মুক্তিযোদ্ধাদের দুরাবস্থার সংবাদ

23/05/2012 22:04

 

সাংবাৎসরিক স্মৃতিঅর্ঘ্য প্রদানের বাড়াবাড়ি থাকে, মার্চের অগ্নিঝড়া মার্চ, ডিসেম্বরের বিজয়ের মাসে এর প্রকোপ বৃদ্ধি পায় কিন্তু প্রায় প্রতি মাসেই মুক্তিযোদ্ধাদের দুরাবস্থার সংবাদ প্রকাশিত হয়। কয়েক দিন আগে একজন মুক্তিযোদ্ধার অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে অনেকেই উদ্যোগী হয়ে তাকে সাহায্য করতে চেষ্টা করলেন, পরবর্তীতে সে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকার করলেন তার তেমন প্রাণঘাতী রোগ নেই, বরং অভাবে বাধ্য হয়ে তাকে এমন প্রতারণা করতে হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে এক ধরণের রোমন্টিক ইমোশন আছে আমাদের, এক দল মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করছেন, তাদের কেউ কেউ আহত হচ্ছেন, প্রতিনিয়তই মৃত্যুর সম্ভবনা মাথায় রেখে তারা লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছেন- তাদের এ আত্মনিবেদন আমাদের জাতীয় জীবনের উজ্জ্বলতম একটি অধ্যায়- তাদের কাছে আমরা অনেক কিছুই প্রত্যাশা করি, তারা মানুষ হিসেবে আমজনতার মতো হবেন না এমনটা চাই- সাধারণ মানুষ অন্যায় অপরাধ করবেন, ছোটোখাটো ছ্যাচরামি করবে- কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা তা করবেন না- তারা সব সময়ই ন্যায়ের যোদ্ধা হিসেবে আবির্ভুত হবেন- এই অহেতুক আব্দার যে পূরণ সরা সম্ভব না এটা যারা আশা করে বসে থাকেন তারাও বুঝেন না, আর যাদের কাছে প্রত্যাশাটুকু তারা ক্ষেত্রবিশেষে এমনই করা উচিত মত প্রকাশ করলেও বাস্তবে সে প্রত্যাশা অধিকাংশ সময়েই তারা পুরণ করতে ব্যর্থ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের অতিমানবিকতা আরোপের এই প্রয়াসে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনযাপন এবং তাদের অতিমানব কল্পনা করা তরুণদের জীবনযাপনে বিভিন্ন রকম জটিলতা তৈরি হয়। তাদের আশা ও আশাভঙ্গের হতাশা অনেক সময়ই বিশ্রী ধরণের প্রতিক্রিয়ায় পরিণত হয়। 

একটা সময় যুদ্ধযাত্রা বেশ লাভজনক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ছিলো, ডাকাতি, অবরোধ, দখলের মতো কাজগুলো যারা দক্ষ যোদ্ধা তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বয়ে আনতো। যুদ্ধে দক্ষ সেনাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিতো ব্যবসায়ীগণ। মধ্যযুগের মতো ততটা লাভজনক না হলেও আধুনিক যুগেও প্রচুর যুদ্ধ হয়েছে, সে সময় পর্যন্ত যুদ্ধের অর্থনৈতিক উপযোগিতা ছিলো, কিন্তু জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বদেশী আন্দোলন, সশস্ত্র আদর্শিক প্রতিরোধের মতো যুদ্ধগুলো অর্থনৈতিক বিবেচনায় লাভজনক নয়।

যুদ্ধযাত্রা অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক ছিলো কারণ অধিকৃত দেশ লুণ্ঠণের সুযোগ পাওয়া যেতো, সে সুযোগে অনেকেই বিপূল লুটপাট করে সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে পারতো- এমন কি শায়েস্তা খাঁ বাংলা থেকে সে সময়ের মূল্য মানে কয়েক কোটি মুদ্রা নিয়ে গিয়েছিলেন- স্বাধীনতা আন্দোলন যারা করছিলো তারা মূলত বিদেশী দখলদারদের হাত থেকে স্বদেশ মুক্তির মহানব্রত নিয়ে লড়াই করছিলেন, তাদের তেমন লুণ্ঠনের সুযোগ ছিলো না। আদর্শবাদীতা ছিলো এই লড়াইয়ের প্রধান অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারাও আদর্শিক কারণে কিংবা সময়ের প্রয়োজনে যুদ্ধ করেছেন, তারা স্বদেশ মুক্তির লড়াই করছিলেন, এই যুদ্ধে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠবার কোনো সম্ভবনা তাদের ছিলো না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাসদস্যদের জন্য লাভজনক ছিলো, তারা বিস্তর লুটপাট করেছে, পোস্ট অফিসের সহায়তায় মাসে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত টাকা পাকিস্তানে পাঠিয়েছে, তাদের সহযোগিতা করেছে একদল মানুষ তারাও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মদতে এবং ব্যক্তিগত লোভ লালসায় লুণ্ঠন করেছেন, অর্থনৈতিক বুনিয়াদ শক্তিশালী করেছেন। 

বাংলাদেশে শিক্ষিতের পরিমাণ ৭১ পূর্ববর্তী সময়ে ততটা বেশী ছিলো না, ২৫% এর বেশী উপরে উঠতেও পারে নি বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া সত্ত্বেও। আমাদের সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার পরিমাণ লক্ষ হলে এ হিসেবে তাদের ৭৫ হাজারই অশিক্ষিত হওয়ার সম্ভবনা প্রবল। গণবাহিনীতে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করা মানুষদের অর্ধেকের বেশীই অশিক্ষিত ছিলো এবং তারা যুদ্ধপরবর্তী সময়ে নিজের নিজের পেশায় ফেরত গিয়েছিলো। 

বাংলাদেশে কিংবা পূর্ব পাকিস্তানে অশিক্ষিত জনগোষ্ঠির মূল পেশা ছিলো কায়িক শ্রম- শহরে এসে রিকশা চালানো, গ্রামে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করা, গঞ্জে কিংবা মফ:স্বলে বিভিন্ন শ্রমঘন কাজ করতো তারা- অপরাপর শিক্ষিত যুবাদের লক্ষ্য ছিলো কেরাণীগিরি- নিদেন পক্ষে পূর্ব পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস, নইলে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে ছোটোবড় যেকোনো পদের গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম। তাদের স্বপ্ন-কল্পনা এই সচিবালয়ের বিভিন্ন পদের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করতো। 

৭৫ টাকা মাসমাইনের রাজাকার বাদ দিলে( এরা কেউই তেমন স্বাধীনতাবিরোধি ছিলো না, বরং যুদ্ধের অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় এটাই একমাত্র লাভজনক পেশা হিসেবে তাদের সামনে আবির্ভুত হয়েছিলো।) যারা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আগ্রাসনকে সমর্থন জানিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন তারা সমাজের উঁচু তলার মানুষ, যাদের ভেতরে এক ধরণের সাম্প্রদায়িকতা ছিলো, পাকিস্তান এদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণ হয়েছলো, তারা এই যুদ্ধকালীন গোলোযোগে তাদের অর্থনৈতিক শক্তি আরও বাড়িয়েছেন পরিত্যাক্ত সম্পত্তি জবরদখল করে কিংবা লুটপাট করে, এই শ্রেনীর মানুষদের পরিবারে শিক্ষার চল ছিলো, এদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ছিলো। 

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কিছু মুক্তিযোদ্ধা এবং কিছু অতীত অপরাধী এমনতর লুটতরাজ করেছেন পশ্চিম পাকিস্তানী ও বিহারী জনগোষ্ঠীর বসতভিটা- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে- এরাও যুদ্ধের পরবর্তী লুটতরাজে অংশ গ্রহন করে অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধশালী হয়েছেন- এর বাইরে সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেয়েছেন কেউ কেউ, সুতরাং মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ বেশ চমৎকার ভাবে সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তেমন পরিবর্তিত হয় নি। যে অশিক্ষিত মানুষটা আগে কৃষীসহকারী হিসেবে শ্রম দিতেন, যুদ্ধের ৯ মাসে পরে তাকে কোনোভাবেই কোনো প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগদেওয়া সম্ভব নয়। কায়িক শ্রম প্রদানকারী অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধাই সব মিলিয়ে তেমন সম্পদশালী হতে পারেন নি। এদেরই বিভিন্ন অভাব অনুযোগ সংবাদপত্রে আসে, আমাদের ইমোশন্যাল ডায়ারিয়া শুরু হয়। 

রাষ্ট্র যেসব যোগ্যতা নির্ধারন করেছিলো এবং যে সব যোগ্যতার ভিত্তিতে একজন মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় সে সব পুরণ করতে পারে নি ৭৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, তাদের অযোগ্যতা অশিক্ষা তাদের দরিদ্র রেখেছে, এটা এক ধরণের সমাজ বাস্তবতা- 

আমাদের যুদ্ধপরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তেমন পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয় নি, যুদ্ধের বীভৎসতার ভয়াবহ স্মৃতি কিংবা যুদ্ধকালীন অবসাদ কাটিয়ে উঠে একজন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবার মানসিক সহযোগিতাও তারা পান নি, সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং এর পরিমাণ ছিলো নগন্য। 
বিভিন্ন কারণে( ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব কিংবা ব্যবসায়িক ও আদর্শিক লড়াইয়ের ভিন্নতায়) বিভিন্ন ব্যক্তির সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাস্টের মানে জবরদখল করা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাস্ট এসব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারে নি, তারা বরং এসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ব অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ এই অযোগ্য ব্যবস্থাপনা- রাষ্ট্র যোগ্য অযোগ্য অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধাকেি রাষ্ট্রের চাকুরিতে নিয়োগ দিয়েছে, নইলে তাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করেছে- এইসব মুক্তিযোদ্ধারাই আবার অপরাপর মুক্তিযোদ্ধার অধিকার হরণ করেছে।

এখন যখন কেউ বলে রাজাকারদের পুনর্বাসিত করা হয়েছে, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছে তারা মন্ত্রী- রাষ্ট্রপতি হচ্ছে- এর সাথে ৭৫ পূর্ববর্তী এবং ৭৫ পরবর্তী রাষ্ট্র শাসকদের খুব বেশী দায় নেই। অর্থনৈতিক ক্ষমতায় ব্যক্তিগত যোগ্যতায় এরা মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে এগিয়ে ছিলো, ফলে দীর্ঘমেয়াদে তারা জিতে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অভাব অনুযোগে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই, শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা বলেই তিনি সহযোগিতা পেতে পারেন এমনটাও নোয়। রাষ্ট্র অবহেলা করেছে, এডের পুনর্বাসনের জন্য বেসরকারী পর্যায়ে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো সেসব প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক কতৃত্ব আরপ করতে গিয়ে ৭৫ পূর্ববর্তী সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছেন, একই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের সম্ভবনাও হত্যা করেছেন। 
একি অসম প্রতিযোগিতায় তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছিলো যে লড়াইয়ে তাদের জেতার কোনো সম্ভবনাই ছিলো না। 

এরা পরাজিত হয়েছেন না কি তাদের পরাজিত হতে বাধ্য করা হয়েছে এই বিতর্কে আমার অবস্থান তাদের পরাজিত হতে বাধ্য করা হয়েছে। এদের আত্মসম্মানবোধের ধার অভারের ঘষায় প্রতিদিন ক্ষয় হয়েছে, অবশেষে পরাজিত মানুষটা বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন, তারপর তার আর কোনো আত্মগ্লানি ছিলো না, হয়তো কখনও কখনও তার আক্ষেপ প্রকাশিত হয়েছে কি জন্যে মুক্তিযুদ্ধ করলাম সেই যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো তারাই তো ক্ষমতাবান।ক্ষমতার ভারসাম্যে কোনো পরিবর্তন আসে নি, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান মানুষেরাই সব সময় নির্ণায়কের ভুমিকায় ছিলো, তারা ৭১ এ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছে এমন কি মুক্তিযোদ্ধাদেরও সহযোগিতা করেছে, আর এরপর থেকে তারাই ক্ষমতা বলয়ে অটুট থেকেছে। ক্ষমতা কাঠামো পরিবর্তিত হয় নি। 

এ বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট মেনে নিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে, এত বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও কেনো প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে সচ্ছলতা আসলো না, এখনও কেনো মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান সন্ততি নাতিপুতিদের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী হিসেবেই দুয়ারে দুয়ারে ধর্ণা দিতে হয়? আমাদের মেনে নিতে হবে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন, তাদের ভেতরে ৭৫% অশিক্ষিত মানুষের আসলে অন্য কোনো কিছু করার যোগ্যতা ছিলো না, আর তাদের যোগ্যতা তৈরির তেমন কোনো সরকারী উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয় নি। 

রাজনৈতিক মতবাদ স্থানীয় রাজনীতিতে নিজের দাপট, বিদেশী সহযোগিতা লুটপাট এবং অপরাপর লুণ্ঠনে ব্যস্ত রাজনীতিবিদগণ এসব কর্মকান্ডে যতটা আত্মনিবেদিত ছিলেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনুধাবনে কিংবা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বিস্তৃতি ঘটাতে ততটা আন্তরিক ছিলেন না। ধ্বংস হয়ে যাওয়া অবকাঠামো, পুড়ে যাওয়া ফসলের মাঠ, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পরা সহ অসংখ্য কারণ হয়তো ছিলো কিন্তু সেসব মেনে নিয়ে পুনর্গঠনের কাজটাতে ততটা মনোযোগী কি ছিলেন আদৌ সে সময়ের নেতৃবৃন্দ? 

হঠাৎ করেই কারো যোগ্যতা তৈরি হয় না, দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ভিত্তিটাও হঠাৎ করে মজবুত হয়ে যায় না, বাংলাদেশে তার ঘোষিত ক্ষতির তিনগুণ অর্থ পেয়েছিলো পুনর্গঠনে- কিন্তু তার কতটুকু আমাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ মজবুত করতে ব্যবহৃত হয়েছে, তার কতটুকু নাগরিকের যোগ্যতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে ব্যয় করা হয়েছে, হয়তো কতিপয় অযোগ্য অল্প শিক্ষিত মানুষ সচিবালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ পেয়েছেন, কিন্তু সার্বিক বিচারে সেটা কি আমাদের প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পেরেছিলো?

যে মানুষটা রিকশা চালাতো ৭১ এর মার্চে ৭২ এর মার্চেও সে রিকশাই চালাবে এটাই তো স্বাভাবিক, তাকে হয়তো অপর কোনো কাজে দক্ষ করে তোলা যেতো, শিল্প কারখানায় তাকে নিযুক্ত করা কিংবা তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব তো রাষ্ট্রের ছিলো, বেসরকারী উদ্যোগগুলো ভন্ডুল করার বাইরে তারা কতটুকু সাফল্যের সাথে সে কাজ করতে পেরেছেন? আমি আশা করি না দেশ স্বাধীন করতে অবদান রেখেছিলো বলে রিকশা ওয়ালা হঠাৎ করেই প্লেনার পাইলট হয়ে যাবে স্বাধীন দেশে- যার যতটুকু যোগ্যতা ছিলো সেটুকু নিয়েই তারা বাংলাদেশে বসবাস করেছে, তাদের কেউ কেউ চালিয়াত হয়েছে, কেউ কেউ দুর্নীতিগ্রস্ত কিন্তু সেটা সমাজের অংশ হিসেবে তাদেরও আক্রান্ত করেছে। সুতরাং দু:স্থ মুক্তিযোদ্ধার নাম শুনেই সমবেদনায় আপ্লুত হয়ে ইমোশন্যাল ডায়ারিয়ায় আঁতকে উঠবার প্রয়োজন নেই, বরং ক্ষুব্ধ হওয়াটা শোভন।