথ্যে বানোয়াট আর ভিত্তিহীন কাহিনী রচনা করা কঠিন কোনো কাজ নয়। বিগত ৪০ বছরে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে ঘায়েল করা, নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যে মামলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে ঘরবাড়ী জমিজমা দখল, খুন, ধর্ষণ তথা বৃহৎ আওয়ামী শক্তিকে বাংলার মাটি থেকে চির তরে নিশ্চিনহ করার প্রকল্পসমূহ একাত্তুরের নির্লজ্জ হায়েনা পাকিস্তানের আইএসআই স্থানীয় স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক দালাল রাজাকারদের দ্বারা বাস্তবায়নে অর্থ যোগান দিয়ে যাচ্ছে। আর মিডিয়ার দালাল গুলোতো আছেই। তাদেরও পত্রিকার ব্যবসা ভালো চলবে। ওরা আবার কোন দিন খালেদা জিয়াকে মাছ ধরার জাল পরিয়ে বলবে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। গোলাম আযম আর জামাত একই সূত্রে গাঁথা এবং দুটি নামই একাত্তুরের গণহত্যা খুন ধর্ষণ লুন্ঠনের সাথে অতপ্রতভাবে জড়িতছিলো। এ'দুটিকে বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার করার অর্থই জাতির সাথে প্রতারণা করা এবং বিচারের নামে একটি ভন্ডামী বা সাজানো নাটক। এ কথা কেউ না স্বীকার না করলেও আওয়ামী লীগকে স্বীকার করতেই হবে, কারন আওয়ামী লীগই এই গণহত্যার একমাত্র স্বাক্ষী ও শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা রাখে। শাক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখা যায় না, কেউ রাখার চেষ্টা করলেও প্রকৃতির অদম্য হাওয়া তার গন্ধ বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়। এ বিধির এক অপার মহিমা। কেউ যদি লুনা মুসার বেয়াই হয়ে যুদ্ধাপরাধীর সাজা মৌকুফের জন্যে উল্টা পাল্টা বাক্য ছড়ানোর চেষ্টা করে। সবাই ক্ষমা করলেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সৈনিক একটিও যদি বেঁচে থাকে, ক্ষমা করবে না। পৃথিবীর যেখানে যেভাবে থাকুক তার প্রতিবাদ করবে। এর জন্যে গড়ে উঠবে আর একটি প্রজন্ম প্লাটফর্ম যেখানে নতুন প্রজন্মের সোনার ছেলেরা দাঁড়িয়ে পড়বে একাত্তুরের ঘাতক দালালের গণহত্যার করুন ইতিহাস। সেখান থেকেই অগ্নিগিরির লেলিহান শিখা প্রজ্বলিত হবে হায়েনার বিরুদ্ধে।

আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক প্রগতীশীল রাজনৈতিক দল। বামপন্থীদের নিয়ে মাঝে মাঝে আওয়ামী লীগ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে থাকে বটে এবং এমন অবস্থা সত্তুর একাত্তুরেও ঘটেছিলো। ১৯৭১ এ জাতির দুর্দিনে ওদের কট্টর মনোভাবাপন্য কয়েকজনের ভুমিকা খুবই প্রশংসনীয় ছিলো বতে দ্বিধা নেই। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বামপন্থীদের অগ্রণী ভূমিকা বিজয় অর্জনে অনেক সহায়ক হয়েছিলো সে কথা অনেকেই জানেন। তাই ওদের এই কট্টর নীতি আমি খুব শ্রদ্ধার সাথেই সমর্থন করি। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়িনা কিন্তু মনে প্রানে বিশ্বাসে ধ্যানে জ্ঞানে একান্তই ১০০ ভাগ মুসলিম। প্র্যয়াতঃ কমরেড ফরহাদ ভাই আমার চোখের সামনে ষ্ট্রোক করে মারা গিয়েছিলেন। তার কিছু কথা অলপ অল্প মনে আছে। তিনি বলতেনঃ তুমি নামাজ পড়তে গিয়েছিলো এ কথাটি বার বার সচিব মহোদয়কে কেনো বলতে ছিলে? তুমি ঢোল পিটিয়ে বলতে চাও যে তুমি মুসলিম এবং নামাজ পড়ো। আমি বোকা বনে গেলাম। বললাম 'না ভাই আমার ভুমি সচিব মহোদয় শুনেছেন কিনা তাই রিপিট করেছি। কারন আমি না বলেই গিয়েছিলাম। তিনি বললেন, লোক দেখানো নামাজ পড়ো না। যদি পার অন্তর থেকে পড়ো, আল্লাহ্‌ যেখানেই থাক তিনি কবুল করবেন।"

আমরা বাঙ্গালী মুসলিমের সংখ্যা যতো বেশীই হই আর কমই হই, হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান ভাই ভাই, বাঙ্গালী ছাড়া মোদের কোন পরিচয় নাই" ৬৯ শ্লোগানের ভিত্তিতেই আইউব শাহীর বিরুদ্ধে গণ অভভুথান গড়ে ঊঠেছিলো। অন্যথায় তখন যদি বঙ্গবন্ধু শুধু শের ই বাংলা মাওলানা ভাসানী এবং হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ারদ্দীর পূর্ব সূত্র ধরে ইসলাম আর বিসমিল্লাহ্‌' 'র দোহাই দিয়ে আন্দোলনের ডাক দিতেন, মনে হয় আইউব শাহীর বিরুদ্ধে গণ অভভুথান সার্থক করার জন্য হাজার খানেক লোক পাওয়া যেতো । আমাদের ভিতরে এখনো পাকি পাকি গন্ধ রয়ে গেছে। জামায়াত বি এন পি'র পিতা ঘাতক জিয়াউর রহমান গোলাম আযম এবং শাহ আজিজুর রহমানের পরামর্শে এই বিসমিল্লাহ্‌ সংযোজন করেছিলো যাতে সৌদি বাবার সাহায্য পাওয়া যায়। আর আমাদের ধর্ম প্রিয় ধর্ম ভীরু বাঙ্গালী মুসলমানগণ ওই ভন্ড হুজুরের ভন্ডামীতে গলে গদ গদ হয়ে গেলেন। সাঈদীর ক্ষমতা বেড়ে গেলো ১০০০০ মেগাওয়াট। আর ওই সুন্দরী ঘসেটি বেগম যে "ওজু কতো ফরজ এবং নামাজ কতো ফরজ? সে কথাই জানে না এ কথাটি আপনি কী করে জামাত বি এন পি'র সমর্থকদের বুঝাবেন?

আমি ক্ষমা চাইছি দেরীতে শীবের গীত গাইবার জন্য। আমি একটা কথা আগেই বলে রাখি যে আমি কিন্তু রাজ্জাকভাইয়ের সরাসরি রাজনৈতিক কর্মী ছিলাম ৬৬ থেকে ৭১ পর্যন্ত। আমি নিজে দাদা নামের গাঞ্জাখোর গুরুর দীক্ষা নেবার সুযোগ পাইনি কিন্তু তার কর্মকাণ্ডের সব সংবাদাদি তাতক্ষ্ণিকভাবে জানতে পারতাম। বিশেষ করে বি এল এফ এর সাথে রাজ্জাকভাই, মনিভাই সরাসরি জড়িত ছিলেন। জুয়েল শুরুতেই একটি সুন্দর ক্যাপশন দিয়ে আরম্ভ করেছে আর সেটি ছিলো রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ সি আ খানের ভন্ডামী প্রসঙ্গে। এই বড়াকে আবশ্যই আমাদের শ্রদ্ধা করতে হবে যেমন শ্রদ্ধা করতে হবে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকেও। আমাদের আপনভাই, চাচা, ফুফা, দাদা অথবা অন্য কোনো একান্তজন বদ্ধ উন্মাদ হলে পারা প্রতিবেশির সাথে তাল মিলিয়ে আমরা তো জুতা নিক্ষেপ করতে পারিনা। কারণ ওরা স্বাধীনতার স্বপক্ষশক্তি। আ স ম আ রব এবং শাহজাহান সিরাজো ওই একই সারির ব্যর্থ অপদার্থ মুক্তিযোদ্ধা এবং সংগঠক । ওরা আছে বলেইতো ১৭ কোটি মানুষ মুল্যায়ণ করতে পারে যে " কে চোর আর কে পুলিশ? এই বুড়ার প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে ফেসবুক বন্ধু হাবীব, জুয়েল, রনি, রতন মজুমদার, এ, কে আজাদ অনেকলেখালেখি করেছি। কি হবে? আওয়ামী লীগের কি আর কোন কাজ নেই যে ওদের পিছনে তাড়া করে বেড়াবে? ওনার কিছু শীষ্য আছে, তার মধ্যে " বিশ্ব লুইচ্ছা বাবা সেফাত আলী নং ১, মিল্টন হাসনাত নং ২, খালেদুর রহমান সাকিল নং ৩, এদের অনেকে অর্থের লোভে নিজের ধর্মকে পরিবর্তন করে ইসলামের বিরুদ্ধে এবং জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু তথা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙ্গালীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগ কর্তৃক ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব বিষয়ক ভুল তথ্য প্রচারে ঊঠে পরে লেগেছে। মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন কাহিনী রচনা করছে মুজিব বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতার নামি নিয়ে। শাকিল বঙ্গবন্ধুর সরাসরি একটি আইডি চালায়, শেখ হাসিনা ফ্যান ক্লাব একটি গ্রুপ চালায়, বাংলার ডাক, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। মাঝে মধ্যে সুযোগ মতো যাদুমিয়া, ভাসানী, সিআখানের ইতিবৃত্ত তুলে ধরে। সেফাত উল্লাহ্‌ সাকিলের সকল অর্থের যোগান দেয়। আর আমাদের মধ্যে ঘাপ্টি খেয়ে বসে থাকা অস্ত্রেলিয়ার নাগরিক মিল্টন হাসনাত worldwide liaison and coordinator হিসেবে কাজ করছেন। দেশে আরো অনেক নূতন IT expert educated young ছেলে মেয়েদের সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এই মেয়েদের সংগ্রহের কাজটি সাকিলের প্রিয়াতমা স্ত্রী রুপা করে বেড়াচ্ছেন।

একটি সদ্য স্বাধীন্তাপ্রাপ্ত দেশের প্রধান হিসেবে জাতিরজনকের কাছে আমাদের কতোখানি চাওয়া পাওয়া ছিলো? কি চেয়েছিলাম? আর কি পেয়েছি? তিনি কি জাতিকে স্বাধীনতা ও বুকের তাজা রক্ত ছাড়া অন্য কিছু দেবার সময় পেয়েছিলেন? দেশ গড়ার কাজে জাতিরজনককে এই সি আ খান, গো আযম, জিয়া, নিজামীরা কোন সুযোগ দেয়নি। যে গাছ জাতির জনক রোপণ করেছিলেন, সে গাছের ফলতো অনেক দূরের কথা, ফুল ফুটবার আগেই তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছর প্রশাসনিক জীবনটাকে ব্যর্থতার কালিমা লেপন করে রাষ্ট্রীয় সমৃদ্ধির পথে বাধার প্রাচীর গড়ে তুলেছিল এই রব জলিল'গং রা। তাদের সাথে ছিলো পাকিস্তান চীন লিবিয়া, সৌদি আরাবিয়া এবং খোদ বড় মিয়া সি আই এ। স্পর্শকাতর বিষয়গুলী নতুন প্রজন্মকে সহজভাবে বুঝানোর একটি নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে, শে দায়িত্বটি কে নেবে? । এরাই ৭৩-৭৪ এবং ৭৫ এর আগষ্ট পর্যন্ত জাসদ গঠন করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ৭১ সালে জমা না দেয়া বিপুল পরিমাণের অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে মাঠে ময়দানে, গ্রামে গঞ্জে স্বশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলে দ্বিতীয় বিপ্লবের নামে। ওদের মূখে ছিলো প্রতি বিপ্লবের ডাক। ওরা বলতো দেশ স্বাধীন হয়নি তাই প্রতি বিপ্লবের প্রয়োজন। এভাবে ওরা হত্যা করে দেশের হাজার হাজার আওয়ামী নেতাকর্মী চেয়ারম্যান মেম্বার ভক্ত অনুসারীদের। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় নিজের জীবনের সমস্ত আনন্দ ভোগ বিলাস, উল্লাস উচ্ছাস আবেগ অনুভূতি হাসি কান্না দুঃখ বেদনা সমভাবে ৯ কোটি মানুষের মাঝে বন্টনের চেষ্টা করেছিলেন। আর এই বুইড়া ছাগল প্রতিবিপ্লবের নামে জাসদ গঠণ করে বঙ্গবন্ধুকে পরাজিত করার জন্য।মেজর জলিল, মেজর জিয়াউদ্দীন এবং কর্নেল তাহেরও এর সাথে জড়িত ছিলো। এ কথা আমি মুক্তির বানোয়াট বাঁ ভিত্তিহীন গদ্য রচণা নয়, এই হচ্ছে ইতিহাস, যদি ভাই কেউ রাগ করেন, সেটা আপনার ব্যাপার কিন্তু ঘটনা বোধ করি আপনারও জানা আছে।আপনাদের সি আ খান দাদাভাই কেনো বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী পরিষদের সদস্য হতে পারেন নি? কারো কাছে কোনো সদুত্তর থাকলে জানাবেন? জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কিন্ত মাওলানা ভাসানীকে বাপের মতো শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু তারপরেও এতো ব্যবধান কেনো ছিলো জানেন? কেনো বঙ্গবন্ধুর অকাল মৃত্যুতে মাওলানা সাহেব খুশি হয়েছিলেন।  জাসদ নেতা মতিন সাহেব কে জিজ্ঞেস করবেন জানতে পারবেন। ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া একটি সদ্য স্বাধীন সার্বভৌম দেশে প্রতি বিপ্লবের নামে সশস্ত্র বিপ্লবের কি প্রয়োজন ছিলো বলেন? কার বিরুদ্ধে প্রতি বিপ্লব? যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ গড়ার কাজে সহযোগিতার বদলে প্রতি বিপ্লবের নামে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি করা দেশের মানুষের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করা তথা বঙ্গবন্ধুর সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালণায় ব্যর্থ করে দেয়া কোন ধরনের দেশাত্ববোধ আপনার কাছে কোনো ব্যাখ্যা আছে? এবং এর সব কিছুর মূলে দাদাভাই আ স ম রব মেজর জলিল শাহজাহান সিরাজ দায়ী। যদি ভুল বলে থাকি ক্ষমা করবেন হয়তো বুদ্ধি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে বলেছি । একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সব আমার চোখে দেখা সেই ৭১ এর ভারত থেকে শুরু করে ২০০১ পর্যন্ত।মহান ব্যক্তিত্ত্ব অতীশ দিপংকর আর কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ আমাদের কতটুকু দিয়েছেন, তার হিসেব আমার এই অল্প জ্ঞানে দেবার চেষ্টা বৃথা এ কথাটাই ক্লাস ৮ এ একটি বাংলা রচনায় লিখেছিলাম এবং আমি সে রচনায় যে মারক্স পেয়েছিলাম, তা' বলার মতো নয়, কিন্তু তখন বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গে যদি হতো তাহলে বোধ করি আমার চেয়ে কম সংখ্যক মার্ক্স কেউ পেতো না। কারন এই মহা সমুদ্রকে নিয়ে লেখার যোগ্যতাইতো আমার নেই। ভালোবাসি, ভালোবাসি ,

হে পিতা তব চরন ধরিতে দিয়েছিলে মোরে তাইতা আমি ধন্য।

আমার যাহা কিছু সব হোক তোমারি জন্য।

অতীশ দীপংকর আর কবি গুরুর সমস্ত সুনাম আর অবস্থানকে ছাড়িয়ে যে বাঙ্গালী সমগ্র বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিলেন সেইতো বঙ্গবন্ধু।

BANGABANDHU SHEIKH MUJIBUR RAHMAN DEDICATED 

his life to establishing a democratic, peaceful and exploitation-free society called "Sonar Bangla" - Golden Bengal. He sacrificed his life to liberate the Bangalee nation, which had been groaning under the colonial and imperialist yoke for nearly 1,000 years. He is the founding father of the Bangalee nation, generator of Bangalee nationalism and creator of the sovereign state of Bangladesh.

My father spent nearly half his life behind bars and yet with extraordinary courage and conviction he withstood numerous trials and tribulations during the long period of his political struggle. During his imprisonment, he stood face to face with death on at least two occasions, but never for a moment did he waver.

As a daughter of Sheikh Mujibur Rahman, I heard many tales about him from my grandfather and grandmother. He was born on Mar. 17, 1920 in Tungipara, in what was then the British Raj. During the naming ceremony my great-grandfather predicted that Sheikh Mujibur Rahman would be a world-famous name.

My father grew up rural - amid rivers, trees, birdsong. He flourished in the free atmosphere inspired by his grandparents. He swam in the river, played in the fields, bathed in the rains, caught fish and watched out for birds' nests. He was lanky, yet played football. He liked to eat plain rice, fish, vegetables, milk, bananas and sweets. His care and concern for classmates, friends and others was well-known. He gave away his tiffin to the hungry, clothes to the naked, books to the needy and other personal belongings to the poor. One day, my grandfather told me, he gave his clothes to a poor boy and came home in his shawl.

At the age of 7, he began his schooling, though an eye ailment forced a four-year break from his studies. He married at the age of 11 when my mother was 3. He demonstrated leadership from the beginning. Once in 1939, he led classmates to demand repair of the school's roof - just when the premier of then undivided Bengal happened to be in town. Despite a deep involvement in politics, in 1946 he obtained a BA.

Bangabandhu was blessed from boyhood with leadership, indomitable courage and great political acumen. He played an active role in controlling communal riots during the India-Pakistan partition. He risked his life for the cause of truth and justice. He rose in protest in 1948 against the declaration of Urdu as the state language of Pakistan and was arrested the following year. He pioneered the movement to establish Bangla as the state language. In 1966, he launched a six-point program for the emancipation of Bangalees. In 1969, my father was acclaimed Bangabandhu, Friend of Bengal. His greatest strength (and weakness) was his "love for the people." He is an essential part of the emotional existence of all Bangalees.

The appearance of Bangladesh on the world map in 1971 was the culmination of a long-suppressed national urge. On Mar. 7, 1971, my father addressed a mammoth public meeting in Dhaka and declared: "The struggle now is the struggle for our emancipation, the struggle now is the struggle for Independence." He sent a wireless message, moments after a crackdown by the Pakistani army, declaring the Independence of Bangladesh in the early hours of Mar. 26. The world knows he courted arrest - and yet Bangabandhu emerged as the unquestioned leader of a newborn country.

Once in power, my father pursued a non-aligned, independent foreign policy based on peaceful coexistence. Its basic tenet: "Friendship to all, malice to none." He advocated world peace and declared his support for all freedom struggles. He supported the concept of a "Zone of Peace" in the Indian Ocean. In 1974, he was awarded the Julio Curie Prize for his devotion to the cause of peace.

But at a time when Bangladesh was emerging as an advocate for oppressed nations, his foes assassinated him on Aug. 15, 1975. My mother and three brothers were also killed. Even my younger brother Sheikh Russel, who was then nine, was not spared. The only survivors were my younger sister Sheikh Rehana and myself; we were on a trip to Germany.

Consequently, the political ideals for which Bangladesh sacrificed three million of her finest sons and daughters were trampled, and Bangladesh became a puppet in the hands of imperialism and autocracy. By assassinating Sheikh Mujibur Rahman, the conspirators wanted to stop the country's march to freedom, democracy, peace and development. The process of law and justice were not permitted to take their course; human rights were violated. It is, therefore, the solemn responsibility of freedom- and peace-loving people to help ensure the trial of the plotters and killers of this great leader, my father.

Sheikh Hasina, daughter of the late Sheikh Mujibur Rahman, is the prime minister of Bangladesh.